একটি বিষয় মনে রাখা জরুরি, কাদের মোল্লার বিচারের রায়ে সরকার অথবা সরকারী দলের কিছু করার নেই। কখনো ছিলও না। বাংলাদেশের আইন-আদালতের উপর সরকারের কোন প্রভাব নেই। কেবল সরকার বলে নয়, এই রায়ে কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী, দল অথবা সংগঠনের কারোরই কোন প্রভাব নেই। সুতরাং আমরা যারা বিচারের রায়ে খুশি নই, তারা যেন মনে রাখি, সরকার এই বিচারের রায় বদলাতে পারে না। তারা এই বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারের তাদের সদিচ্ছা দেখিয়েছে মাত্র। কিন্তু বিচারের রায় কী হবে, কে অপরাধী অথবা কে অপরাধী নয় সেই বিষয়ে সরকার (অথবা অন্য কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী) কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। এই সিদ্ধান্ত কেবলমাত্র স্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের।
সময়টা মনে হয় ছিয়ানব্বইয়ের দিকে হবে। চ্যানেল ফোরের একটা ডকুমেন্টারি দেখছিলাম বাসায় সবাই মিলে। তাতে ব্রিটেনে পালিয়ে থাকা একাত্তরের ঘাতক দালালদের কুকীর্তির বর্ণনা, আর তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনার প্রাথমিক কাজ শুরু করা হয়েছিল। পুরো ডকুমেন্টারিটা দেখে ক্ষেপে গিয়ে আব্বুকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এই লোকগুলো বাংলাদেশি, তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বাংলাদেশের সাথে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করবে ব্রিটিশ মিডিয়া, আর তাদের বিচার হবে ব্রিটেনে? আমরা কি এতটাই অক্ষম? আমরা নিজেরা এদের বিরুদ্ধে কিছু করবো না?
হাজার মানুষ হত্যা করেও
যাচ্ছে বেঁচে কাদের,
কাঠখড় এত ভস্ম করে
এই কি বিচার তাদের!
বাংলার মাটিতে যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেখে যেতে চান, তাদের জন্য আজ এক বিশেষ খুশির দিন। জামায়াতে ইসলামীর এক উচ্চপদস্থ নেতা কাদের মোল্লার ৭১এর অপরাধ আজ আদালতে প্রমাণিত। আইসিটির রায়ে তার যাবজ্জীবন কারাদন্ড ঘোষিত হয়েছে। কিন্তু ফাঁসির রায় না হওয়ায় আমাদের অনেকেই বিক্ষুব্ধ ও হতাশ। সেই হতাশা থেকে কি আমাদের আজকের দিনের বিশাল অর্জনকে কিছুটা হলেও আমরা ভুলতে বসেছি?
এমিরেটস এয়ারওয়েজের দুবাই-লন্ডন ফ্লাইটের বিজনেস শ্রেণী। দিলদার হাসান জাঈদী বসে আছেন, পাশেই বসে এ.বজরুল।
বজরুল দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। তবে তার বিজনেস ক্লাসে চড়ার মুরোদ ছাত্র ঠেঙিয়ে হয়নি; হযেছে কথা সওদা করে। তর্ক কথায় বজরুলের কোনো জুড়ি নেই। ছোটবেলায় দাউদ খুজলির মলম বিক্রির ক্যানভাস করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতেন তিনি। ক্লাস ফাইভে থাকতে সহপাঠী শিউলিকে বিশ্বাস করিয়ে ফেলেছিলেন যে শিউলি একটানা সাত দিন 'হাম্বা' করে ডাকলেই তার স্তন ছাঁপিয়ে দুধ আসবে। তার স্কুল এর কলা শিক্ষক নন্দবাবু বজরুলের ভবিষ্যত দেখেছিলেন নাট্যকলায়। পড়ালেখায় মাথা থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিটা হয়ে যায় ঠিকই কিন্তু নন্দবাবুর কথাও বৃথা যায়নি পুরোপুরি। বজরুল এখন নানান টিভি চ্যানেলের জনপ্রিয় আলোচক।এখনো সেই ছোটবেলার মতই যেকোনো বিষয়ে তিনি আত্মবিশ্বাস নিয়ে কথা বলতে পারেন। শিউলির মতই দেশের মানুষ তাঁর কথা বিশ্বাস করে।
[justify]এটি বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা হাজার হাজার মুজিবুর রহমানের মধ্যে কোন এক ভীষণ সাধারন মুজিবুর রহমানের গল্প । যৌবনের শুরুতে অসাধারণ অকুতোভয় মুক্তিবাহিনীর কোন এক মুক্তি সেনার যুদ্ধকালীন বিজয়ের গল্পের সাথে সাথে এটি জীবনযুদ্ধে তার নিদারুণ পরাজয়ের গল্প। এই গল্পটি আসলে শুধুই কোন গল্প নয়,গল্পের আড়ালে খুব সাধারন এক মানুষের বাস্তব জীবন কাহিনী।
[b]পর্ব এক
১৯৭১ সাল
[justify]একটু ইতিহাস জেনে নেই
শুরু করি আর্মেনিয়ার গণহত্যার ইতিহাস দিয়ে। আর্মেনিয়ার গণহত্যা ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন আর তার ঠিক তার পরপর তৎকালীন 'অটোম্যান এম্পায়ার'দের ঘটানো একটি সুপরিকল্পিত গণহত্যা। নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে এই গণহত্যার সাথে চলে ধর্ষণ। এই গণহত্যার কারণে মৃতের সংখ্যা ধরা হয় এক থেকে দেড় মিলিয়নের মধ্যে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা নিয়ে বাংলাদেশের অনলাইন মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো বেশ গরম। ঘটনাটা প্রথম দিকে আমার চোখ এড়িয়ে গেলেও এই ব্যাপক শীতে একটু গরম আঁচ গায়ে লাগায় একটু নাক গলালাম। তাতে যা দেখলাম, বাংলাদেশের আবহমান কালের ঐতিহ্য বজায় রেখেই ঘটনার পক্ষে-বিপক্ষে ইতিমধ্যে বেশকটি পক্ষ তৈরী হয়েছে এবং তারা নিঃসন্দেহে সরব।
১৪
১৯৭১
মেহবুবা জুবায়ের