প্রচন্ড গরম। হাতে নোটখাতা, প্রশ্নতালিকা অনবরত হাতড়াচ্ছি। সামনে উতসুক চেহারা নিয়ে বসে আট-দশজন মহিলা। অভিভাবকের ভঙ্গি নিয়ে বসে আছেন একজন পুরুষ, মহিলাদের কারো স্বামী হবেন। ইন্টার্ভিউ যদিও শুধুমাত্র মহিলাদেরই নেবার কথা ছিল, বেশিরভাগ উত্তর দেবার দায় স্বপ্রণোদিত হয়ে তিনিই নিচ্ছিলেন।
প্রথম ঘটনাটা বেশ কয়েক বছর আগের। ২০০৮/৯ এর দিকে হবে। বাসে করে ক্লাসে যাচ্ছিলাম সকাল সকাল। পুরো বাস অফিসগামী মানুষ আর ক্লাসগামী ছাত্র দিয়ে বোঝাই। কোনমতে সামনের দিকে একটু জায়গা করে দাঁড়িয়ে খেয়াল করলাম মহিলা সিটে দুইজন ছেলে বসা। বাসে কোন মহিলা দাঁড়িয়ে নেই দেখে ভাবলাম থাকুক বসে। কেউ উঠলে নিশ্চয়ই সিট ছেড়ে দিবে।
ভুল ছিলাম আসলে।
একটা কথা খুব জানতে ইচ্ছে করে। একটা মেয়ে রেপড হলে আমরা খুব চেঁচামেচি করি, কেন করি? মেয়েটির সামাজিক মর্যাদা নষ্ট হয় বলে নাকি তার দেহ ও মন ক্ষতবিক্ষত হয় বলে? যদি মনে করি সামাজিক মর্যাদা নষ্ট হয়, তবে আরও একটা প্রশ্ন এসে যায় যে অন্যায় মেয়েটি করে নাই, তার জন্য সে কেন মর্যাদা হারাবে? কেন সে লজ্জিত হবে? আর যদি মনে করি তার তার দেহ-মন ক্ষতবিক্ষত হয় বলে প্রতিবাদ করি, তবে এই আমরাই কী করে ১২/১৩ বতসরের মেয়েদেরকে বিয়ে দেই? তাও আবার সমাজকে সাক্ষী রেখে? একজন রেপিস্ট তো চুপিসারে কাজ সারে, আর একজন লাইসেন্সধারী রেপিস্ট তো সমাজের অনুমতি নিয়ে দিনের পর দিন অতটুকুন শরীরের ওপর নির্যাতন চালায়! তখন কেন সবাই মুখ টিপে মজা দেখে? কেন মেয়েটির ক্ষতবিক্ষত দেহ আমাদের মনকে নাড়া দেয় না?
[নারী সপ্তাহ উপলক্ষ্যে]
বাঙালির যৌনজীবন নিয়ে প্রিয় লেখক হুমায়ুন আজাদের একটা লেখার অংশ:
মেয়েদের মধ্যে এলাকাভিত্তিক ঐক্যের অভাব চোখে পড়ার মতো। আমাদের বন্ধুত্ব বা আড্ডা হয় শুধুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক। ছেলেদের প্রায় সবারই এলাকায় বন্ধু বান্ধব থাকে, এবং অন্য এলাকায় গেলেও তারা পরিচিত বন্ধুদের কাছ থেকে হেল্প নিতে পারে। একই এলাকার বাসিন্দা মেয়েদের মধ্যে একই রকম নেটওয়ার্কিং গড়ে তুলতেই আমাদের শক্তি আইডিয়ার জন্ম।
শক্তি গ্রুপ এবং নেটওয়ার্ক কারও একার নয়, প্রত্যেক শক্তি এখানে সমান, সবাই সবার বন্ধু। শক্তিকে কর্মক্ষম এবং সুন্দর রাখতে শক্তির সকলের মতামত, ইচ্ছে, পরামর্শ অথবা অভিযোগকে সমান গুরুত্ব দেয়া হয়।
বৈশাখী মেলায় আড্ডাবাজির ফাঁকে ফাঁকে তন্ময় যে রঙ্গিন সাজে পরীর মত দেখতে হওয়া মেয়েগুলির দিকে তন্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেনি, তা নয়! এরপর রাতে টিভির নিউজটা স্বভাবতই বুকের মাঝে ভীষন ক্ষত সৃষ্টি করল, চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল, দিনের বেলা দেখা সেই স্বপ্নের পরীদের বিবস্ত্র করছে কতগুলো জানোয়ার! পরীদের আর্তচিৎকার ছড়িয়ে পড়ছে আকাশের বিশাল শুণ্যতায়!
