আমাদের দেশে আমরা কিভাবে কিভাবে যেন কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্যে বা মনের ব্যাকুলতা প্রকাশ করার জন্যে কিছু নির্দিষ্ট সময় বা মেয়াদকাল ঠিক করে ফেলেছি। সর্বজনবিদিত গ্রহণযোগ্য সময়সীমার আগে পিছে হয়ে মেয়াদত্তীর্ন হয়ে গেলেই আমাদের ভ্রূ কুঁচকে যায় আর মনে মনে ভাবতে থাকি- এই সময়ে এটা একটু কি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেল নয় কি?
আমার স্মোকি পর্বতের কেবিনে দুই রাত কাটানোর কথা শুনে তারেক অনু বলল, “আপা লিখে ফেলেন আপনার অভিজ্ঞতা”। কিন্তু আমিতো অনু নই যে ঘুরে এসেই লিখে ফেলব দারুন এক ভ্রমন কাহিনী।
…
(১)
ইদানিং মজার একটি বিষয় নিয়ে খুব শোরগোল শুরু হয়েছে দেশের সবক’টি পর্যায় থেকে। বিষয়টি আর কিছু নয়, নাস্তিক্যবাদ। তবে যারা এটিকে নিজেদের মতো করে উদ্দেশ্যমূলক নাড়াচাড়া করছেন, তা যে খুব খারাপ অর্থেই বা লক্ষ্য নিয়ে করছেন এটি বলার অপেক্ষা রাখে না। তাঁদের বক্তব্য-বিবৃতি শুনে মনে হয়, কোন সংক্রামক ব্যাধির মতোই নাস্তিক্যবাদ নামের অতি জঘন্য একটি জিনিসের দ্রুত প্রাদুর্ভাব ঘটে এই দেশ এই জাতি বুঝি রসাতলে ডেবে যাচ্ছে। সত্যি কি তাই ?
রাবেয়া আখতারঃ
গার্মেন্টসের চাকরীটা চলে গেছে গতমাসে। জমানো টাকা প্রায় শেষ। নতুন এক জায়গায় চেষ্টা করছিল কদিন ধরে। আজকে যোগ দেবার কথা। ৩ বছরের ছোট ছেলেটাকে পাশের ঘরে রেখে বেরিয়েছিল। মাঝপথে বাসটা হঠাৎ চাকায় তীব্র আর্তনাদ করে থেমে গেল। বাসের উপর একের পর এক ইট এসে পড়তে লাগলো। যাত্রীরা আতংকিত। প্রাণ নিয়ে বেরিয়ে পড়ছে। চালক জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে পালিয়েছে। বাসের সবগুলো জানালা ভেঙ্গে ফেলেছে। ইটের আঘাতে বেশ কজন আহত। পেছনের জানালা ভেদ করে এটা ইটের টুকরো তার মাথায়ও এসে পড়লো। মাথা ফেটে রক্ত পড়ছে। বাসের মধ্যে আগুন দেখা গেল। কোনমতে লাফ দিয়ে পড়লো বাস থেকে। ফাটা মাথা নিয়ে আধখানা জীবন নিয়ে দৌড়ে পাশের ফুটপাতে হুমড়ি খেয়ে পড়লো। আর কিছু মনে নেই। রাবেয়ার ফাটা কপাল জোড়া লাগতে মাস খানেক লেগেছে। আসলে জোড়া লাগেনি। স্বামী পরিবার সহায়সম্বলহীন রাবেয়ার চাকরীটা পাওয়া হয়নি। মাথার চিকিৎসা করাতে গিয়ে জমানো টাকা শেষ। ছেলেটার জন্য দুধ কেনা হয়নি এই এক মাস, আর কখনো কেনা হবে কিনা জানে না সে। জমানো টাকা শেষ হয়ে কর্জের শুরু। এরপর ভিক্ষা করতে হবে, নইলে শরীর বেচতে হবে। কোনটা সহজ রাবেয়া এখনো জানে না।
আমাদের এখানের বাসার ভিউ খুব সুন্দর। সামনে বড় লন, সুমিংপুল, বাচ্চাদের প্লে গ্রাউনড!
ফেব্রুয়ারী মাসটা কেটেছে কেমন একটা ঘোর লাগা আনন্দে, উত্তেজনায়। আমরা পেরেছি। আমরা উচ্চকন্ঠে সবাই মিলে নিজেদের দাবী প্রকাশ করেছি। আমি থেকে প্রত্যেকটা মানুষ আমরা হয়ে গিয়েছি। প্রতিদিন এই আমরা একটু একটু করে আরো বড় হয়েছি। রাস্তায়-ঘরে-ক্লাসে-ব্লগে-ফেসবুকে সবাই একই কথা বলেছি। সবাই মিলে একই স্বপ্ন দেখেছি। বিয়াল্লিশ বছরের কলঙ্কমুক্তির স্বপ্ন। সবার ভেতরে দেখেছি অন্যরকম এক আত্মবিশ্বাস, প্রত্যয়ে দেখেছি
-তোমাকে তো আজকাল পাওয়াই যায় না। ফোন ত করোই না আমি করলেও ধরনা। মোবাইল বাজতেই থাকে। কি করছ আজকাল?
-ক্লাস থাকে। সামনে পরীক্ষা...তার মধ্যে চলছে শাহবাগ...এই জন্যেই আরকি।
-শাহবাগে যাও তুমি?
-যাই তো। না গেলে কি ভাবে হবে? যুদ্ধপোরাধীদের পার পেয়ে যেতে দেয়া যাবে না।
এই হল আমার মেডিকেলে পড়ুয়া ছোট ভাইয়ের অবস্থা। সে রাজাকারের বিচারের দাবীতে শাহবাগ যায়। স্লোগান দেয়।
ওর আরেকটা পরিচয় ছোট্ট করে বলে রাখি.....ও একজন কোরআন এ হাফেয। সমস্ত কোরআন শরীফ বুকে ধারণ করেই সে শাহবাগে যায় এবং "ফাঁসি চাই" বলে স্লোগান দেয়।
-শাহবাগে নাকি অনেক আজেবাজে কিছু হয় আর মানুষ নাকি শব ফটোশপে বসানো?
-কে বলল উল্টাপাল্টা?
-ফেসবুকে দেখি আর আমার দেশের মাহমুদুর রহমানের টেলিফোনের লিক হওয়া কথায় জানলাম।
-আমি তো অতসব জানিনা। যতটুকই সময় পাই শাহবাগে যেয়ে স্লোগান দিয়ে আসি। আমি তো ওখানে লাখ লাখ মানুষ দেখি মহাসমাবেশে। ফেসবুক দেখার সময় ও পাইনা।
শাহবাগ আন্দোলনের স্ফূলিঙ্গের জন্ম ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ থেকে। তারপর তা দাবানল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সমস্ত বিশ্বের বাংলাদেশীদের মাঝে।