দুর্যোগের বিরাশি সিক্কার থাপ্পড়ে মানুষের মুখোশ খুলে পড়ে। শুধু দুর্যোগ নয়, শাহবাগ আন্দোলনের মত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সময়ও প্রয়োজনীয় মেরুগুলো প্রস্ফুটিত হয়। একেকটা ঘটনার(Event) প্রসবযন্ত্রনার মধ্য দিয়েই মানুষের জন্ম হয়, মানুষের অন্তরাত্মা পরিপূর্ণ নগ্নতায় অবভাসিত হয়। স্থবির সময়ে আমরা মানুষের যে রুপটা দেখি, তা শুধুই মরীচিকা।
উইকেন্ড, ইয়েএএ।
এত খুশি হবার কিছু নেই, ছুটির দিন মানেই ছুটি নয়। অন্তত এ সপ্তাহে তো নয়ই। আজকে রাত ১১.৫৯, কালকে রাত ১১.৫৯... এরকম আগামি টানা সাতদিন রোজ একটা করে মৃতরেখা, মানে ডেডলাইন আছে আমার। 'বোলগ' লিখতে বসে গেছি দুঃখে, দেখেন না।
১।
সে অনেক অনেক দিন আগের কথা। একমাথা ঢেউ খেলানো এলোমেলো চুলের মেয়েটির বড্ড বকবকানীর স্বভাব। দিনভর তার অনাবশ্যক মুখরতায় সবার ক্লান্তি আসে। মা-ঠাম্মা বলেন, সে কথা বলতে শেখার পর থেকে শুধু কথা বলে যেতেই শিখেছে, চুপ থাকতে শেখেনি একটুও। ঠাম্মা বলেন, বালিকার বাস কথার রাজ্যে, তাই ওকে চুপ করে থাকা শেখানোর চেষ্টা করেও লাভ নেই কোন। বালিকা কিন্তু আসলেই চুপ থাকতে চায়, ঝামেলা বাঁধায় গল্পগুলো। শহর থেকে বাড়ি আসবার সময় মায়ের জন্য বাবার কিনে আনা লাল পেড়ে সুন্দর শাড়ীটার গল্প, বড়দি-দাদার বইয়ের 'কাজলা দিদি'র গল্প, রোজ সন্ধ্যায় 'ঠক্কে' বলে ডেকে ওঠা বাড়ীর সামনের আঙিনায় বুড়ো অশ্বত্থের কোটরে লুকানো সেই তক্ষকের গল্প; আরো কত কত...। সেসব গল্প সবাইকে না বলে তার চলতে চায় না একটুও,পেটের মধ্যে এত্ত কথা জমিয়ে রেখে তার ঘুম-খাওয়া-খেলা কিচ্ছু হতে চায় না। কিন্তু তার কথা শোনার মত নিঃসংশয় এবং আগ্রহী শ্রোতা তার মেলেই না দিনভর। সে অপেক্ষায় থাকে, সন্ধ্যের।
[justify]০.
বিংশ শতাব্দীতে মানুষের শোকের আয়ু বড়জোর এক বছর। নাজিম হিকমতের কথা। হয়তোবা মানুষ ভুলে যায় এক বছরের মাথায় তার শোকার্ত সময়কে। কিন্তু একুশ শতকে শোকের আয়ু কত বছর, কত দিন? এই ফেসবুক জামানায়, যখন মিনিটে মিনিটে বদলে যায় হোম পেইজ, নিজের দেয়াল!
১.
