লেখাটির ছোট্ট একটা ভূমিকা দিতে হবে। এই লেখাটি পড়ুয়াদের ২০১৫ আহবানকে সাড়া দিয়ে লিখেছি। কিন্তু সে অর্থে কোন রিভিউ নয়। সন্দেশের আহবানের সূত্রে অনেকদিন পর আবার লেখা হল। আর সেই সাথে যদি তরুণ প্রজন্মের ছোট একটা অংশকে খানিকটা প্রভাবিত করা যায় সেটি হবে বাড়তি পাওনা।
শীতের সকালের জমাট কুয়াশা ভেদ করে রোদ ঝলমল করতে দশটা বেজে যায়। সুতরাং আমাদেরও বেরুতে হলো বেশ বেলা করেই। ইছামতীর আঁকাবাঁকা গতিপথকে অনুসরণ করে বয়ে গেছে প্রশস্ত মেঠোপথ। খালাতো ভাইকে সাথে নিয়ে চলেছি মাঠপানে, পাখির খোঁজে। মাঝপথে এক চাষি ভাই শামখোলের খবর দিলেন। শামুকভাঙার দলটি নাকি আস্তানা গেঁড়েছে ইছামতীর তীরে। আমাদের এলাকায় শামখোলকে মানুষ শামুকভাঙা বলে। ছোটবেলায় দূর আকাশে উড়ন্ত শামুকভাঙা দেখেছি বহুবার। গ্রামের বিলে নাকি শামুকভাঙা থাকে। অতদূরের রাস্তা ভেঙে দেখতে যাওয়া আর হয়ে ওঠেনি। তাই সামন-সামনি দেখার সুযোগ পাইনি। এতদিনে পেলাম।। এসময় ইছামতীর পানি হাঁটুর নিচে নেমে যায়। তাই ওদের পর্যপ্ত খাবার মিলবে।
[justify]"Time, you old gipsy man,
Will you not stay,
Put up your caravan
Just for one day?"
শহরের বাইরে গিয়েছিলাম। ফিরতি পথে এক বিমানবন্দরে লম্বা বিরতি। লাঞ্চ সারলাম, অনেক সময় ধরে বাথরুম সারলাম, দুই-একটা কাজের ফোন সারলাম, মেয়েদের সাথে ডু-ইউ-সি-হোয়াট-আই-সি খেললাম, এরপরও দেখি স্টপওভারের সময়টা শেষ হচ্ছে না। এর মধ্যে ফ্লাইটও ডিলেইড হয়েছে। শেষমেষ একটা ম্যাগাজিন স্টলে হানা দিলাম। হালকা কিছু কিনে বাকি সময়টা কাটিয়ে দেব।
মহাজাগতিক দৃষ্টিকোণ থেকে আজকের দিনটা আন্তর্জাতিক মানের একটা নিরপেক্ষ দিন। কি, ঘাবড়ে গেলেন বুঝি? আরে নাহ। আসিফ নজরুল গং মহাজাগতিক কোনও হতাকর্তা হয়ে বসেন নি। এটি নিতান্তই একটি প্রাকৃতিক ঘটনা, প্রকৃতির বাৎসরিক রুটিন ওয়ার্ক। অলৌকিক কিছু ভেবে যারা নড়েচড়ে বসেছিলেন তারা কাছা টাইট দিন।
এই সিরিজটি ইউভাল নোয়া হারারি রচিত Sapiens: A Brief History of Humankind এর ধারাবাহিক অনুবাদ।
সত্যি বলতে কি, সেপিয়েন্স ও নিয়ান্ডারথালের মধ্যে প্রথম যে লড়াইয়ের ব্যাপারে জানা যায়, সেখানে নিয়ান্ডারথালরা জয়ী হয়েছিল। প্রায় ১০০,০০০ বছর পূর্বে, কিছু সেপিয়েন্স দল আফ্রিকা ছেড়ে উত্তরের লেভান্তে (আজকের দিনের লেবানন, জর্ডান, ইজরায়েল) পাড়ি দেয়, যা ছিল নিয়ান্ডারথাল রাজ্য। কিন্তু সেখানে ওরা শক্ত খুঁটি গাড়তে পারে নি। এর পেছনে সেখানকার হিংস্র অধিবাসী, রুক্ষ জলবায়ু কিংবা স্থানীয় কোনো পরজীবীর হাত থাকতে পারে। তবে যে কারণই এর পেছনে থাকুক না কেন, সেপিয়েন্সরা অবশেষে পিছু হটতে বাধ্য হয় এবং নিয়ান্ডারথালরা রয়ে যায় মধ্যপ্রাচ্যের হর্তাকর্তা।
