মুখবন্ধ
বহুকাল আগের কথা। সচলায়তনে তখন ভ্রমনকাহিনী লিখার হিড়িক। কেউ পাশের বাড়ি বেড়াতে গেলেও পথে কি কি দেখল তা নিয়ে লালা ঝরানো লেখা লিখে ফেলত। ওইসব লেখা দেখে আমারও লালা ঝরতে লাগল। আমিও লিখে ফেললাম ইউরোট্রিপ। সিরিজ হিসেবে শুরু করলাম। খানতিনেক পর্ব দেওয়ার পর মনে হল অনেক লেখছি। আর লেখতাম না। ব্যস আর যায় কই। কিবোর্ড গুটায়ে ফেললাম। ইদানিং দেখতেছি আবার বিজ্ঞান লেখকরা হাফপ্যান্ট, ফুলপ্যান্ট, লুংগি, আন্ডু যার পরনে যা আছে, তাতেই মালকোচা মাইরা বিজ্ঞানভিত্তিক লেখা শুরু করছে। আমার তো আবারও লুল পড়তে লাগল। এতদিন যাবত বিজ্ঞান পড়ি, বিজ্ঞানের পিছনে জীবন যৌবন সব দিলাম, একটা লেখা পয়দা করতে পারুম না, এইটা একটা কথা হইল। তাই আমিও ঝাপাইয়া পড়লাম। যাক, মুখবন্ধ অনেক হইছে, এইবার লাইনে আসি। শুরু করি টিক (Tick) নিয়া টক।
টিক কি?
আমরা আমাদের চারপাশে কুটি কুটি পোকামাকড় দেখি। একেক্টা একেক আকারের, আকৃতির, একেক রঙের। কোনটার ডানা আছে, কোনটার ডানা নাই, কোনটার শুঁড় আছে, কোনটার নাই। কোনটা কামড় দিলে জান জীবন যেরবার হয়ে যায়, কোনটা কামড় দিলে আবার কিছুই হয় না। এরা সবাই মোটামুটিভাবে ইনসেক্টা (Insecta) ক্লাশের মধ্যে পড়ে। এর মধ্যে আবার কিন্তু আছে। কিছু পোকামাকড় আছে, যেগুলি দেখতে পোকামাকড়ের মত, কিন্তু তারা ইনসেক্টার মধ্যে পড়ে না। যেমন ধরেন মাকড়শা। এরা দেখতে পোকার মত, কিন্তু এরা এরাকনিডা (Arachnida) ক্লাসের অন্তর্গত। এরা ঠিক পোকা (Insect ) না, কিন্তু পোকার বৈশিষ্ট্য এদের মধ্যে দেখা যায়। এদের মধ্যে বিখ্যাত হচ্ছে, মাকড়শা (Spider), কাকড়াবিছা (Scorpion), মাইটস (Mite) , এবং টিক (এর কোন বাংলা আছে কিনা আমি জানি না)। যদিও এরা ঠিক পোকা না, তারপরও এদের কোন কোনটাকে সমমাঞ্জনক পোকা উপাধি দেয়া হয়েছে (Honorary Doctorate –এর মত)। এটা করা হয়েছে বলার এবং লেখার সুবিধার জন্য। এই লেখাতে তাই আমরা এইসব পোকাটাইপ প্রানীগুলোকে পোকা বলব।
টিক দেখতে অতি ক্ষুদ্র একটি প্রানী। সাধারণ অবস্থায় পুর্নবয়স্কদের খালি চোখেই দেখা যায় (চিত্র-১)।
[img][/img]
চিত্র-১: একটি পুরুষ (A) এবং একটি স্ত্রী (B) টিক। পুরুষটিকগুলি বেশ হ্যাঞ্ছাম আছে, গায়ে ডোরাকাটা দাগ, আর স্ত্রীগুলি সাধারণত কালছে বাদামী রঙের হয়। পরে খাদ্যগ্রহনের সাথে সাথে এদের রঙের পরিবর্তন হয়। এটি একটি আইক্সোডিড টিক, নাম ডারমাসেন্টর অ্যান্ডারসোনাই (Dermacentor andersoni)
এরা সম্পুর্নভাবেই রক্তপায়ী প্রানী। রক্তছাড়া (তাও তাজা রক্ত) আর কিছুই খায় না। তবে এরা এক্টোপ্যারাসাইট (এরা শরীরের বাইরের দিকে, চামড়ায় কামড়ায়, মশার মত)। এখন প্রশ্ন হচ্ছে , এরা কোন কোন প্রানীর রক্ত খায়? উত্তর হইল, সব প্রানীরই রক্ত খায়। খালি নাম কন, দেখবেন এরা টিকের ভিক্টিম। এরা স্তন্যপায়ী প্রানী যেমন, মানুষ, গরু-ছাগল থেকে শুরু করে সরীসৃপ, পাখি, উভচর সবার রক্ত পান করে (চিত্র-২)।
[img][/img]
চিত্র-২: বিভিন্ন হোস্টের গায়ে টিক। কিছুই বাদ দেয় নাই।
