…
১.০
বিগত মেলাগুলোর সাথে এবারের বইমেলার যে বাহ্যিক পরিবর্তনটা উল্লেখযোগ্যভাবে চোখে পড়লো, বাঙালির এই প্রাণের মেলাটা বুঝি শেষমেষ নিজেকে কর্পোরেট সংস্কৃতির কাছে পুরোপুরি সপেই দিলো। এইটা আমার টাকায় করা, ওইটা আমার টাকায় করা, ওইগুলা আমাদের টাকায় করা, এরকম আগ্রাসী মনোভাব ছড়িয়ে আছে গোটা মেলা জুড়ে স্পন্সরদাতার বিজ্ঞাপন আধিক্যে। এখানেই হয়তো দান বা সহায়তার সাথে বেনিয়াবৃত্তির তফাৎ।
ক্লাস এইটের বার্ষিক পরীক্ষার পর এক ইঁচড়ে পাকা বন্ধু বলছিল এবার ক্লাস নাইনে উঠবো তারপর 'লাইন' করবো। 'লাইন' করা মানে প্রেম করা সেটা শিখলাম ওইদিন। শেখার কোন বয়স নেই। নাইনে উঠে লাইন করার ভাগ্য না খুললেও টেনে উঠে আরেকটা শিক্ষা পেলাম। এবার আরেকজনকে বলতে শুনলাম, কলেজে উঠলে নাকি স্বাধীন। ইচ্ছেমতো ক্লাস ফাঁকি দেয়া যায়। রোলকল করা হয় ঠিকই স্কুলের মতো বেতিয়ে ক্লাস করানো হয় না। যেদিন ইচ্ছে যাবি যেদিন ইচ্ছে যাব
মাঝে মাঝে কিছু দিন আসে, যেদিন সবকিছু ভালোলাগে, এমনকি কড়া রোদে পুড়তে পুড়তে বাসে করে বইমেলা যেতেও ভালো লাগে, রোদে পড়লে মাথা ধরে, সেই মাথাব্যথাও ভালো লাগে।
আজকে এমনই একটা ভালোলাগা দিন এসে পড়লো আমার হাতে। কি করি কি করি ভাবতে ভাবতে বাসে উঠে হাজির হয়ে গেলাম বইমেলায়।
সকাল দশটা দশ মিনিট
মাঝে মাঝে যখন হীনমন্যতায় ভূগি, ক্ষমতার লোভ এবং আকাঙ্ক্ষা যখন জেগে ওঠে, তখন মনে হয় সবকিছু ছেড়ে সিয়েঞ্জি ট্যাক্সির ড্রাইভার হয়ে যাই। প্রায়ই মনে হয়, ঢাকা শহরে ক্ষমতাবান একটা পেশার নাম সিয়েঞ্জির ড্রাইভার। রোদ-বৃষ্টি-মেঘলা আকাশ, শীত-গরম-বর্ষা, সকাল অফিস টাইম, দুপুরের জ্যাম, সন্ধ্যার অফিস টাইম, রাত হয়ে গেছে; সব পরিস্থিতিতে সিয়েঞ্জির ড্রাইভাররা রাজা-বাদশা। ‘যামু না’ বলার জন্য
০১।
যাব যাব করেই বইমেলায় যাওয়া হচ্ছিল না। টার্ম ফাইনাল বা অন্য কোন কারণে না, স্রেফ অলসতার কারণেই এই ফাঁকিবাজি।
যাহোক, মন্দার প্রভাব কাটিয়ে আজ সকালে মনস্থির করলাম, আজ আর না গেলেই নয়। আমার চেয়ে অবশ্য আমার ছোটভাই ফাহাদের আকুলি-বিকুলি বেশি। সে আমাকে একটা লিস্টি ধরিয়ে দিলো। এই লিস্ট অনুযায়ী বই কিনতে হবে। কোন প্রকার আঁতলামি বা অন্য কিছু গর্হিত অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
মেঘ পেরোলেই দেশ
দীর্ঘ ত্রিশ ঘন্টা প্লেনে কাটিয়ে আমার অবস্থা পারলে দরজা খুলে নেমে যাই, এমন সময় প্লেন পৌঁছাল ঢাকার উপরে, অবশ্য তাল তাল মেঘের আড়ালে কিছু দেখার উপায় নেই। শীতের সকালে পুকুরে ঝাপ দিতে গিয়ে ইতস্তত বালকের মত প্লেনটা বার কয়েক সাঁ করে একটু নেমেই আবার উপরে উঠে যাচ্ছিল। একটু পর পাইলটের ঘোষণা, “লো ভিজিবিলিটির জন্য আমরা এখনি নামতে পারছি না, আমাদের কাছে আরো দেড় ঘন্টা উড়ার মত তেল আছে”।
আগুন ঝরানো ফাগুন দিন পেরিয়ে আজ নাকি ভালোবাসা দিবস!! প্রিয়জনের সাথে ফুল প্রেম মিষ্টি উপহার বিনিময়ের মধুর সময়!! শুধু কি মধু? তেতো কিছু নেই? আছে। সেই তেতো কথা বলি। ১৯৮৩ সালের এই দিনে লেজেহোমো এরশাদের টিয়ার গ্যাস-রাইফেল-বন্দুকের ভালোবাসায় রক্তাক্ত হয়েছিল ঢাকার রাজপথ। বলি হয়েছিল কমসে এক ডজন প্রাণ।
দিনকাল ভালই কাটছিল। ঘুমথেকে উঠে মাঝেমধ্যে ইউনিভার্সিটি যাই, দোকানের ঝাঁপি খুলি, কফি-বিড়ি খাই, দুই-চার জন বন্ধুবান্ধবের সাথে গালগল্প মারি, সন্ধেবেলা বাসায় ফিরে টিভি দেখি – লুপটা এই রকমই চলছিল। দেশে থাকতে ভালই ছিলাম, ভালমন্ধ খাইতে পারতাম, এদিক-সেদিক যাইতে পারতাম, আড্ডাবাজির রমরমা দিন আছিলো সেইগুলান। হঠাৎ করে বলা নাই কওয়া নাই, যাদের সাথে গুলতানি মারতাম তাদের সিংহভাগই মেধাপাচারের শিকার হল। কিন্তু আ