আষাড়ে ঝমঝম বৃষ্টি নামে। মাঝে মাঝে মেঘের পর্দা সরিয়ে উঁকি মারার চেষ্টা করে সূয্যিমামা। কখনও চেষ্টা ব্যর্থ, কখনওবা সফল। টানা বৃষ্টিতে মজাই লাগত আমাদের। স্কুল কামাই করার জন্য বৃষ্টি বিশাল এক ছুতো। কিন্তু প্রকৃতিও বোধহয় মা-বাবার পক্ষে থাকত। ঠিক দশটা বাজার আগে থেমে যেত বৃষ্টি। ছাতা হাতে ধরিয়ে স্কুলে ঠেলে পাঠাতেন মা। বৃষ্টিকে গালিগালাজ করতে করতে পথে জমা পানিতে পা ডুবিয়ে স্কুলে যেতাম। স্কুলের খেলার মাঠে পা দেওয়ার সাথে সাথে বৃষ্টির প্রতি সেই ক্ষোভ অভিমান কোথায় ধুয়ে মুছে যেত! আমাদের মতো শিক্ষকেদেরও তো আলস্য আছে। তাছাড়া বেশিরভাগ শিক্ষকই ভিনগাঁয়ের। তাঁদের আসতে দেরি হত। হয়তো বা সেদিন আর আসতেনই না। আমরা তখন ফুটবল নিয়ে নেমে পড়তাম মাঠে। বৃষ্টিধোয়া মাঠে তখন চোরকাঁটার বান ডেকেছে। গোটা মাঠটাই ভরে উঠেছে গ্রামীণ এই ঘাসফুলের গালিচায়।
ঘাসফুল নিয়ে মানুষের মাতামাতি কম। তবে কিছু কিছু ফুল সত্যিই দেখার মতো। আর কিছু ঘাসফুল মানুষের দৃষ্টিই কাড়তে পারে না। তবে কিছু ঘাসফুল আবার একেবারেই আলাদা। চেহারা দিয়ে নয়, গুণ দিয়ে মানুষের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়। কেশড়ের ফুলের আলাদা সৌন্দর্য নেই। আবার একেবারে অবহেলিত সে নয়। সব মানুষ তাকে চেনে তার গুণের জন্য। অবশ্য সেই গুণ এখন আর তেমন কাজে লাগায় না। ছোটবেলায় রোদে ঘোরাঘুরি করতাম খুব। চুল লাল হয়ে যেত রোদে পুড়ে। সবাই বলে, চুলকটা হয়ে গেছে। শুধু আমার নয় বন্ধুদেরও একই অবস্থা।
৪ জুলাই ২০১৫
প্লুটোগামী মহাকাশযান ‘নিউ হরাইজন্স’ এর পৃথিবীর কন্ট্রোল রুমে টানটান উত্তেজনা। মিশন প্রধান এলান স্টার্ন পায়চারী করছেন চিন্তিত মুখে – বেশ ক’ মিনিট হয় মহাকাশযান থেকে কোন সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছেনা। তবে কি সাড়ে নয় বছর ধরে তিন বিলিয়ন মাইল পাড়ি দিয়ে এই ছিলো কপালে? আর সাড়ে ছয়শ’ মিলিয়ন ডলার অনুদান? তার শেষমেষ এই পরিণতি? তীরে এসে তরী ডোবার কি এর চেয়ে ভালো কোন উদাহরণ হতে পারে?
কাঁচা ঝাল হিসেবে একটা জিনিসই ব্যবহার করতাম পটপটির ফল। যার ভালো নাম রুয়েলিয়া। রুয়েলিয়ার ফল নিয়ে ছিল বিরাট আগ্রহ। কাঁচা পাকা দুই রকম ফলেই আমাদের আগ্রহ। কাঁচা ফল দিয়ে বানাতাম কাঁচা মরিচ। তবে বলে রাখি, রুয়েলিয়র ফল কিন্তু মোটেও ঝাল নয়। তবু কল্পনার রঙে তাকে ঝাল বানাতে আপত্তি কোথায়!
রুয়েলিয়া বুনো গুল্ম, একেবারে দুষ্প্রাপ্য নয়। কিন্তু তবুও এর ফল সহজে পাওয়া যেত না। কারণ ওগুলো সাবাড় করার জন্য আমাদের মতো ছেলেমেয়ের অভাব ছিল না। ফল আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও ফুল নয়। ফুল দেখতে সাদামাটা। অবশ্য সেটা কিশোর চোখে। আজ চোখ বদলেছে। তাই রূপ বদলেছে রুয়েলিয়ার ফুলেরও। রীতিমতো মুগ্ধ করার মতো এক ফুল।
বর্ষায় বান ডাকে প্রকৃতিতে। ব্যাঙের ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ শব্দের সাথে তাল মিলিয়ে অঝরে ঝরে বৃষ্টি। সবুজে সবুজে ছেয়ে যায় প্রকৃতি। ভাঁট-আশশ্যাওড়ার দাপট পথের দুধারে। আকন্দ তো সারা বছরই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে বেগুনি সাদা ফুলের গয়নায় সেজে। বনওকড়ার চারা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে সবুজের মিছিলে। কিন্তু কিছু উদ্ভিদ একেবারে নীরবে-নিভৃতে চুপটি করে মাথা তুলে দাঁড়ায় সবুজের কোন্ গহীন কোণে। অনাদর অবহেলায় কখন বেড়ে ওঠে তার হদিস রাখে না কেউ। কিন্তু প্রয়োজন হলেই খোঁজ পড়ে। ওষুধ বানাতে হবে না! এখন তো ওদের বড্ড কদর।