আগের পর্ব - http://www.sachalayatan.com/node/48180
আফসার মুক্তিযুদ্ধে দেয় এবছরের জুনে। বেশ ভালো ট্রেনিং সে এতিমধ্যে নিয়ে ফেলেছে। রণাঙ্গন হিসেবে বেছে নিয়েছে কুষ্টিয়া। দেশের হয়ে লড়াই করা যাবে। সেই সাথে পরিবারের আশেপাশে থাকা যাবে। কুষ্টিয়ায় মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেবার পর সে চলে আসে কাশীপুরে। যোগ দেয় আজিমের গেরিলা দলে।
চল্লিশ বছর হয়ে গেল তবু কিছু লোক এখনও একাত্তরে যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা নিয়ে খোঁচাখুঁচি চালিয়ে যায়। এইসব নাস্তিক-ইসলামবিরোধী-আওয়ামীলীগার-ভারতের দালাল এখনও প্রমাণ করার চেষ্টা করে চলেছে যে তাদের ‘মুক্তিযুদ্ধে’ নাকি তাদের তিরিশ লাখ লোক মারা গেছিল। একথা যে সর্বৈব মিথ্যা, তা এটা স্মরণ করলেই বোঝা যাবে – প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বলেছিলেন, “Kill 3 million of them and the rest will eat out of our hands” – তাই বাংলাদেশ যে স্বাধীন হয়ে যেতে পেরেছিল, এটাই যথেষ্ট প্রমাণ যে দয়ালু পাকিস্তানি সেনারা তাদের তিন মিলিয়ন ছুডুভাইকে আসলে মেরে উঠতে পারেনি।
তবুও ব্যাটারা থামে না, তাদের নির্লজ্জ মিথ্যাচার চালিয়েই যায়। তাদেরকে ডাউন দেবার জন্য কিছু কট্টর প্রমাণওয়ালা বিপরীত প্রোপাগাণ্ডার দরকার পড়েছে। এক শ্রদ্ধেয় বড়ভাই আমাকে বোসম্যাডামের বইটা ধরিয়ে দিয়ে বললেন, এর চেয়ে নিরপেক্ষ, বাস্তবনিষ্ঠ অনুসন্ধানপূর্ণ বই আজকাল পাওয়াই অসম্ভব, এবং এটা অকাট্যভাবে আমাদের কথা প্রমাণ করে দিয়েছে; আমি যেন এটা নিয়ে কিছু লিখি যাতে ঈমানদার ভাইবোনেরা ব্যাপকহারে শেয়ার দিতে পারেন।
-তোমাকে তো আজকাল পাওয়াই যায় না। ফোন ত করোই না আমি করলেও ধরনা। মোবাইল বাজতেই থাকে। কি করছ আজকাল?
-ক্লাস থাকে। সামনে পরীক্ষা...তার মধ্যে চলছে শাহবাগ...এই জন্যেই আরকি।
-শাহবাগে যাও তুমি?
-যাই তো। না গেলে কি ভাবে হবে? যুদ্ধপোরাধীদের পার পেয়ে যেতে দেয়া যাবে না।
এই হল আমার মেডিকেলে পড়ুয়া ছোট ভাইয়ের অবস্থা। সে রাজাকারের বিচারের দাবীতে শাহবাগ যায়। স্লোগান দেয়।
ওর আরেকটা পরিচয় ছোট্ট করে বলে রাখি.....ও একজন কোরআন এ হাফেয। সমস্ত কোরআন শরীফ বুকে ধারণ করেই সে শাহবাগে যায় এবং "ফাঁসি চাই" বলে স্লোগান দেয়।
-শাহবাগে নাকি অনেক আজেবাজে কিছু হয় আর মানুষ নাকি শব ফটোশপে বসানো?
-কে বলল উল্টাপাল্টা?
