সাভারের ব্যাঙ্ক কলোনির দেয়ালগুলো ভরে গেছে 'সন্ধান চাই' বিজ্ঞপ্তিতে। অসংখ্য ছবি, নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর...। বৃষ্টিতে কতগুলোর লেখা মুছে গেছে, ছবি ঝাপসা হয়ে গেছে। রঙিন ছবি, সাদাকালো ছবি... পাসপোর্ট সাইজের ছবি, স্টুডিওতে কোট টাই পরা হাস্যোজ্জ্বল ছবি, পিকনিকে বন্ধুদের ছবি থেকে কেটে আলাদা করা ছবি... কতগুলো প্রাণ, হাসি, আনন্দ, উচ্ছ্বলতা, সম্ভাবনা...
আমরা মানুষ গুনি, কেউ গোনে ভোট!
প্রথম দুইটা দিন খুব স্বাভাবিক ছিলাম। বলতে গেলে একটু বেশিই স্বাভাবিক। এতো সব মন খারাপ করা খবরেও পেশাগত কাজে কোন বাধা পড়ে নাই। বাড়তি দায়িত্ব হিসেবে কাজ কিছু করতে হইছে। স্বাভাবিকভাবেই । খুব একটা ঝামেলা হয় নাই। যা করার, যদ্দুর করার, যেইভাবে করার- করার চেষ্টা করেছি। গত কয়টা বছরে আমাকে এইরকমভাবেই ট্রেইন আপ করা হয়েছে। শারীরিক ভাবে, মানসিকভাবেও । একজন প্রফেশনাল হিসেবে এইসব ব্যপারে এখন আর কোন প্রতিক্রিয়া
ইংল্যান্ডের সাউথশিল্ড শহর থেকে আমার বন্ধুরা যখন কাজের সন্ধানে নিউক্যাসেলে চলে যায়, তখন আমি বেশ অসুবিধায় পড়ে যাই। সাউথশিল্ড ছোট শহর, চট করে ব্যাচেলারদের জন্য রুম ভাড়া পাওয়া যায় না। আমার আশ্রয় হয় এক বাংলাদেশী রেষ্টুরেন্টের উপরে একটি ঘুপচি রুমে। এক পাশে রেষ্টুরেন্টের মালপত্র,অন্যপাশে তোষক পেতে আমি ঘুমাই। সেই রুমে কোন জানালা ছিলো না। ডিম লাইটের কোন ব্যাবস্থা নাই। রাতের বেলা আলো নিভিয়ে দিলে ঘুটঘুটে অন্
এ এক অসহনীয় অবস্থা! হাজার মেইল দূরে বসে কিছু করতেও পারছি না, সাভারের এক একটি ছবি দেখে, সংবাদ পড়ে সহ্য করতে পারছি না এত কষ্ট, আবার এইসব সংবাদ থেকে নিজেকে স্বার্থপরের মত দূরে সরিয়ে রাখতেও পারছি না। কেবল মনে হচ্ছে মস্তিষ্কে চিরকালের মত গভীর দাগ পড়ে যাচ্ছে, ঐ নূপুর পড়া পায়ের ছবি, ঐ মৃত যুগলের ছবি জীবনে আমি মাথা থেকে মুছতে পারব না। গোল্ডফিশের মত ২ সপ্তাহ বাদে রানা প্লাজার নাম ভুলে গেলেও বহু বছর বাদেও দুঃস্বপ্নে ওরা এসে ঠিক ঠিক হানা দিয়ে যাবে। হয়তো কিছুটা মনুষ্যত্ব এখনো ধরে রেখেছি বলেই এই ভোগান্তি। রাজনীতির নানারকম গদিতে বসে থাকা অবিশ্বাস্য রকমের পিশাচ হলে হয়ত এই যন্ত্রনা হতো না।
ফেরেশতা তুই, না পরী,
তা হয়নি কারো জানা,
ছোট্ট মানুষ, ক্যান এলি তুই?
কেউ করেনি মানা?
কীসের এত বল তাড়া তোর?
বল কীসে তোর ভাল?
মায়ের আধার সইল না আর?
চাইলি এতই আলো?
অন্ধকারের আড়াল ঘেষে
এই যে তোরা এলি-
ঘুমোয় মা তোর, কাঁদছে খালা,
বল না কী আর পেলি?
ভাবিস কেঁদে চোখ ভাসাবি,
মিলবে সবই তাতে?
