সেই ছোট্টবেলা থেকেই শুনে আসছি যে দেশে 'সাইন্সের স্টুডেন্ট' এর সংখ্যা নাকি বাড়ছেই! কারণ 'সাইন্সে' পড়লে সব সাবজেক্টেই সুইচ করা যায়, তাই অনেক চাকরিও পাওয়া যায়!! কী আনন্দ!!! কিন্তু আনন্দটা বিষাদে পরিণত হল বড় হয়ে যখন জানতে পারলাম সংখ্যায় কিছুটা বাড়লেও বিজ্ঞানপড়ুয়াদের অনুপাত দিনদিন আসলে কমে যাচ্ছে। এরকম একটা বাস্তবতাতেই দু'হাজার বারোতে কাজ শুরু করে 'শিক্ষা দেশের জন্য'।
মাঝে মাঝে স্মৃতিরা ভিড় করে। বিষণ্ন হয়ে হয়ে ওঠে মন। শৈশব-কৈশোরের রঙিন জীবন হাতছানি দেয়। কিন্তু সময়কে তো আর পেছনো যায় না। তাই বর্তমানে বসেই অতীতকে খোঁজার মধ্যেও আলাদা সুখ। আর এই সুখের আশাই আমি সেলফোনটা হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াই গাঁয়ের মাঠে, নদীর ঘাটে, ঝোপে-জঙ্গলে। কিশোর বেলার বন্ধুদের কারও সাথে দেখা হয়ে গেলেই ক্যামেরা বন্দি করে ফেলি।
ইট-পাথর ঘেরা ঢাকা শহর নাভিশ্বাস তুলে দেয় মাঝে মাঝে। মন ছুটে যেতে ছেলেবেলার গল্প শোনার দিনগুলিতে। যেখানে স্মৃতির ওপারে আছ তেপান্তরের মাঠ, আমার খুব প্রিয় ফুলের একটা মোরগফুল।
০১।
দেশের তথাকথিত বহুদলীয় গণতন্ত্রের এই বিভেদসঙ্কুল পরিস্থিতিতে আজকে সবাই রাজনীতিবিদদের গুষ্টি উদ্ধার করতে ব্যাস্ত। এমন পরিস্থিতিতে বিজ্ঞানীরা একদলীয় বলি কি করে? আদতে তারা তা ননও বটে। তত্ত্ব-পরীক্ষন-প্রয়োগ সবমিলিয়ে বিজ্ঞানীরা বরাবরই বহুধাবিভক্ত। তবে সে বিভক্তির জন্য তারা এক দল আরেক দলকে পেটাতে কিংবা ককটেল মারতে যান না অবশ্যই। এখানেই বিজ্ঞানের সৌন্দর্য। আর পটভূমি যেহেতু কোয়ান্টামের রাজ্যের, আজ শোনাব কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিয়ে বিজ্ঞানীমহলের ত্রিধাবিভক্তির গল্প।
এ বছরের শুরুর দিকে স্বল্প ব্যয়ে সুস্বাস্থ্য সম্পর্কে বিভিন্ন দেশের কেস-স্টাডি নিয়ে সিরিজ লিখতে গিয়ে দিনা বালাবানোভা এবং তাঁর সহকর্মীরা উপসংহার টেনেছেন, “বাংলাদেশ স্বাস্থ্যখাতে প্রভূত উন্নতি করেছে। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়াতে বাংলাদেশেই সর্বাধিক গড় প্রত্যাশিত আয়ু, সর্বনিম্ন ফার্টিলিটি-রেট এবং সর্বনিম্ন শিশু-মৃত্যুহার, যদিও প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় তুলনামূলকভাবে কম।
০১।
আজকে দিকে দিকে আলোর মিছিল দেখে মনে পড়ল, আলোর গল্পটা পুরো শেষ হয় নি। আগের পর্বে ইলেকট্রনের ওঠানামায় কি করে আলো বের হয়, কিংবা আলোর গুঁতোয় কি করে ইলেকট্রন (জামায়াত শিবিরের মত) দৌড়ের ওপর থাকে সেই গল্প শুনিয়েছিলাম। হেলাল হাফিজের “নিখুঁত স্ট্রাটেজী” ছিলঃ ‘পতন দিয়েই আজ ফেরাবো পতন।’ দিনকাল যে পড়েছে, এমন নিখুঁত হতে প্রস্তুত থাকা দরকার। যাহোক, আপাতত আমার স্ট্রাটেজি হল “আলোক দিয়েই আজ বাড়াব আলো” এই গল্প বলা। বিজ্ঞানের খটোমটো গল্প ভেবে এড়িয়ে যাবেন না যেন।
০১।
“সম্ভাবনা” একটা বিটকেল জিনিস। এ বস্তুর জন্ম হয়েছিল জুয়ো খেলায় হারজিতের আগাম হিসাব করতে। অথচ, কে ভেবেছিল- এ জিনিস একদিন পদার্থবিজ্ঞানের মতন ভাবগম্ভীর একটা বিষয়ের সবচেয়ে আকর্ষনীয় অংশের সঙ্গী হবে! দুনিয়া অদ্ভুদ! আগে পদার্থবিজ্ঞান যখন বড় বড় জিনিসের হিসেবপত্র করত তখন তার ভাষ্য ছিলঃ “হবেই হবে”। আর, পরমানুর এই এত্তটুকুন ফ্লাটবাড়িতে এসে তা পালটে হয়ে গেলঃ “হতে পারে”। কোয়ান্টাম মেকানিক্স যখন বিংশ শতকের প্রথম দিকে একটু একটু করে তৈরি হচ্ছিল, তখন তাঁর রথীমহারথী দের প্রায় সবার বয়স ছিল ২২ থেকে ২৫ বছর। যুগটাকে ঠাট্টা করে বলা হয় “বালকদের পদার্থবিজ্ঞান”। সেই সময়, আরভিন শ্রোয়ডিঙার নামে এক আধবুড়ো (তখন তাঁর বয়স প্রায় ৪০) অস্ট্রিয়ান, এই “হতে পারে” টাকে পদার্থবিজ্ঞানের উপযোগী করে একেবারে গনিতের খাঁচায় বেধে ফেললেন। সেই সঙ্গে তাঁর নামটাও বাঁধা হয়ে গেল কোয়ান্টাম মেকানিক্সে। এখনও স্নাতক পর্যায়ের পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র থেকে পরমাণু-পদার্থবিজ্ঞানী সবাইকে শ্রোয়ডিঙারের এই কীর্তি আয়ত্ব করে তবেই এগুতে হয়। খবর্দার, কোনও পদার্থবিদের সঙ্গে বাজী ধরতে যাবেন না যেন।
১।
কোয়ান্টামের রাজ্যে রাজা আছেন অনেকজন। তারমাঝে রহস্যের রাজা ছিলেন জর্মনদেশী ভার্নার হাইজেনবার্গ। আইসবার্গের গুঁতোয় টালমাটাল হয়ে টাইটানিক যেমন ডুবেই যায়, হাইজেনবার্গের গুঁতোয় চিরচেনা বিজ্ঞানের জাহাজখানাও হঠাৎ টলমল করে উঠেছিল বৈকি। তবে বিজ্ঞানীরা তাকে ডুবতে দেননি। বাস্তবকে তাঁরা বাস্তব বলেই মেনে নিয়েছেন। আর এই বাস্তবতার নাম ‘অনিশ্চয়তা’।