এবং আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে এদেরকে পৃথিবীর সবমহাদেশেই পাওয়া যায়, হোকনা সে ধু ধু বালুকাময় মরুভুমি অথবা হাড্ডি কাঁপানো হি হি করা ঠান্ডার জগত মেরু অঞ্চল। সব জায়গাতেই তাদের হোস্ট (Host, যাদের রক্ত খেয়ে টিক’রা ছেলেপুলে নিয়ে বেঁচেবর্তে থাকে) আছে। একবার কোনমতে কোন এক্টার গায়ে উঠতে পারলেই হইল, ব্যস কাম সারা (হোস্টের গায়ে উঠার ক্ষেত্রে ও ব্যাপারেশন আছে, সময় থাকলে পরে বিস্তারিত আলুচোনা করা হবে)। টিককে তাদের শারিরীক বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। নরম টিক (Soft Ticks), এদেরকে বলা হয় আরগাসিড (Argasid) ১৮৩ টি প্রজাতি আছে এই ভাগে; শক্ত টিক (Hard Ticks), এদের বলা হয় আইক্সোডিড (Ixodid), ৬৮৩ টি প্রজাতি আছে এতে; এবং সবশেষে আছে নাটাল্লিলিডি (Nuttallillidae), মাত্র একটি প্রজাতি নিয়ে গঠিত (চিত্র-৩)। মজার ব্যাপার হল, এই প্রজাতির মাত্র ১৮ টা স্যাম্পল পাওয়া গেছে, যা দিয়ে ২৫ টিরও বেশি জার্নাল আর্টিকেল প্রকাশিত হয়েছে।
[img][/img]
চিত্র-৩: টিকের শ্রেনীবিভাগ
জীবনচক্র (Life cycle)
টিকের জীবনচক্র আর বাকি সব পোকামাকড়ের মতই। এদের জীবনচক্রে মোটামুটি তিন/চারটি ধাপ থাকে। প্রথমেই থাকে আন্ডা বা ডিম দশা (Egg phase)। উপযুক্ত পরিবেশ (তাপমাত্রা, আদ্রতা, উপযুক্ত স্থান) পেলে দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যেই নিষিক্ত ডিম (Fertilized egg) থেকে ছানাপোনা কিলবিল করে বের হতে থাকে। এই সময়ে এদেরকে বলা হয় লার্ভা (Larvae)। লার্ভাদশা (Larval Phase) চলতে পারে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত। তারপর তারা আবার হোস্টের গায়ে উঠে যায়, খানা খাদ্য (রক্ত) গ্রহন করে সপ্তাহখানেক ধরে। পেটপুজা সেরে তারা পরিনত হয় নিম্ফে (Nymphal Stage)। এই অবস্থাও চলতে পারে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত। এই সময়ে তারা আবার খোলস বদলায় (Moulting)। এই সময় পর্যন্ত খালি চোখে দেখলে বুঝা যায় না কোনটা মহিলা আর কোনটা পুরুষ। খোলস বদলানোর পর তারা পরিণত হয় পূর্ণবয়স্ক টিকে (Adult phase)। এই সময়ে এদের আলাদা করে বুঝা যায়। পূর্নবয়স্ক টিক বছরখানেক পর্যন্ত না খেয়ে থাকতে পারে। আমার ল্যাবে কয়েকটারে আমি দেড় বছর না খাওয়াইয়া রাখছিলাম। আমার ওস্তাদ নাকি একটারে তিন বছর না খাওয়াইয়া রাখিছিল। যাই হোক, পূর্নবয়স্ক অবস্থায় তারা হোস্টের গায়ে উঠে, খাদ্য গ্রহন করে, খাদ্য গ্রহণরত অবস্থায় এরা প্রজনন করে (Mating)। একটি পুরুষ টিক কয়েকবার প্রজনন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহন করতে পারে, যেখানে মহিলারা একবারই পারে। এদের খাদ্যগ্রহন প্রক্রিয়ায় প্রজননের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা আছে (লাইনে থাকেন, আসতেছে)। প্রজনন শেষ হলে তারা নেমে যায়, ডিম পারে এবং মা টিক সন্তানদের রেখে মারা যায়। এই জীবনচক্র আবার নির্ভর করে একটি টিক কয়টি হোস্ট ব্যবহার করবে তার উপর। কিছু টিক (বেশিরভাগ আরগাসিড) একটি মাত্র হোস্টেই তাদের সম্পূর্ণ জীবন অতিবাহিত করে। কিছু আছে দুইটি হোস্টে আবার কিছু (বেশিরভাগ আইক্সোডিড) তিনটি হোস্টের উপর তাদের জীবন অতিবাহিত করে। যারা তিনটি হোস্টের উপর খায়, তারা প্রতিটি দশাতেই হোস্ট ত্যাগ করে, আবার পরবর্তী দশায় নতুন হোস্ট খুঁজে বের করে।
টিকের খাদ্যগ্রহন (Feeding)
এখন আপনাকে একটু আপনার কল্পনার আশ্রয় নিতে হবে। ধরেন, আপনি তিন বছর না খেয়ে আছেন। তিন বছর পর আপনাকে খাবার দেয়া হল। অঢেল খাবার। যা খেতে চান। আপনি কতটুকু খেতে পারবেন? এক কেজি? দুই কেজি? তিন কেজি? বা আপনার যা ওজন তার সমান? পারবেন?
