অবশেষে কর্ণ আর অর্জুন মুখামুখি...
সতেরা নম্বর দিন শেষ বিকালে বিনা ঘোষণাতেই দুইপক্ষের সকল অস্ত্র থাইমা যায়। কেউ কাউরে মারে না; সকলে দর্শকই হইয়া আইসা খাড়ায় দুই যোদ্ধার লড়াই দেখতে...
বড়ো বেঘোরে অসম্মানের মরা মরলেন দ্রোণ। নিজের শিষ্য তার চুলের মুঠায় ধইরা তলোয়ার দিয়া মাথাটা আলগা কইরা ফিককা ফালাইল কুরুক্ষেত্রের মাঠে। শত শত লাশের ভিড়ে শেষ পর্যন্ত তার নিজের পোলায়ও শেষকৃত্যের লাইগা খুইজা বাইর করতে পারল না দ্রোণের দেহখান...
যে কুমারী কন্যারে সমাজের আড়ালে পরের বাড়িতে সন্তানের জন্ম দিতে হয় চিক্কুর চাইপা রাখার অভ্যাস তার এমনিতেই থাকে। প্রসব চিৎকার চাইপা রাখার অভ্যাসে কুন্তী আইজ চাইপা রাখে গর্ভপাতের গোঙানি। ...তার গর্ভের প্রথম পোলায় আজ নামব গর্ভের শেষ সন্তানের সামনে। মৃত্যুপণে। ...মায়ের পেটের ভাই জাইনাও কর্ণ অস্ত্র চালাইব অর্জুনের দিকে আর শত্রু জাইনা অর্জুন মারব কর্ণরে....
কৃষ্ণের পাঞ্চজন্য শঙ্খের লগে অর্জুনের দেবদত্ত শঙ্খ আর তার উত্তরে ভীষ্মের শঙ্খের নাদে কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধ শুরু হইয়া যায়। মাঠের পশ্চিমে কুরু আর পূর্বে খাড়ায়া আছে পাণ্ডব-পাঞ্চাল। দুই রঙের পোশাকে দুই পক্ষ দাঁড়াইছে যাতে পরিষ্কার চিনা যায় পাট্টি আর বিরোধীদল। হাতির সামনে হাতি; ঘোড়ার সামনে ঘোড়া; পায়দল খাড়া পায়দলের সম্মুখে; গদারু গদা বাগাইয়া আছে গদারুর দিকে; তিরন্দাজ-তিরন্দাজ মুখোমুখি আর বর্শাতি-ভল্লব খাড়া
কুন্তীবুড়িটা বহুত হতভাগি হলেও ভাবতে পারে নাই যে নিজের সবচে বড়ো দুর্ভাগ্যটা নিজেরই গর্ভে জন্ম দিছে সে...
কুরুসভায় কোনো সিদ্ধান্ত হয় নাই। যুধিষ্ঠিরের লগে আলোচনা কইরা সিদ্ধান্ত জানাইব কইয়া সিদ্ধান্তের লাইগা কৃষ্ণ এখন বইসা আছে কুন্তীর সামনে। কারণ কর্ণের বিপক্ষে পাণ্ডবদের সে যুদ্ধে জড়াবে কি না সেই সিদ্ধান্ত দিতে পারে একমাত্র কুন্তী....
তেরোটা বচ্ছর পর ভাতিজার কাছে ভাইঙা পড়ে কুন্তী- কৃষ্ণরে; পুতুল খেলার বয়সে নিজের বাপ মোরে দান কইরা দিছিল ভিনগ্রামে। বড়ো হইয়া বিবাহ করলাম এক সম্রাটরে কিন্তু রাজনীতির খপ্পরে পইড়া জঙ্গলে সংসার করলাম ষোলোটা বছর। বিধবা হইবার পর ভাসুরের চক্রান্তে আদাড়ে-বাদাড়ে ঘুইরা নাবালক পাঁচটা পোলারে বড়ো কইরা বানাইলাম রাজা। তারপর নাতি নাতনি লইয়া খেলার বয়সে পোলাদের অপকর্মে আরো তেরোটা বচ্ছর আমার বাচতে হইল দেবরের ভাতে...।
উত্তরার লাগে ছোটো ভাই অভিমন্যুর বিবাহে দ্রৌপদীর পাঁচ পোলা প্রতিবিন্ধ্য- সুতসোম- শ্রুতকর্মা- শতানীক আর শ্রুতসেনও আইসা হাজির হইছে বিরাটের দেশে। কিন্তু শৈশব থেকে তেরো বচ্ছর দূরে বড়ো হইয়া জোয়ান পোলারা যেমন না পারে মায়েরে মায়ের মতো ভাবতে তেমনি দ্রৌপদীও পারে না ফিরাইয়া আনতে তেরো বচ্ছর আগে হারাইয়া ফেলা মাতৃত্বের রূপ। তাই অভিমন্যুর বিবাহেও দ্রৌপদী নেহাত পাণ্ডববধূরূপে রূপের ঝলকানি দেওয়া সাজগোজ করে...
ভাগ্যের ভাটিযাত্রায় সম্রাজ্ঞী দ্রৌপদী এখন স্বৈরিন্ধী ছদ্মনামে মৎস্যদেশের রাণী সুদেষ্ণার দাসী। বহু হিসাব নিকাশ কইরাই তেরো নম্বর বচ্ছরে অজ্ঞাতবাস করতে পাণ্ডবরা বাইছা নিছে মৎস্যদেশের রাজা বিরাটের প্রসাদ। পাশাখেলার শর্ত হিসাবে দুর্যোধন যদি এখন পাণ্ডবদের খুইজা বাইর করতে পারে তয় আরো বারো বচ্ছরের বনবাস আর এক বচ্ছর অজ্ঞাতবাস এবং সেই অজ্ঞাতবাসেরও শর্ত একই সেইম...
নারদের বুদ্ধিতে একেক ভাইয়ের ঘরে দ্রৌপদীর বার্ষিক পালা ঠিক হইবার পর অর্জুন যাইচা অপরাধ করে পাঁচ বচ্ছরের নির্বাসন-শাস্তি নিয়া পথে পথে তিনটা বিবাহ কইরা শেষে ফিরছিল দেশে। আর বনবাসের শুরুতেই আবার সে অস্ত্র সংগ্রহের নামে আরো পাঁচ বচ্ছরের লাইগা চইলা যায় দ্রৌপদী থাইকা দূরে। তাই এইবার অর্জুন ফিরা আসলে সমস্ত পালাটালা ভাইঙ্গা যুধিষ্ঠির দ্রৌপদীরে বরাদ্দ দেয় অর্জুনের ঘরে। কিন্তু এই অর্জুন তো আর সেই অর্জুন নাই।
আগস্ত মুনির আশ্রম আর ভৃগুতীর্থ দেইখা বধূসরা-নন্দা-অপরনন্দা নদী পার হইয়া ঋষভকূট পর্বত ডিঙাইয়া কৌশিক নদীর তীরে বিশ্বামিত্রের আশ্রম পরিদর্শন কইরা যুধিষ্ঠিরের তীর্থযাত্রীদল আইসা উপস্থিত হয় মহেন্দ্র পর্বতে মহর্ষি লড়াকু পরশুরামের ডেরায়। এই ভ্রমণের গাইড ভবঘুরে মুনি লোমশ আর মালপত্র বহনের কামে আছে হিড়িম্বার পোলা ঘটোৎকচ। দলের বাকিরা তীর্থযাত্রী- যুধিষ্ঠির ভীম নকুল সহদেব দ্রৌপদী পুরোহিত ধৌম্য আর বহু অনুচর ব্