অভিজিৎ হত্যার এক মাসের মাথায় ঢাকার রাস্তায় লেখালেখির কারণে আবারো খুন হলেন একজন অনলাইন লেখক। নিহত মোঃ ওয়াশিকুর রহমান বাবু সাম্প্রতিক সময়ে ফেইসবুকে লেখালেখি করতেন। তিনি সামহয়ারইন ব্লগেও একসময় লিখতেন। হত্যার ধরণ ও কৌশল অভিজিৎ
চামচঠুঁটো বাটান একটি মহাবিপন্ন পাখি, সারা পৃথিবীতে এদের সংখ্যা একশ জোড়ারও কম। সাইবেরিয়ার ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা তোলা এই ক্ষুদের বিস্ময়কর পাখিটি শীতকালে পরিযাজন কালে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার সৈকতের কাদাচরে চলে আসে। নামেই বুঝছেন যে এর ঠোঁটটি অতি অনন্য, ছোট্ট একটি চামচের মত, যার মাধ্যমে কাদাচর থেকে খাবার ছেঁকে নেয়। মহাবিপন্ন পাখিটিকে রক্ষার জন্য এখন সচেতন হয়ে উঠেছে কিছু মানুষ, তাদের বিলুপ্তির হাত থেকে ঠেকানো
সেই সব দুপুরগুলো মোটেও তার ছিলো না, সেগুলো ছিল মায়ের দুপুর। সেই দুপুরের সবার খাবার শেষ হলে, থালা-বাটি গুছিয়ে রেখে মা দ্রুত এসে শোবার ঘরের বিছানার কোনে ছোট্ট টেবিলে রাখা এন্টেনা ভাঙা রেডিওটার দখল নিতেন। রেডিওকে তখন রেডিও বলতো না কেউ, বলা হতো ট্র্যাঞ্জিষ্টর। মা সাত সকালে স্নান সেরে লক্ষ্মী পূজো আর রান্নার শুরুর তাড়ায়, ভিজে অবস্থায় খোঁপায় বেঁধে রাখা প্রায় হাঁটু সমান লম্বা চুল ছেড়ে দিয়ে বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসতেন। তারপর ট্র্যাঞ্জিষ্টরের নব ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মা আকাশবাণী কলকাতা খুঁজে বের করতেন, উদ্দেশ্য রবিবার দুপুরের নাটক। তাকে মায়ের পাশে শুয়ে থাকতে হতো। শাওলি মিত্র, শম্ভু মিত্র এদের অতো অতো গুরুগম্ভীর সংলাপের কিচ্ছু কি সে বুঝতো! তার গোটা দুপুরটাই পণ্ড হতো সেদিন। তবে নাটক শোনায় মগ্ন মায়ের নাটকের সাথে একাত্ম হয়ে যাওয়াটা দেখতে তার খুব ভালো লাগত। মায়ের মুখে রাগ, অনুরাগ, আনন্দ, বেদনা কতো কতো অনুভব আঁকিবুঁকি কেটে যেতো। মাকে তখন কোন প্রশ্ন করলে মা খুব রেগে যেতেন। কথা না বলে দুর্বোধ্য নাটকের না বোঝা সংলাপ শুনে একটি ঘণ্টা সহজে কাটতে চাইতো না। তার সেদিন মন খারাপ, তার সেদিন বন্দী দশা।
অভিজিত হত্যার ঘটনার পর আমি শিক্ষিত মুসলমানদের মধ্যে দুটো পক্ষ দেখতে পেলাম। দুটো পক্ষের সাথে আমার যা কথোপকথন তার মধ্যে আমি দুটো আলাপের বিবরন দেবো এখানে।
প্রথম পক্ষ কঠোর মুমিন। প্রশ্ন রাখলো, "আল্লাহ ও নবীকে নিয়ে কুৎসিত প্রচার কি মুক্ত মনের পরিচয়? সেরকম কেউ করলে তাদেরকে আঘাত করাটা কি খুব বেশী অন্যায়?"
শুক্রবার সকালে আউট পেশেন্ট ক্লিনিক, বসে বসে অনেক কিছু ভাবছিলাম। অন্য দিনের চেয়ে আজ স্কেজুল বেশ হালকা। গত কয়েক দিন প্রচণ্ড শীত পড়ায় অনেক রুগী শেষ মুহূর্তে এপয়নমেন্ট ক্যানসেল করেছেন। খুব ধীরে সুস্থে সবাইকে দেখছি আজ। শেষ রুগীটি প্রথমবারের মতো আমাকে দেখাতে এসেছেন। তার সাথে কথাবার্তা শেষ করে ল্যাব স্লিপ লিখছি, তিনি হঠাৎ জানতে চান,
-ডক, তুমি কোন দেশের?
আমেরিকার শ্বেতাঙ্গ প্রধান ছোট্ট এই শহরতলীর অনেক রুগীকেই আমার তামাটে গায়ের রং, ঘন বাদামী চুল, এবং বিশেষ টানযুক্ত ইংরেজী উচ্চারণ খুব কৌতূহলী করে তুলে, বুঝতে পারি। অনেকে ভদ্রতা করে জিজ্ঞেস করেনা না। আবার অনেকে প্রথম দিন-ই জিগ্যেস করে ফেলেন। আমি পাল্টা জানতে চাইলাম,
-তোমার কি মনে হয়? ও একটু ভেবে বলে,
-ইন্ডিয়ান
-না, আমি ইন্ডিয়ান না।
কোন সময়ে কোন কথা বলতে হবে বা হবে না'র হিসাব করতে করতে সব থেকে জরুরি কথাগুলোই শেষ পর্যন্ত বলা হয়ে ওঠে না। ছাপা মাধ্যম/নেট মাধ্যম সব জায়গাতেই "সঠিক সময়" নির্ণয়ের গণিত নিয়ে প্রবল কামড়াকামড়ি চলে। যারা এই অতি বিতর্কিত "সঠিক সময়ের" তোয়াক্কা না করে নিজ বিচারে সঠিক কথাটা বলে ফেলতে পারেন, তাঁদের কথাগুলিই শেষ পর্যন্ত বলা হয়। অভিজিৎ সেরকমই একজন। সব থেকে বড় কথা, যাকে আঘাত করতে তিনি কলম চালিয়েছেন ঠিক তাঁকেই ত