-ফেসবুকে দেখি আর আমার দেশের মাহমুদুর রহমানের টেলিফোনের লিক হওয়া কথায় জানলাম।
-আমি তো অতসব জানিনা। যতটুকই সময় পাই শাহবাগে যেয়ে স্লোগান দিয়ে আসি। আমি তো ওখানে লাখ লাখ মানুষ দেখি মহাসমাবেশে। ফেসবুক দেখার সময় ও পাইনা।
১৯৭১ সালে সংঘটিত মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় ইতিহাসের সবচে’ গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গর্বিত হবার কথা। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিভিন্ন বর্ণনাকারীর বর্ণনায় সামান্য হেরফের হলেও তাদের মূল সুর এক হবার কথা। কারণ, মূল সত্যটি হচ্ছে সামান্য ব্যতিক্রম ব্যতীত এই ভূখণ্ডের সব মানুষের পাকিস্তানী শাসন, শোষন, আক্রমণ, জুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল, সাহস ভরে সন্মূখ সমরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। সেই বিজয় ত্রিশ লক্ষ প্রাণের মূল্যে অর্জিত হয়েছে। কোটি কোটি মানুষকে সহ্য করতে হয়েছে শারিরীক-মানসিক অত্যাচার, চার লক্ষ নারীকে হতে হয়েছে ধর্ষণের শিকার। লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, স্থাপণা ধ্বংস হয়েছে অগণিত। এসবের সাক্ষী বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ।
সরকার শাহবাগের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেছে অনেক আগেই; সরকারের অনেক কর্তাব্যাক্তি এবং সরকারদলীয় অনেক উচ্চপদস্থ নেতা নিয়মিতই শাহবাগে আসছেন একাত্মতা প্রকাশ করতে। এগুলো খুবই পজিটিভ দিক। কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন অনেকেই উত্থাপন করছেন। সেটা হল সরকার কি তার রুটিন সরকারী দায়িত্বগুলো পালন করছে বিগত কয়েকদিনের ঘটে যাওয়া ব্যাপারগুলো নিয়ে?
আজকাল একটি গোষ্ঠী বাক-স্বাধীনতা ও গণ্মাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে খুব কথা বলছে। দেশে নাকি বাক-স্বাধীনতা বলতে কিছুই নেই এবং গণতন্ত্র বিলুপ্ত হয়েছে। সরকার নাকি নিরন্তর ফ্যাসিস্ট(আসলে ফ্যাশিস্ট, এরা উচ্চারণটা জানে না!) হয়ে উঠছে। সত্যিই কি তাই?
গত ০৫ ফেব্রুয়ারি থেকে চলে আসা শাহবাগের আন্দোলনের কারণে আজ যুদ্ধাপরাধী , জামাত শিবির, রাজাকার এই শব্দগুলো আমাদের দেশের প্রতিটি মানুষের মনের শব্দকোষে একটি ঘৃণ্য জায়গা দখল করে নিয়েছে। আমার ঘরের মাত্র আড়াই বছরের শিশুটিও মাঝে মাঝেই বলে উঠছে রাজাকারের আস্তানা জালিয়ে দাও গুড়িয়ে দাও। এই ছোট্ট শিশুটির মনে আজকে যেই ঘৃণা যেই ক্ষোভ তাও এই শাহবাগ আন্দোলনের একটি বড় অর্জন। আমার বিশ্বাস আমার ছেলের মত আজ প্রতিটি ঘ
শ্রদ্ধেয় শহীদ, তারিখ: ২০ ফেব্রুয়ারী’১৩
সম্প্রতি বাংলাদেশে খুব আশ্চর্য একটা ঘটনা ঘটে গেলো। আমাদের অতি পরিচিত শাহবাগ মোড়ে এক জন দু'জন করে সমবেত হলো হাজার হাজার মানুষ। কে তাদেরকে ডেকে আনলো? দেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর পল্টনে জনসমাবেশ ডাকে- আমরা দেখি। সেখানে দলীয় ব্যনার হাতে, দলীয় শ্লোগান মুখে অনেক লোক হাজির হয়। তাদের ডাক ছাড়া এতো লোক একসাথে হতে পারে- ভাবাই যায় না।অথচ শাহবাগে সবার চোখের সামনে সেটাই ঘটলো।আমাদের দেশের ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল।
শাহবাগের প্রজন্ম চত্ত্বরে গড়ে ওঠা আন্দোলন আমাদের গোটা জাতিকে একটি ক্রান্তিকালীন পর্যায়ে নিয়ে এসেছে! আজকে সময় এসেছে আত্ম-উপলব্ধির, সময় এসেছে আত্ম-সমালোচনার, সেই সাথে শত্রু মিত্র-কে বোঝার – যা আমাদেরকে ভবিষ্যতের পথনির্দেশনা প্রদান করবে।