এইবার বলি একটি টিক কতটুকু খেতে পারে। আপনি যদি একটি পুর্ণবয়স্ক টিককে হোস্টের উপর ছেড়ে দেন, তাহলে সে তার অভুক্ত অবস্থার চেয়ে একশ গুন বা তার চেয়ে বেশি পরিমাণ রক্ত খেতে পারে। হ্যাঁ, আপনি ঠিকই দেখছেন...একশ গুণ বা তার বেশি। ব্যাপারটা অনেকটা এই রকম, আপনাকে খাবার দেয়া হল, ইচ্ছামত। আপনার ওজন ৫০ কেজি। খেতে খেতে আপনি আপনার ওজনের ১০০ গুণ খেয়ে ফেললেন। তখন আপনার ওজন হবে ৫০০০ কেজি। কল্পনা করতে পারেন? ৫০০০ কেজি ওজনের তারেক অণু, বা চরম উদাস, বা হিমু? টিকের এই বৈশিষ্টের জন্য তাকে বলা হয় খাবার গ্রহনে গিনেজ রেকর্ডধারী (চিত্র-৩)। এই পরিমাণ খাদ্য কিন্তু শুধুমাত্র মহিলা টিক গ্রহন করে, পুরুষ টিক খায় অতি সামান্য, তার ওজনের এক কি দেড়গুন।
[img][/img]
চিত্র-৩: একটি অভুক্ত (উপরেরটি) এবং একটি ভুক্ত (নিচেরটি) টিক। এই ছবিটি আমি এবং অ্যালেক্স (ওর কথা ইউরোট্রিপে বলেছি) তুলেছিলাম। ছবিটি পরে জার্নাল অব এক্সপেরিমেন্টাল বায়োলজি'র প্রচ্ছদ হয়। এই টিকটিও আইক্সোডিড, নাম [i]অ্যাম্বিওমা হেব্রেয়াম[/i] (Amblyomma hebraeum )
এই ১০০ গুণ খাদ্য সে কিন্তু আবার একবারে গ্রহণ করে না। এইটা সে করে তিনটা পর্বে। প্রথম পর্বকে বলা হয় “প্রস্ততি পর্ব” (Preparatory phase)। এই পর্বে সে হোস্টের গায়ে উঠে, তার খাবার জন্য উপযুক্ত জায়গা খুঁজে নেয়। তারপর তারা তাদের করাতের মত দাতঁ এবং মাড়ির সাহায্যে একটি গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। সেই ক্ষতে তারা ঢেলে দেয় তাদের লালা যাতে থাকে, এন্টিহিস্টামিন (চুল্কানিরোধক), এনেস্থেটিক (অবশকারি) সহ এক ধরণের সিমেন্ট যা তাকে হোস্টের গায়ে আটকে থাকতে সাহায্য করে। এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় নেয় ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা। এরপর শুরু হয় তাদের খাদ্যগ্রহন। প্রথমে তারা ধীরে ধীরে খেতে থাকে। এই সময়কে বলা হয় Slow feeding phase (বাংলায় বলা যায় “ধীর খাদ্যগ্রহন পর্ব”)। মোটামুটি ৬-১০ দিন তারা এইভাবে খেতে থাকে। এই সময়ে তারা তাদের অভুক্ত অবস্থার ১০ গুন পর্যন্ত ওজন লাভ করে। তারপর তারা হঠাত করেই অত্যন্ত দ্রুত রক্ত খেতে শুরু করে, যাকে বলা হয় Rapid feeding phase (বাংলায় বলা যায় “দ্রুত খাদ্যগ্রহন পর্ব”)। এই পর্বে তারা ২৪-৩৬ ঘন্টার মধ্যেই তারা বাকি ১০ গুন খাদ্য গ্রহন করে। তারপর তারা টসটসে পাকা আমের মত হোস্টের গা থেকে খসে পড়ে।
এখন আসেন প্রজননের সাথে খাদ্যগ্রহনের সম্পর্কের বিষয়ে।
সব টিক কিন্তু ধীর পর্ব থেকে দ্রুত পর্বে যেতে পারে না। এই পর্বে যেতে হলে তাদেরকে অবশ্যই প্রজননে অংশগ্রহন করতে হবে। প্রজননের সময় পুরুষ টিকের প্রজনন তন্ত্রের গোনাড (Gonad, বাংলা জানি না, কেউ জানলে পিলিজ জানাইয়েন) থেকে দুইটা প্রোটিন মহিলা টিকের প্রজনন তন্ত্রে যায়, যা তাকে সিগনাল দেয় বেশি খাবার জন্য। তখনি সে এক পর্ব থেকে আরেক পর্বে যায়।
আগেই বলেছিলাম, টিকের জীবনচক্রে তাদের খাদ্যগ্রহনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা আছে। একটি টিকের জীবনচক্র কোথায় থামবে তা নির্ভর করে তাদের খাদ্যগ্রহনের উপর। ধরা যাক, একটি টিক ধীর খাদ্যগ্রহন পর্বে আছে। এই অবস্থায় কোন কারণে সে হোস্টের গা থেকে পড়ে গেল। এই অবস্থায় সে আরেকটি হোস্ট খুজে বের করবে। তারপর সে তার খাদ্যগ্রহন সম্পূর্ণ করবে। কিন্ত একটি টিক যদি দ্রুত খাদ্যগ্রহন পর্বে থাকে, এবং হোস্ট থেকে পড়ে যায়, তাহলে সে আর হোস্ট খুঁজবে না। তখন সে উপযুক্ত স্থান খুঁজে বের করে যতটুকু খাদ্যগ্রহন করেছিল ততটুকু ডিম পারবে। আবার একটি টিক যদি, কুমারী অবস্থায় (virgin) হোস্টে থাকে, এবং কোন পার্টনার না পায়, তাহলেও সে ধীর পর্ব থেকে দ্রুত পর্বে যাবে না, এবং অনির্দিস্টকাল পর্যন্ত হোস্টের গায়ে লেগে থাকবে (ল্যাব কন্ডিশনে ৪০ দিন পর্যন্ত দেখা গেছে, প্রাকৃতিক অবস্থায় হয়ত আরো বেশি থাকে)। ধীর খাদ্যগ্রহন থেকে দ্রুত খাদ্যগ্রহনের যাবার যেই সময়টা তাকে বলা হয় “Critical Weight” (বাংলায় বলা যেতে পারে “ক্রান্তি ওজন”)। “Critical weight” টার্মটি আমার সুপারভাইজারের দেয়া এবং এটি টিক গবেষণায় একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখে আসছে। আমিও পরে এই নিয়ে গবেষণা করেছি।
এইতো...
আজকে এইটুকুই থাক। চা খেয়ে আসি। পরের পর্বে টিকের আরো কিছু নিয়ে আসছি।
বিঃ দ্রঃ
১। পুরো লেখাটাই লিখেছি স্মৃতি এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে। তাই তথ্যসুত্র দিলাম না। তবে কেউ যদি কোন বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী হন, জানান, তথ্যসুত্রা দিয়ে দিব।
২। যেসব ছবির তথ্যসুত্র দেইনি, সেগুলি হয় আমার তোলা, অথবা আমার ল্যাবের তোলা। আর যেগুলি গুগুল মামার কাছ থেকে নেয়া সেগুলির তথ্যসুত্র দেয়া হয়েছে।
৩। কারো মনে কোন প্রশ্নের বেগ চাপলে নির্দিধায় জিজ্ঞেস করতে পারেন। মন্তব্যে উত্তর দিতে না পারলেও হয়ত পরের পর্বে উত্তর দিতে চেষ্টা করব।
গৃহবাসী বাঊল
এইবার আনিসুলপনা
আমার আগের লেখাসমুহ
ইউরোট্রিপঃ যাত্রা শুরুর আগে- ১
ইউরোট্রিপঃ যাত্রা শুরুর আগে- ২
ইউরোট্রিপঃ যাত্রা হল শুরু
মন্তব্য
ছারপোকাই টিক নাকি?