ছোট্ট রে তুই, বুদ্ধি কোথা?
নেই কিছু তোর হাতে-
নেই বিছানা, নেই বালিশ আর
নেই মশারী, কাপড়,
ধর চিকা মার চিকা
চিকার দাম পাঁচসিকা
১.
ছোটবেলায় এই ছড়াটা খুব শুনতাম। নিজেও বলতাম। তখন বাড়ির আশেপাশে এখানে সেখানে প্রচুর ইঁদুর আর চিকা হতো। কৈশোরের উন্মাদনায় পিটিয়ে চিকা মারতাম আর এই ছড়াটি বলতাম, "ধর চিকা মার চিকা, চিকার দাম পাঁচসিকা"।
কিন্তু চিকার দাম পাঁচসিকা কেন? চিকা কি কেউ কেনে? চিকা ধরা বা চিকা মারার সঙ্গে পাঁচসিকার সম্পর্ক কী?
জানতাম না।
আজ সকালে খুব অদ্ভুতভাবেই ঘুম ভেঙ্গেছিল, টেক্সটের শব্দে। ঘুম ঘুম চোখে দেখলাম এক ক্লাসমেট বাংলাদেশের খবরটা বিবিসিতে দেখে উৎকণ্ঠা জানিয়েছে, জানতে চেয়েছে দেশে আমার পরিবার নিরাপদে আছে কিনা!
পঙ্খীরাজ ঘোড়া তৈরির চিন্তা আমার মাথায় তৈরি হয় সম্ভবত একটা রুপকথার গল্পের অনুপ্রেরণা থেকে। তবে এই জিনিসের সাধারণ যে রূপকথা আমরা জানি সেই গল্প থেকে নয়। রাজপুত্তুর পঙ্খীরাজে চড়ে গিয়ে রাক্ষস মেরে রাজকন্যাকে উদ্ধার করল সেই চিন্তা কারো কাছে শিশু বয়সেও বাস্তব (সম্ভাব্য) মনে হওয়ার কোনো কারণ নেই। যে গল্প পড়ে মনে মনে ভেবেছিলাম, ঘটনাটা সত্যি হলে মন্দ হতোনা, সেটা অন্য গল্প। কে লিখেছেন অথবা আদৌ সেটি কোনো প্রচলিত রুপকথা কিনা জানা নেই। কেবল মনে আছে গল্পটা।
নির্ঘুম রাতগুলি আমাকে অতীতের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারেনা। আবার আমি হতে পারি না বাস্তবমুখী। কিংবা 'আলাদা' কিছু করে দেখানোর রুচিও নেই আজকাল। তাহলে ? বিশ্বাস এবং অবিশ্বাস এই দুই এর পরের কোন যায়গা আছে কি? থাকবে নিশ্চয়ই; আপাতত সেই যায়গাই আমার জন্যে বরাদ্দ থাকুক। ভয়, সংশয়, আঁধারের পর আলোর জন্য প্রতীক্ষা করা ছেড়েছি সে বহুদিন আগে। তবে আলো এবং আঁধারের মাঝেও তো কিছু থাকতে পারে?
[justify]দেশ ছাড়ার আগে এনটিভিতে একটি সিরিজ নাটক দেখতাম, আমাদের আনন্দবাড়ী। মন খারাপ করা একটা নাটক, তারপরেও দেখতাম। কিভাবে যৌথ পরিবার গুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে সেই নিয়ে গল্প। নাটকটির শেষ পর্ব আরো মন খারাপ করা। সবাই একেক দিকে চলে যায়, যৌথ বাড়িটি ভেঙ্গে ফেলা হয় নতুন কোন উঁচু এপার্টমেন্ট গড়ার জন্য। রাস্তা দিয়ে সেই বাড়ির মেয়েটি একা একা হাঁটতে হাঁটতে একরকম দম বন্ধকরা কষ্টকর অনুভূতি নিয়ে নাটকটি শেষ হয়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমার আনন্দবাড়ী বলতে ছিল আমার হল, আমার ক্যাম্পাস। আমাদের আড্ডামুখর সেই সময়গুলি হারিয়ে গেছে, আমরা চলে গেছি একেক জন একেক দিকে। আমাদের আনন্দবাড়িটি অবশ্য ভেঙে ফেলা হয়নি, তবে সেখানে এসেছে নতুন মুখ।