ছোটবেলায় বেলায় মাঝি বলতে একজনকেই চিনতাম। নারাণ মাঝি। ওঁর বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার হাঁসখালি থানার পাখিওড়া গ্রামে। আসলে পাখিওড়া আর আমাদের গ্রাম পাশাপাশি। সেকালে কাঁটাতার ছিল না। চোরাচালান ছিল অবাধ। নারাণ মাঝিই চোরাচালানিদের ‘সবে ধন নীলমনি’। তাছাড়া পাশাপাশি গ্রাম, গাঁয়ের বেশিরভাগ মানুষই রিফিউজি, তাই আত্মীয়-স্বজনের বিরাট একটা অংশ রয়ে গেছে ওপারে। ইছামতী সেকালেও খরস্র্রোতা ছিল না। তবে এখনকার চেয়ে অবস্থটা বেশ ভালো ছিল। তাই নায়রী পারাপারেও নারাণ মাঝির ডাক পড়ত।
দূরে একপাল ছৈঅলা নৌকা দেখা যায়। এই মাঝিদের কাছে অনুরোধ করলাম যেন তারা আমাদের ছৈঅলা নৌকার কাছে পৌঁছে দেয়। আকাশে মেঘের ঘনঘটা। ছৈঅলা নৌকায় ঘোরাই নিরাপদ। কিন্তু এই চাচারাও চটে মটে জবাব দিলেন, ওগুলো নাকি বেদে নৌকার বহর। ওরা আমাদের নেবে না।
বেদে নৌকা! অবাক হলাম। বেদেদের দেখেছি বহুবার। হাটে-বাজারে সাপ খেলা দেখিয়ে বেড়ায় কিন্তু বেদে নৌকার এমন বহর দেখিনি কখনও। ঢাকায়ও বেদেদের চোখে পড়ে আজও, কিন্তু এরা এখনও নৌকায় বাস করে এ ধারণা ছিল না। এখন ওই বেদেপল্লীই আড়িয়ল বিলের মূল আকর্ষণে পরিণত হল
ভালো থেকো ফুল, মিষ্টি বকুল, ভালো থেকো।
ভালো থেকো ধান, ভাটিয়ালি গান, ভালো থেকো।
ভালো থেকো মেঘ, মিটিমিটি তারা
ভালো থেকো পাখি, সবুজ পাতারা
ভালো থেকো চর, ছোটো কুঁড়েঘর, ভালো থেকো।
ভালো থেকো চিল, আকাশের নীল, ভালো থেকো।
ভালো থেকো পাতা, নিশির শিশির
ভালো থেকো জল, নদীটির তীর
ভালো থেকো গাছ, পুকুরের মাছ, ভালো থেকো।
ভালো থেকো কাক, ডাহুকের ডাক, ভালো থেকো।
ভালো থেকো মাঠ, রাখালের বাঁশি