না বস। ছারপোকা একেবারেই পোকা। এরা ইনসেকটা ক্লাসে পড়ে। আর টিকের বৈচিত্র্যের তুলনায় ছারপোকা নাদান বাচ্চা। আশা করছি পরের পর্বেই বলব টিক নিয়ে আমরা কেন কথা বলছি। কেন টিক গুরুত্বপূর্ণ।
আর পড়ার জন্য ধন্যবাদ বস। পপ্পন খাইতে থাকেন।
সম্পূর্ণ পড়লাম। বেশ জ্ঞানবর্ধক, উপরন্তু আপনার রসবোধ চরম।
এই পোকাত্তম অবলা প্রাণীকে বাংলা ভাষায় আটালি, আঁটালি, এঁটুলি, আটুলি, আঠালু ইত্যাদি বিভিন্ন নামে ডাকা হয় কারণ সেটা কিনা আঠার মত লেগে থাকে দেহের সাথে।
আমারও কেন জানি মনে হইছে এইগুলি আঠালি হইতে পারে। আমারে দেশ থেকে কেউ জিজ্ঞেস করলেই বলতাম "গরুর গায়ের পোকা নিয়ে গবেষণা করি"।
আমি আদৌ সেই জিনিস দেখছি কিনা জানি না। গরুর গায়ের পোকা অন্য জিনিসও কি হইতে পারে না? আপনি কি শিউর বস?
পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
শিওর। এখন বুকে হাত দিয়ে বলতারবেন আমি 'এঁঠুলি গবেষক'
আগের ল্যাখার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে পপ্পন তো পপ্পন...ভুট্টার ক্ষেত তামা কইরা দিলাম। তারপরেও শান্তি...লেখা পাইতাছি। টক চইলপে!!
আপ্নে মিয়া একটা অভিশাপ। এই লেখাটা আসলে আপ্নের গুতাতেই লেখা।
আসলে হইছে কি, ইউরোট্রিপের ২টা কমপ্লিট আর একটা হাফ ডান লেখা নিয়া আমার কম্পুটার ইন্তেকাল করল। তারপর আবার অইগুলি নিয়া বস্তে ইচ্ছা করতেছে না। দেখি, কোন এক শুভ দিনে হয়ত অইগুলি নিয়া লেখা দিয়া দিব। ততদিন আপ্নে খাওয়ার জন্য অন্য কিছু খুঁজেন।
আর গুতাগুতির জন্য ধইন্যা। এইটা কিরাম লাগ্লো? বুঝতে কষ্ট হইছে?
অভিশাপ?? আমি?? টিনের চালে কাক, আমি অবাক!!!! অভিশাপ আমারে সেলাম দ্যায়, তাপ্পর দূরে পলায়। সময় পাইলে একদিন ডেমো দিয়া দিমুনে।
আরেহ!! কম্পু ইন্তেকাল করলে কি আর করা!! দেশে থাকলে কইতাম বাসাত আইসা পরেন, ভুডু মাইরা কম্পু জিন্দা কইরা দিতাম। আছেন তো মিয়া ফিরিঙ্গিপাড়ায়
এইবার একখান লাখ ডলার এর কুশ্চেন। দুইন্নাত এতো মখলুকাত থাকতে এই মালের পিছে লাগলেন ক্যা? ইন্সপিরেশন টা কি? আর যদি পারেন এই জিনিস কোটিখানেক আমারে পাডান। সচিবালয়ে ছাইড়া দিয়া আমু
আররে ম্যান, এত আফসোস করতাছেন কেন? হার্ডিস্ক তো রইয়া গেছে। দেশে গেলেই অইটা আপ্নেরে দিয়া দিমুনে মানুষ বানানর লাইগা। আপ্নে কোন টেনশনই নিয়েন না এই ব্যাপারে।
এইবার লাখ ডলার উত্তর। আমি আসলে এইটা নিয়া কাজ করতে চাই নাই। আমার ব্যাকগ্রাউন্ডে পোকা মাকড় নিয়া পড়া শুনা এক্টাই ছিল,তাও ইন্টারে তেলাচোরা নিয়া এর পর আর কিছু ছিল না। পরে এই প্রফেসরের অন্য একটা প্রজেক্টে কাজ করার জন্য আমি আসছিলাম। কিন্তু অইযে, মানুষ ভাবে এক হয় আরেক। কপালের ফেরে পইড়া আজকে এই জিনিশ নিয়া পড়তে হইছে। তয় কানে ধরছি। আর না।।।। সছি-বাল-অয়ে এই জিনিষ পাঠাইয়া লাভ নাই, অইখানে এর চেয়ে কড়া জিনিস আছে। কি দরকার এই নাদান পোকাগুলিরে কষ্ট দেওয়ার?
ল্যাখা বড়ই প্রাঞ্জল। পুরাই
টেনশনে ছিলাম, আবার কঠিন হয়া যায় নাই তো, আপ্নের কথা শুইনা আশ্বস্ত হইলাম। অনেক ধইন্যা।
চিত্র ২ এর ইন্টারেস্টিং অংশগুলো একটু জুম করে দেখার ইচ্ছা হচ্ছিলো। কিন্তু বেশি জুম হলো না।
প্রশ্ন ১: মানুষের গায়ে টিকের প্রোকপ কেমন? পৃথিবীর কোন কোন অংশে মানুষ এইটা উকুনের মত অহরহ গায়ে নিয়ে ঘোরে?
প্রশ্ন ২: গায়ে টিক ধরলে ছাড়ানোর উপায় কি? সাবান দিয়ে গোসল করলে যাবে?