আমি, আমরা তখন অষ্টম কিংবা নবম শ্রেণীতে পড়ি; আমাদের বন্ধু শৈলীও তাই। শৈলী আমাদের কলোনীর মেয়ে। আমরা এক সঙ্গে শৈশব থেকে বেড়ে উঠেছি, বড় হয়েছি। কলোনীর আরো অনেক মেয়েইতো ছিল; যাদের সাথে এক্কা-দোক্কা, বরফ-পানি আর দোকান-দোকান খেলা খেলতে খেলতে বড় হয়েছি আমি; তবু আজকের এই পড়ন্ত বেলায় স্মৃতির ক্যানভাসে শৈলীর মুখখানাই ভেসে উঠছে বারবার। শৈলী ছিল অনেকটা প্রচণ্ড কালবোশেখীর তাণ্ডবে টিকে থাকা একটি সপ্তপর্ণ বৃক্ষের ম
আমাদের সমাজে এই নারী হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াটি কি রকম? "ভালো" মেয়ে প্রশ্ন করে না, জোরে হাসে না, জোরে কথা বলে না, তর্ক করে না, প্রতিবাদ করে না, নিজের চাহিদার কথা মুখ ফুটে বলে না। সে জটিলতা বোঝে না, রাজনীতি তো নয়ই। তার শরীর তার লজ্জার বস্তু তাই নিজেকে আবৃত রাখে সে। পা ঢাকে, মাথা ঢাকে, তাতেও যখন হয় না তখন মুখ ঢাকে। একসময় নিজের মনুষ্যত্বটুকুও ঢাকে প্রাণপণে। হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান এণ্ডারসনের "লিটল মারমেইড" গল্পটির কথা মনে আছে কারো? সেই যে ছোট্ট জলপরী, রাজপুত্রের কাছে এবং তার সমাজের কাছে গ্রহনীয় হওয়ার জন্য ধীরে ধীরে একটি একটি করে স্বকীয়তা হারায় সে? সবশেষে হারায় তার কণ্ঠস্বর।
এসেছি নিজের কথা বলতে। আমরা মেয়েরা আজীবন বাবার কথা, ভাই বোন, স্বামী সন্তান, সংসারের কথা বলি। নিজের যে দুটা কথা আছে তা আর বলা হয় না... কাওকেই না।
ছোটবেলা থেকেই শুরু করি।
সচলে আমার প্রথম লেখা। হাত কাঁপছে। সাত বছর ধরে সচল পড়ছি। লেখার সাহস করিনি কখনো। কত বড় বড় লেখক এখানে! কিন্তু 'নারী সপ্তাহের' আহবানে আজ আর পাঠক হয়ে বসে থাকতে পারলাম না। বানানে খুব কাঁচা আমি, বিশেষ করে 'র' আর 'ড়'। সময় অভাবে অভিধান দেখে ঠিক করে নিতে পারলাম না বলে দু:খিত। তাই সম্ভব হলে বানান ভুলগুলো ধরিয়ে দিতে তুলিরেখাকে অনুরোধ করব।