নীলিমা,
অনেক দিন পর আজ আবার তোমায় চিঠি লখতে ইচ্ছে হলো।
আজ একটি বিশেষ দিন। গুছিয়ে তোমাকে চিঠি লেখা কেমন জানি কঠিন হয়ে ঠেকছে।
প্রথম প্রথম তোমায় কিছু লিখতে গেলে সব কিছু কেমন এলোমেলো হয়ে যেত।
খেই হারিয়ে ফেলতাম আমি। অনুভূতির ব্যাকরণগুলো কেমন বিব্রত দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে থাকত।
সত্যি বলতে কি - আজো আমি অবিকল আগের মতই। তোমার ভাষায় - 'একদম ছেলেমানুষ তুমি' !
কখনো হেসে খুন করো আমায়, কখনো খেলাচ্ছলে। এমনি চলে গেছে বছরের পর বছর, তবু কেন যেন তোমায় ছাড়া থাকতে পারি না। তোমায় ছোট করে দেখতাম কোন কালে? কখনোই না। কিন্তু তুমি বলছো দেখতাম? নিশ্চয়ই, তবে দেখতাম হয়তো। আমার বাবা-মা কখনো কষ্ট দিয়েছে তোমায়? কি জানি, বাবা-মা তো, তুমি তো তাদের মেয়ের মতোই। তবু বলছো তোমায় তারা কষ্ট দিতো?
কলম দিয়ে লিখিনা বহুদিন। না লিখতে লিখতে আঙুলের গিঁটে গিঁটে মরিচা ধরে গেছে। বাংলা ইংরেজী দুই প্রকার হাতের লেখাই জঘন্য হয়ে গেছে। কখনো একটা পৃষ্টা লিখতে হলেও ঘাম ধরে যায়, আমার লাইন হয়া যায় আঁকাবাকা আর লেখার চাপে ব্যাথাতুর থাকে কনিষ্ঠ আঙুল। স্বাক্ষর করা ছাড়া কলমের কোন কাজ নাই আজকাল। আঙুলগুলো কীবোর্ডের প্রতি এত বেশী নির্ভরশীল হয়ে গেছে যে, দুই আঙুল দিয়ে একটা কলম ধরে লেখার ধৈর্য একেবারে নেই।
বেশিদিন এক জায়গায় থাকলে আমার দমবন্ধ হয়ে আসে, তাই সামার শুরু হতেই চাইছিলাম কোথাও ঘুরতে যেতে। টেক্সাসের ত্রিরত্ন মাহদী, মঈন আর নাফি নিউইয়র্ক, বোস্টন আর ওয়াশিংটন ঘুরতে যাচ্ছে শুনে ল্যাংবোটের মত জুটে গেলাম ওদের সাথে। প্রচন্ড জ্ঞানী(নিরাপত্তার অভাবে আঁতেল ব্যবহার করা গেলো না) মাহদী সবকিছুর পরিকল্পনা কয়েকমাস আগেই করে রেখেছে, এর চেয়ে আদর্শ ব্যাপার আর কিছুই হতে পারে না। আমার শুধু কষ্ট করে নিউইয়র্কে ওদের হোটেল পর্যন্ত যেতে হবে নিজের “লিমিটেড রিসোর্স” বুদ্ধি খাঁটিয়ে।
একেবারেই ব্যক্তিগত রচনা... হুদাই
শিকাগো শহর। উইন্ডি সিটি। ভয়াবহ ঠান্ডা এবং কুৎসিত শীতকাল। সিটি অফ জ্যাজ এন্ড ব্লুজ। মাল্টিকাচারাল মেট্রোপলিটান শহর। আমেরিকার তৃতীয় বৃহত্তম শহর। আমেরিকার পাঁচটি বৃহত্তর লেইকের দ্বিতীয় বৃহত্তম লেইক মিশিগানের তীরে অবস্থিত শহর। এরকম কতধরণের বিশেষণ জানতে পারলাম শহরটা সর্ম্পকে। মুভিংয়ের বিরক্তির পাশাপাশি তাই যুগপদ আগ্রহ ও ভয় কাজ করছিলো।
রাস্তার পাশে এক টং দোকানে সিগারেট কিনছিলাম। পাশে দাঁড়িয়ে আছে দু'জন খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের ঘর্মাক্ত শরীর আর ক্লান্ত চেহারাই বলে দিচ্ছে প্রতিদিনের শ্রমিক তারা। কিন্তু তাদের কথোপকথন কানে আসতেই একটু সতর্ক হলাম, তুলনামূলক অল্প বয়স্ক লোকটি বলছে_
[justify]
'শেষ রোদ এখন মাঠের পরে খেলা করে, নেভে।
ঝাউফল ঝরে ঘাসে...
সেইসব বাসনার দিনগুলো, ঘাস রোদ শিশিরের কণা..
নক্ষত্ররা চুরি করে নিয়ে গেছে, ফিরিয়ে দেবে না তাকে আর।'
#জীবনানন্দ দাশ
______________________________________________
প্রিয় মেহেদী,
আফ্রিকায় সন্ধ্যা
- সুমাদ্রি শেখর।