প্রশ্ন ৩: নাটাল্লিলিডি নিয়ে ২৫ টা পেপার লেখা হয়েছে বললেন। কিন্তু কেন এরা এত স্পেশাল সেটা তো বললেন না।
প্রশ্ন ৪: কে বেশি বস, টিক নাকি ছারপোকা?
৫০ কেজি ভরের কেউ, তার শরীরের ভরের ১০০ গুণ খাদ্য গ্রহন করলে তার ভর হয়ে যাবে ৫০৫০ কেজি।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ধন্যবাদ স্পর্শ ভাই প্রশ্নগুলির জন্য
১। মানুষের গায়ে টিকের প্রকোপ খারাপ না। চান্স মত পেলে খবর করে ছেড়ে দেয়। তবে অন্যান্য প্রানীর উপর এদের প্রকোপ অত্যন্ত বেশি। কারণ তারা মানুষের মত বেছে বেছে ফেলে দিতে পারে না। পরের পর্বে আমি এইগুলি নিয়ে কথা বলব বলে চিন্তা করছি। তাই এই খানে বিস্তারিত বললাম না।
পৃথিবীতে এমন কোন জায়গার কথা আমি জানি না যেখানে মানুষ এই জিনিস উকুনের মত নিয়ে ঘোরে। এইটা আসলে সম্ভব না এদের সাইজের কারনে। আর এরা তো একটা সময়ের পর আর গায়ে থাকে না। পড়ে যায়। তবে এরা মানুষের গায়ে উঠে, কামড় দেয় এবং রোগ ছড়ায়।
২। এরা গায়ে লাগলে এক ছাড়ানোর এক্টাই উপায় আছে, তা হচ্ছে টেনে তুলে ফেলা। সাবান দিয়ে গোসল করলে এরা যাবে না। এরা বড়ই বদ। ভাল জিনিস মনে করছেন। কোথাও না কোথাও এটা উল্লেখ করতে হবে।
৩। নাটাল্লিলিডি স্পেশাল এই জন্য যে, অন্যান্য প্রজাতির টিক যেখানে কোটি কোটি পাওয়া যায়, সেখানে তাঞ্জানিয়া সীমান্তে এই প্রজাতির মাত্র ১৮ টা স্যাম্পল পাওয়া গেছে, যার সবগুলি ছিল মৃত। পরে এদের গঠন নিয়ে স্টাডি করে বুঝা গেছে যে, এদের মধ্যে আরগাসিড এবং আইক্সোডিড উভয়ের বৈশিষ্ট্য আছে। তাই একেক জন একেকটা নিয়ে গবেষণা করতে করতে এখন পেপারের সংখ্যা ২৫ এর অধিকে দাঁড়িয়েছে। বিজ্ঞানীরা অবশ্য হন্যে হয়ে এর জীবিত স্যাম্পল খুঁজে বেড়াচ্ছেন।
৪। টিক অবশ্যি অনেক বেশি বস। ছারপোকা একটা নাদান পোকা, দুধের শিশু। আর একটা টিক মওদুদ, এরশাদের কাছাকাছি ভয়ংকর।
জায়গায় জায়গায় এত বক্স আসে কেন? কি ছিরিংখলা রে বাবা
পুরাই ড্রাকুলা পোকা !
স্পর্শ'র প্রশ্নগুলোর উত্তর আমারো জানতে ইচ্ছে করছে।
চলুক।
আরে স্যাম্ভাই, কি খবর? আছেন কিরাম?
স্পর্শ ভাইয়ের প্রশ্নের উত্তর দিছি। মডারেশনের ফাঁড়া কাটলেই দেখতে পারবেন। উত্তর পছন্দ না হইলে আবার জিজ্ঞেস কইরেন।
অবশ্য প্রচুর দানবাক্স আছে উত্তরের মধ্যে। বিশাল ছিরিংখলা
দানবাক্স এর ঘটনা কি?, মাঝে মাঝে দেখি, আবার দেখি নাই!
মনে হয় ব্রাউজারের জন্য এইরকম হচ্ছে। আমি সাফারিতে দেখেছি। অইখানে সব ফকফকা, কোন দানবাক্স নাই। ক্রোমেই শুধু বাক্স দেখা যাচ্ছে। কাগু মনে হয় ক্রোমরে টেকাটুকা দিছে অভ্র'র লেখারে বাক্স বানাইয়া দিতে
আমার অ্যাপার্টমেন্টে খুব আদুরে চেহারার কিছু কুকুর আছে। সেগুলোর সাথে মাঝামাঝে খাবলাখাবলি, ঘষাঘষি করা হয়। আপনার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে খুব ভয়ে ভয়ে থাকি - কখন না আবার টিক আমার গায়ে উঠে আসে।
লেখা পর্যাপ্ত পরিমাণে জ্ঞানী হয়েছে।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
এইখানকার কুকুর বিড়ালদের থেকে আসলেই টিক আসে। আমার বসের নাতির গায়ে একবার উঠছিল। তাও কুকুর থেকে। আর এইগুলি জায়গামত কামড়াইতে পারলে হাস্পাতালের আতিথেয়তা নিশ্চিত। তাই খুউউউপ খিয়াল কইরা কুকুরের সাথে ঢলাঢলি কইরো। তোমার তো আবার স্বভাব খারাপ আছে। কুকুর দেখলেই লালা পড়ে।
আমি তো গ্যানি লেখা লেখতামচাইনাই। গ্যানি হইল কেন?
