খুলির ভেতর থেকে মগজ চুরি গেছে কখন জানি। তাই কয়েক মাসের মরিয়া চেষ্টার পরেও জমে থাকা কিছু কাজের কোন গতি হচ্ছিল না। এই অবস্থায় সিদ্ধান্ত নিলাম কোন এক উইক এন্ডে দূরপাল্লার বাস ধরে দূরে কোথাও চলে যাব। ঝোঁকের মাথায় একটা ক্যামেরাও কিনে ফেলেছি, তার একটা রোডটেস্টও করা দরকার। এদিকে পাশের শহর থেকে বাদলদার ফোন, সে গাড়ী চালিয়ে ফ্লোরিডা যাবে, সেজন্য একজন হেল্পার দরকার। চ্যাপেল হিল থেকে বেরিয়ে নিকারাগুয়া কি সাহারা যেখানেই হোক না কেন, আমার যেতে কোন আপত্তি নেই। যাত্রাটাই আসল, গন্তব্য কোন ব্যাপার না,তাই চট করে রাজী হয়ে গেলাম।
দেশ নাটক-এ ঢুকেছিলাম তাদের খেলা নাটক দেখে। সব রকমের টেকনিক্যাল সাহায্য ছাড়া মঞ্চের এমনকি পাড়ার সব মানুষ শুনতে পায় এমন জোড়ে যাত্রার সংলাপ বলার অভিজ্ঞতা কাজে লাগল। কিন্তু সমস্যা হল উচ্চারণ নিয়ে। যে কোন কথা বললেই মনি-নিশাত-শেলী আপারা হাসি হাসি মুখ করে তাকায়। প্রথমে খুশীই হয়েছি। একটু জড়তা ভাঙ্গার পর সবাই যে কোন কথা বললেই একটা ভুল উচ্চারণ খুঁজে পায়। অবস্থা এমন হল যে; কথা বলতেই ভয় করে।
সাঝ বিকেলের আড্ডা তুমুল
আমি, তুমি, সজীব, শিমুল।
হারিয়ে যাবার বিকেল বেলা
বাড়ির ছাদের ক্রিকেট খেলা।
কে ভালো আর কে ভালোনা
মুন্না, জিদান, মারাদোনা
মোহামেডান, আবাহনী
ফুলের বাগান, ইয়ের পানি।
পাড়ার দোকান, চা-ডালপুড়ি
ঝাল চানাচুর মশলা মুড়ি
পাশের ছাদে কে আসে যায়?
চাইনা তবু চোখ চলে যায়।
বড় হবার সেইতো শুরু
বুক ধুকপুক, উড়ু উড়ু
দিনে কাটেতো রাত কাটেনা
বইয়ের ভাঁজে, মাসুদ রানা।
অনেক দিন পরে এইবারের ঈদের লম্বা ছুটিটা হাসপাতালের বাইরে কাটাচ্ছি।
মোটামুটি ভালোভাবেই রোযা প্রায় শেষ। অফিসে ঝামেলা কম। ছুটির মৌসুম তাই কলিগদের অনেকেই ছুটি কাটাচ্ছে। প্রায় মাসদুয়েক কোন মিটিং হয়নি তাই নতুন কোন প্রজেক্টে কাজ করতে হয়নি। পুরাতনগুলো ঝালাই হচ্ছে। কাজ কম এজন্য দেরী করে আসি, তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরি। ফলাফল, ঘন্টা জ্যামিতিক হারে নিম্মমুখী।
আসছে ঈদ। বাড়ি যাবো। চিন্তা করলেই মন ভাল হয়ে যায়। অকারনে পা মাড়িয়ে দেয়া সহকর্মীটিকেও ক্ষমা দেয়া যায় অনায়াসে। কিংবা বসের কঠোর চেহারার দিকে তাকিয়েও খুঁজে পাওয়া যায় মেঘের কোলে এক চিলতে রোদের মত উঁকি দিয়েই মিলিয়ে যাওয়া হাসির ঝলক (উনিও বাড়ি যাবেন কিনা!)।
কিন্তু বাড়ি ফেরার টিকেট পাওয়া যাবে তো?
সকল আনন্দের সামনে উদ্যত ফণা তুলে আছে এই প্রশ্নরূপী কালকূট!
সে বহু বছর আগের কথা! কমাণ্ডোজ খেলার লোভে লোভে গিয়ে বসতাম তপু ভাইয়ের কম্পিউটারে! গ্রীন ব্যারেট যখন বুকে হেঁটে ছুরি মুঠোয় সন্তর্পণে উঁকি দিত নাজি ক্যাম্পের আনাচে কানাচে, তখন আমার মনটা দুপ দুপ করত, আহারে, এইতো তপু ভাই এসে পড়লেন! উঠতে হবে কম্পিউটার ছেড়ে! মেরিন' যখন দীর্ঘ ডুব সাঁতারে নিঃশব্দে নাজী সৈন্যের পেছনে গিয়ে উঠত আচমকা, তখন আমিও দম ধরে থাকতাম, আরেকটু, আরেকটু হলেই মিশন সফল হয়!
মাঝে মাঝে পেনসিলটা হারিয়ে যায়। এই খাতাটা উলটাই, ওই বইটা উলটাই, টেবিলের তলা, খাটের নীচ কোথাও নেই। কিন্তু একটু আগেই তো দিব্বি লিখছিলাম! নামিয়ে রেখে রাবার দিয়ে একটা ভুল বানান মুছতেই কোথায় যে গেল!
সাধ সাধ্যের বর্ডার লাইনে যাদের বসবাস তাদের জন্য কোন শখই সহজপাচ্য থাকে না। বইকেনা ব্যাপারটাও আমার জন্য সহজ ছিল না।
সাধারণতঃ হাইস্কুল/ইন্টার বয়স থেকে বইপত্রের রোমাঞ্চকর জগত ব্যাকুল হয়ে ডাকতে থাকে স্থায়ী আসন গাড়ার জন্য। স্থায়ী আসন মানে বই কিনে একের পর এক ভাঁজ করে বুক শেলফে সাজিয়ে রাখা। হাইস্কুল থেকে বই পড়ার নেশা চাপলেও সংগ্রহে রাখার মতো বই সাজিয়ে রাখার শখটা আমাকে তীব্রভাবে ডাক দিতে শুরু করেছিল ভার্সিটির শুরুতে যখন পরিবারের সাধ আর সাধ্যের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধটা সবেমাত্র শুরু হয়েছিল। ফলে বাবা-মার হোটেলে অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-চিকিৎসা সহ সব মৌলিক অধিকারের বন্দোবস্ত থাকলেও 'আউট বই' কেনার কোন বাজেট ছিল না। বই কেনার জন্য বিকল্প ব্যবস্থার উপর নির্ভর করতে হতো। যেভাবে দিন মজুরেরা এক দিনের আয় দিয়ে আজকের খাবারটুকু ম্যানেজ করে সেভাবে বই কেনার ব্যবস্থা হতো কয়েকদিনের রিকশা ভাড়া কিংবা বাজার খরচ থেকে বাঁচিয়ে।