দূর শৈশবে ক্যালিডোস্কোপ ঘুরিয়ে নক্সা দেখতে দেখতে ঘোর লেগে যেত। আজ এই বেলা-ঢলে আসা প্রহরে জীবন-ক্যালিডোস্কোপ নিয়েও আমার এক-ই দশা, ঘোর লেগে আসে। একসঙ্গে ঝাঁক ঝাঁক স্মৃতি এসে ঘুরে যায় কাঁচকি মাছের ঝাঁক-এর মত। মনোযোগ দিয়ে দেখতে গেলে পলক ফেলার আগেই সব শুনশান, কেউ নেই। তখন আবার চুপটি করে বসে থাকা গহীন দিঘীর পারে। খুব সাবধানে। ঘোর লেগে জলে পড়ে গেলে, সাঁতার জানি না আমি, তলিয়ে যাব। আর না, সাবধানে পা টিপে টিপে জলের ধার থেকে সরে আসি। কিন্তু টের পাই, জল ও আসছে। বুকে হেঁটে, সাপের মতো। দৃষ্টিসীমার ঠিক বাইরে বাইরে। আসুক, পালিয়ে লাভ নেই। আমি মন সরিয়ে নিই।
কর্মময় জীবন আর ভালো লাগিতেছে না। আসলে যে কাজ করিয়া জীবিকা নির্বাহ করিতেছি সেই কাজের প্রতি এক প্রকার অনীহা তৈরী হইয়াছে। 'কাজ' আমাকে পছন্দ করিতেছে না আমি 'কাজ'কে পছন্দ করিতেছি না। আমাদের অবনিবনার ফসল একরকমের বিবমিষা।
রাত ২ টা ৩৭ মিনিট। ঠাহর করতে পারছি না এখন ঠিক কোন জায়গায় আছি। বাস চলছে বাতাসের চেয়েও দ্রুত গতিতে। বাসের সবাই মোটামুটি গভীর ঘুমে নিমজ্জিত। আমার পাশের সিটে বসা সহযোদ্ধা বেশ আরাম করেই ঘুমাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। পিচের উপর দিয়ে বাসের দ্রুত ঘুর্নায়মান চাকার দ্বারা সৃষ্ট শব্দের কারনে হয়তো তার নাক ডাকার শব্দটা আমার কানে আসছে না।
শেরপা, অক্সিজেন মাস্ক, জীবন রক্ষাকারী গরম মুরগির স্যুপ, কয়েক পরতের উইন্টার জ্যাকেট ইত্যাদি ছাড়াই, শুধুমাত্র দুই বোতল পানি সম্বল করে শর্টস আর রানিং শ্যু পড়ে পর্বতের চূড়ায় এসে পৌঁছালাম। শ্রীমঙ্গলের সর্বোচ্চ পাহাড় মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের শীর্ষ জয় করার পরে স্যান ডিয়েগোর অদূরে মেক্সিকো সীমান্তসংলগ্ন ছোট শহর ছোলা ভিস্তার সর্বোচ্চ পাহাড় স্যান মিগ্যুয়েলের চূড়া বিজয়। নিজের পায়ে হেঁটে জীবনের এই সর্বোচ্চ অর্জনে
The past actually happened. History is what someone took the time to write down.- A. Whitney Brown
[আমি দেশপ্রেমিক নই, দেশ নিয়ে আশা-ভরসা কিছুই নেই, হতাশাবাদী মানুষ, এই লেখা আশাবাদী মানুষরা না পড়লেই ভাল। ব্লগ লেখার কোন ইচ্ছা ছিল না তারপরেও অযথা মনে হল কিছু কথা বলা থাক]
১.
রিমন ঘুম জড়ানো চোখে মোবাইল ফোনে সময় টা দেখে নিলো। ৭ টা ১৫ বাজে, আরো মিনিট পনেরো গড়িয়ে নেয়া যাবে। এই সুযোগে সে ফোন থেকেই ফেসবুকে ঢুকল। হোম পেজে এক গাদা নতুন পোষ্ট। সবগুলোর মূল বক্তব্য একই, সরকার কেন কোটি কোটি টাকা সরাসরি গরীব মানুষেকে না খাইয়ে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মত ফালতু কাজে ব্যয় করতে হবে? প্রায় প্রতিটি পোষ্টের সাথেই গরীব মানুষের কষ্ট করে জীবন যাপনের ছবি। রিমন ফেসবুক থেকে বেড়িয়ে এল। চোখ কচলে বাথরুমের দিকে গেল ফ্রেশ হবার জন্য।