অইগুলি ঠিক টিক কিনা আমি শিউর না। তবে উপরে সৈকত ভাই বললেন যে, ওই মালই নাকি এই মাল। আবার আপনি ও বললেন। মনে হয় তাইলে এই জিনিসই ওই জিনিস। দেখি একটা খোঁজ দ্যা সার্চ দেওয়া লাগব।
আর বস, আপ্নের দানবাক্সের ভিতরে কি আছে ঠিক বুঝলাম না।
আমি অবশ্য গরুর গা থেকে খুলে খুব কাছে নিয়ে দেখেছিলাম, যদ্দূর মনে পড়ে সেইটা গায়ে-গতরে আপনার দেওয়া ছবির মতই (৮ টা ঠ্যাং)। তবে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম প্রজাতিক বিশ্লেষণ আপনি হয়ত আরো ভাল করতে পারবেন।
আমাদের দেশে কীট-পতংগ নিয়া এখনো সেইরকম গবেষণা হয়না (পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন এন্টোমোলজিস্ট বাদে)। সব পোলাপাইন জামাতে ছুটতে আছে হুজগের পিছে, সবাই "খুল (cool)" বিষয়ে পড়তে চায়, বা অন্ততঃ সমাজের চোখে "খুল (cool)" লাগে এমন কোন ডিসিপ্লিন।
অন্যান্য দেশেই বাচ্চা বয়স থেকেই পোলাপানগো স্কুলে পোকামাকড় লইয়া ঘাটাঘাটি করায় (বিশেষ করে জাপানে, যেখানে কৃষিবিদ্যাকে সরকার হাইয়েস্ট প্রায়োরিটি দেয় বলে শুনেছি, অথচ এইরকম ব্যবস্থা বরং আমাদের দেশেই হওয়ার কথা ছিল)।
আর আমাদের দেশের শিশু-কিশোরদের কথা বাদ দিলাম, শিক্ষিত এমন অনেক পাব্লিক আপনি পাবেন যারা মনে করেন শুয়াপোকা হইল জ্বিনের বাচ্চা -- কি আর কমু।
আট ঠ্যাং থাকলেই সেটা যে এই জিনিস হবে তা কিন্তু না বস। এরা বেশিরভাগই আট ঠ্যাঙ্গের হয়ে থাকে। তবে আরো দুইজন বললেন যে এইগুলিকে নাকি দেশে আঠালি বলে।
কীটপতংগ নিয়ে দেশে গবেষনা হবে কি করে? দেশে আরো জটিল জটিল সমস্যা আছে না। ম্যালেরিয়া, এইডস, দারিদ্র্য দুরীকরণ, হাত ধোয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। এইগুলিতে টাকা আসে বেশি, আর দেশকে বেচাও সুবিধাজনক। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিরই বা কি দোষ?
টিকের উত্তরবঙ্গীয় বাংলা নাম "এঁঠেল" বা "আঁঠ্যাল"। গবাদি পশুর গায়ে প্রায়ই দেখা যায়।
সরি বস, আপনার মন্তব্যের উত্তর উপরে ফাহিমের মন্তব্যের নিচে চলে গেছে। আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
ইন্টারেস্টিং লেখা। ভালো লেগেছে!
ধন্যবাদ মঞ্জুর ভাই। আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমারও ভালো লাগল।
পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করছি। আপনাদের তোলা ক্ষমতাসীন টিক ও বিরোধীদলীয় টিকের একের ওপর অন্যের ছবিটা দুর্দান্ত হয়েছে।
জ্বী হিম্ভাই, পরের পর্বে কি কি দেয়া যায় সেটা নিয়ে এখন চিন্তিত এবং টেন্সিত আছি। দেখা যাক। অপেক্ষার সময়টুকু'র জন্য শুভকামনা।
আর ছবির প্রশংসা করার জন্য ধন্যবাদ। ছবিটা আসলে ভাল হয়েছে। এই ছবিটা জার্নালে যাবার আগে থেকেই ডিপার্টমেন্টের দেয়ালে, ফ্লায়ারে, আরও নানা জায়গায় ঝুলেছে।
একটা প্রশ্ন বস, লেখায় আর কমেন্টে এত দানবাক্স কেন? মিঝাখখারাফ হয়ে যাচ্ছে।
বাহ ! দারুণ লেখা।
নতুন বাসায় এসে শুনলাম এখানে টিক আছে, ফিনিশ নাম লুত্তিকা! ইংরেজি নাম ভুলে গেছি
facebook
আপ্নের প্রশংসা আমি নিমু না। আপ্নের লগে রাগ।
ফিনল্যান্ডে অনেক ধরণের টিক আছে। ইউনিভার্সিটি অব হেলসিংকি তে টিক নিয়ে বেশ ভাল গবেষণা হয়। টিকের ব্যাপারে একটু সাবধান থাকবেন। এরা বড়ই বদ।
লুত্তিকা'র ইংরেজি নামটার জন্য একটা খোঁজ দ্যা সার্চ লাগাইবেন নাকি?
টিক-এর 'টক' ভাল্লাগছে বাউল ভাই।
আপ্নে যে সে কবে আমাদের ইয়োরোট্রিপের অর্ধেক মূলা ঝুলায়ে গায়েব হইলেন - আর তো কোন খবরই নাই।
আপ্নে মনে হয় গুগল ক্রোম ব্যাবহার করছেন তাইনা?
ইউরোট্রিপের শেষ করতে পারি নাই নানাবিধ জাগতিক এবং মহাজাগতিক ব্যস্ততার কারণে। তাই ভাব্লাম অন্য কিছু লেখি।
লেখা পড়ার জন্য এবং মন্তব্য করার জন্য
আপনি তো দেখি কাবিল লোক, খালি বাক্সের মইধ্যেও জিনিস দেখতে পান। আসলেই ক্রোম ব্যবহার করতেছি। ক্রোম তো দেখি একটা অভিশাপ।
মোটেও না। আমি ক্রোম ভালা পাই, তাই সে মোটেও অভিশাপ না।
আর দান বাক্স খারাপ কি ?
আবেগতাড়িত মন্তব্য হয়ে গেলো।
দারুন লেগেছে পড়ে। কিন্তু ভয়ও লেগেছিল!পরে আশ্বস্ত হয়েছি মানব দেহে আসবে না জেনে।
খালি পায়ে ঘাসের উপর হেটেঁ একবার পায়ের তলায় বিরাট ইনফেকশন হয়েছিল। এক মাসের মতন ভুগেছিলাম। হাটঁতে পারতাম না। সেই থেকে এখন ও খালি পায়ে হাটঁতে ভয় পাই।
প্রশ্ন: এই টিক মানব কল্যাণে কোনো কাজে লাগেনা? সেদিন পড়লাম Naked Mole Rat এর ক্যান্সার হয়না তাই তারে নিয়ে গবেষণা হচ্ছে।
ভালো থাকবেন। পরের পর্ব তাড়াতাড়ি দেন। রোজার মধ্যে পপকর্ন নিয়ে বসতে পারব না।
খুব ভাল আর দামী লেখা।
টিকের ভয় করাই উচিত। নানা রকম কঠিন রোগ ছড়াতে পারে এদের কামড় থেকে। শরীর থেকে টিক তুলতে খুব-ই সাবধানতা নেওয়া দরকার পড়ে। চামড়ার উপর থেকে সরাসরি উল্লম্ব বরাবর টান দিতে লাগে। ভীষণ ভাবে খেয়াল রাখতে হয় যে টিকের শরীরের কোন অংশ তার 'হোস্ট'-এর শরীরে না রয়ে যায়। ভালভাবে কাজটা করতে পারার জন্য বাজারে কয়েক রকম টিক-উত্তোলক পাওয়া যায়।
- একলহমা
ঠিক বলেছেন। এই জিনিস খুবই ভয়ঙ্কর। আমরা অনেক সময় না জেনে এইসব ব্যাপারগুলো কে ছোটখাট ব্যাপার বলে উড়িয়ে দেই। এই জিনিসগুলো কে একটু সিরিয়াস্লি নিলেই অনেক ঝামেলাই কমে যাবে। আমার কো-সুপারভাইজারের ছেলের লাইম ডিজিজ হয়েছিল, যা শুধু টিক থেকেই ছড়ায়। আর কাকে কি বলব। আপনি ও কি টিক নিয়ে কাজ করেন/করেছেন নাকি?
কষ্ট করে মন্তব্য করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
টিক নিয়া কোন কাজ করি নাই। কয়েক বছর আগে চিগার-এ কামড়াইয়া খুব ঝামেলা পাকাইছিল। তখন-ই এই টিক-এর কথা জানতে পারি।
- একলহমা
চিগার কি জিনিস বস? আমার মাথা দেখি চুক্লায়
এ বহুত খচড়া জিনিস-রে দাদা! টিকের ভায়রা ভাই। পূর্ণ বয়স্ক প্রাণী আট-পেয়ে। কিন্তু লার্ভাগুলো ছয়-পেয়ে। আর এই লার্ভাগুলান-ই লম্বা ঘাসের ডগা থেকে জুতো-প্যান্ট বেয়ে উঠে এসে আমার কোমর বরাবর নানা জায়গায়, যেন এক অদৃশ্য বেল্ট বরাবর দশ-বারটা কুঁয়ো খুঁড়ে তার মধ্যে এনজাইম-ভরা রস ঢেলে আমার শরীর গালিয়ে চুকচুক করে সেই রস খেয়ে চলেছিল। নাদান আমি চুলকে পাগল হয়ে গেছিলাম; প্রথমে তো বুঝতেই পারিনি কি হয়েছে! কোন কোন ক্ষত বেশ বিষিয়ে গিয়েছিল। তবু বলব, ভাগ্য ভাল ছিল তাই কোন হতচ্ছাড়া অসুখ পরিবাহিত হয়ে এসে যায়নি! এই 'মাইট'-এর বাচ্চারা টিক-এদের ধরণে কামড়ায় না অর্থাৎ ঐ-রকম চামড়ার মধ্যে মুখ-মাথা ঢুকিয়ে কামড়ে পড়ে থাকে না। এরা ঐ কুঁয়োর পারে লটকে থেকে রস চুষে চলে, যতদিন না পেট ভরে খেয়ে জীবন-চক্রের পরের পর্বে যাওয়ার জন্য হোস্ট-এর (যেমন আমার) গা থেকে খসে পরে। অনেক বছর আগের ঘটনাটার মানসিক ধাক্কাটা আমার অন্তরে এখনো বেশ ভালমত-ই সজীব!
- একলহমা
পাইলাম চিগারকে। অইটারে বলা হয় হারভেস্ট মাইট। খুশির খবর এইযে, চিগার মিয়া কোন রোগ ছড়ায় না। হাল্কা পাতলা জ্বর হয়। তবে সেই মাপের চুক্লায়।
টিক ও কিন্তু লার্ভা অবস্থায় তিন জোড়া পা থাকে। বড় হইলে তারপর চার জোড়া হয়।
আশা করি কামড়া-কামড়ির ধাক্কাটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন।
গরুর গা থেকে তুলে এদের পিষে মারার ভালই অভিজ্ঞতা আমার আছে (সে ২০ বছর আগের কথা), গরু খুব শান্তি পাই এগুলো উঠালে (হিমু ভাই, গরু কিন্তু নিজের!)
আপনি আর গরু দুইজনে রাজি থাকলেই হৈছে
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
হ, মিয়া বিবি রাজি, তো কেয়া করেগা কাজী
এতে করে আপ্নেও খুশি, গরুও খুশি।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ওরে ভাই, এতদিন তো বার্মা টিক আর প্রশ্নের উত্তরে টিক দেয়া শুনেছে, এতো দেখি নতুন টিকের আমদানী!! লেখা দারুণ লেগেছে।
আপনি বাংলা উইকিপিডিয়ায় লিখবেন? আপনাদের সহযোগিতাই পারবে মাতৃভাষায় তথ্যসমৃদ্ধ জ্ঞানকোষ গড়ার প্রচেষ্টাকে স্বার্থক করতে।
প্রোফেসর সাহেব, অনেক ধন্যবাদ লেখা পড়ে মন্তব্য করার জন্য।। লেখা ভাল লেগেছে জেনে আমি খুবই আনন্দিত।
আমি অবশ্যই বাংলা উইকিপিডিয়ায় লিখতে চাই। একটু কষ্ট করে আমাকে জানাবেন এই জন্য আমাকে কি করতে হবে। এই বিশাল জ্ঞানভান্ডারে একটি বাক্য যোগ করতে পারলেও নিজেকে ধন্য করব।
ভাই, শুধু এইখানে গিয়ে নতুন একাউন্ট খুলে নেন, তারপর যে বিষয় পছন্দ, তার উপরে নিবন্ধ লিখুন।
স হায়িকার জন্য এখানে দেখুন।
-প্রোফেসর হিজিবিজবিজ
ওকে বস, শীঘ্রি শুরু করে দেব। অনেক ধন্যবাদ।
টিক নিয়ে বেশি টিকটিক না করে ভেবেছিলাম চুপচাপ পড়ে যাব। কিন্তু টিকের অবদানগুলো জানার ইচ্ছা থাকলো।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
জ্বী, জানাব, পরের পর্বে আশাকরি এই জিনিসগুলো নিয়ে আসব।
লেখা পড়ে মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ
আপনে তো দেখি বিশাল কাবিল লোক ...
এইটা কি কইলেন বস? এইভাবে লজ্জা দিতে পারলেন? আমি কাবিল না, নিতান্তই ছাপোষা টাইপের একজন নিচুস্তুরের বুদ্ধিসম্পন্ন লোক। কাবিলত্বের সংগা অনুযায়ী কাবিল তো হইলেন আপ্নারা। যাই হোক, লেখা পড়ে মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ বস।
সবই বুঝছি।
..................................................................
#Banshibir.
গুড বয়। এইতো মনোযোগী ছেলে। কীপিটাপ
সচল ভর্তি হাবিল কাবিল! অনার্য আর কৌস্ত্তভের বিজ্ঞান বিষয়ক লেখাগুলো ভালো লাগে ওদের
সহজ ভাষা আর মজারু করে বলার ভঙ্গির জন্য। আপনিও বেশ মজারু করে লিখেন।
কঠিন কথা সহজ করে বলতে পারার জন্য এটা আমি গতকালই পড়েছি মন্তব্য করা হয়নি।
পরের পর্বের ব্যাপারে আগ্রহ থাকলো। শুভকামনা।
ধন্যবাদ বস। পরের পর্ব নিয়ে চিন্তা করছি। মাথায় আসলেই নামিয়ে দেব।
বাসরে! এইটুকু পিচকা পোকা নিয়ে এত কান্ড! বস পুকা দেখা যায়। যাহোক, জ্ঞানের কথা পড়তে কষ্ট হয়নাই, ভাল্লাগসে।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
পিচকা জিনিসই তো বেশি ঝামেলার। এইজন্যই তো বলে, 'বিগ থিংস কাম ইন স্মল প্যাকেজেস" ।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
পোকা নিয়ে এরকম সরেস লেখা আগে পড়িনি কখনো। দারুণ। পরের পর্ব কই?
এখন তো শরীরে একটু চুলকালেই মনে হইতেছে টিক বুঝি সব রক্ত খেয়ে ফেললো!
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আরে নজু ভাই, চুল্কাইলেন তো হাইরা গেলেন। এইগুলি বড়ই বদ পোকা। এরা গায়ে লাগ্লে রক্ত খাইয়া ঢোল হওয়ার আগ পর্যন্ত বুঝবেনই না যে লাগসে গায়ে। এইগুলি মশার মত না, কামড়াইলে চুল্কায় না।
তাই, টিকের ভয় মন থেকে ঝেড়ে ফেলে মনের আনন্দে শরীরের সম্ভব-অসম্ভব জায়গায় চুল্কাইতে থাকেন।
ভালো লাগলো। এরকম সরস ভাষায় তথ্য সমৃদ্ধ লেখা সহজে পড়া যায়, আরো লিখন।
হালার পুতে যখন আরও ৯০ বছর বাইচা থাকার টেন্ডার লইলই... হের গায়ে এক বালতি ভুখা নাঙ্গা টিক ছাইড়া দেওন যায়না???
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আমি এইটা রায় শুনার পরপরই চিন্তা করছি। কিন্তু কোন স্পেসিসটা ছাড়ুম এইটা এখনো ডিসিশন নিতে পারতেছি না। ওই স্পেসিস্টা আবার বাংলাদেশে আছে কিনা বা বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বাঁচবো কিনা এইটাও চিন্তার বিষয়। তারচেয়ে বড় কথা হইলো ওই জঘন্য প্রাণিটার গায়ে টিক বইসা কামড়াইয়া ধরতে পারব কিনা। অর চামড়া কয় ফুট মোটা আল্লাহ জানে। অনেক গবেষণার বিষয় আছে। তবে আপনার প্রস্তাব ভাল। আপনার প্রস্তাবে আমি "সন্তষ্ট"।
এর চেয়ে ভাল হয় মাসুদ রানার বুদ্ধি ধরলে। মাসুদ রানা তার "সাউদিয়া ১০৩" বইয়ে যেই কাম করছিল, সেইটা।
প্রয়োজনে জ্বিন-ভুতের সাহায্য লন... নয়া স্পেসিস বাইর করেন...
ইয়ে "সাউদিয়া ১০৩" এ জানি কি হইছিল??
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
সাউদিয়া ১০৩ এর কালপ্রিট টারে মাসুদ রানা একটা গুল্লি করছিল। গুল্লি টাতে সে সাথে সাথে মারা যায় নাই। কারন সেইটা এক্সপ্লোডিং বুলেট ছিল ন। কিন্তু বুলেটের হেডে ছিল এইডস ভাইরাস, হেপা ভাইরাস, সিফিলিস সহ আর অনেকগুলি জীবানু। যাতে সে কষ্ট নিয়া বাইচা থাকতে পারে। এক গুলিতে মাইরালাইলে তো মইরাই গেল, তারচেয়ে এইগুলি নিয়া বাইচা থাকা বেটার না। টের পাইব, মৃত্যু যন্ত্রনা কি, আর মইরা মইরা বাইঁচা থাকা কারে কয়।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নতুন মন্তব্য করুন