ওদের সাথে পরিচয় হয়েছিল শৈশবেই। কিন্তু ঠিক কত বছর বয়সে, এখন আর তা মনে নেই। ওরা যমজ বোন। অবশ্য যমজ হলেও দেখতে কিন্তু এক রকম নয়। একজন অপরূপা জাদুকরী, অন্যজন কুৎসিত কৃষ্ণবর্ণের। ওরা দুজনেই আমার প্রেমে পড়েছিল এবং আমাকে চেয়েছে। কিন্তু আর দশজনের মত আমিও সুন্দরীর দিকেই ঝুঁকেছিলাম। ওই রমণী যাকে আমার হৃদয় কামনা করে, সে এক অনুপম সৃষ্টি, যাকে দেবতারা পায়রার যুগলবন্দী প্রেমে রূপ দিয়েছেন। তাকে নিয়েই কবিতা লিখি
ঘুমের ঔষধ খেয়েও
নির্ঘুম কাটছে রাত ।
ক্লান্তিতে,
ভীতিতে,
এঞ্জাইটিতে,
বাবার মৃত্যুতে,
মায়ের অসুখে,
অভিমানে
ও নানাবিধ কষ্টে,
আমার অনেক ঘুম জমা আছে ।
এসব ঘুমের বিনিময়ে
আমি বানাবো কবিতা ।
কবিতা পুড়ালে সেই অগ্নিতে স্নান করে মায়কোভস্কি হবো।
মৃত্যুই হবে আমার শেষ অভিমান ।
আহমদ ছফা এই ধূলির ধরা থেকে বিদায় নেন শ্রাবণের ১৩ তারিখে বঙ্গতয় ১৪০৮ সালে । তখনই মনে এই প্রশ্ন উঁকি দেয় মরিবার জন্য ছফা ভাই কেন শ্রাবণকেই বেছে নিলেন? শ্রাবণ মানেই তো মেঘের ক্রন্দন যাকে আমরা মিষ্টি করে বৃষ্টি বলি । সেই বৃষ্টির দিনে আনন্দ করে ভেজা যায় কিংবা বাদুর ঝোলার মত বাসে চড়ে অফিস ঘরে কামলাগিরীও করা যায় কিন্তু মরা কি ঠিক ?
আল মাহমুদ আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান কবি। কবিতার শব্দ ব্যবহারের স্বতঃবেদ্য স্বাভাবিকতা এবং বিশ্বাসের অনুকূলতা নির্মাণে তিনি নিঃসংশয়ে আধুনিক বাংলা ভাষায় একজন অগ্রগামী কবি। প্রখ্যাত সমালোচক অধ্যাপক শিবনারায়ণ রায় বলেন, সমকালীন যে দুজন বাঙালি কবির দুর্দান্ত মৌলিকতা এবং বহমানতা আমাকে বারবার আকৃষ্ট করেছে তাদের মধ্যে একজন হলেন বাংলাদেশের আল মাহমুদ, অন্যজন পশ্চিমবঙ্গের শক্তি চট্টোপাধ্যায়।
রাতের শেষ প্রহরে ঝিমোতে ঝিমোতে নিঃসঙ্গ বাসটা এসে দাঁড়ালো ঘুমন্ত শহরের কার্নিশে।
শেষ যাত্রী মেয়েটাকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল টার্মিনালে।
একটা ঘেয়ো কুকুর হতাশাময় ঘাউ করে নিজের অস্তিত্ব জানান দিল।
পাশের টং দোকান থেকে কেউ এক বালতি ময়লা পানি ছুঁড়ে মারলো রাস্তায়।
সূর্য উঠতে এখনো ঢের দেরি।
রাতভর বিরতিহীন আলো দিয়ে ল্যাম্পপোস্টের অবসন্ন বাতির ম্লান চোখে ধুলো জমা অন্ধকার।
মাক্তুব, ভাবল ও।
“আরে কী হলোটা কী, জিজ্ঞেস করো!” ইংরেজের কথায় সম্বিত ফিরে পেল সান্টিয়াগো।
মেয়েটির কাছাকাছি গেল ও। ইতস্তত করে একটু হাসল।
“আপনার নামটা জানতে পারি কি?”
“ফাতিমা,” চোখের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নিতে নিতে বলল মেয়েটি।
“ও আচ্ছা... আমাদের দেশের মেয়েদেরও এই নাম হয়।”
সেবা প্রকাশনীর সাথে পরিচয় তিন গোয়েন্দা’র ‘সবুজ ভূত’ বইখানা দিয়ে। তখনও বুঝতে পারিনি ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে একদিনে পড়ে শেষ করা এই বইটি টেনে নিয়ে যাবে কতদূর। তখনও বুঝতে পারিনি বিদেশি সাহিত্যের অচেনা ভাষার জগতে ঢুকে যাবো মায়ের ভাষায়।
আর তখনও জানতাম না, জীবনে আসতে চলেছে ‘মাসুদ রানা’।
মানুষ কেন বই পড়ে? জ্ঞানী হবার জন্য নাকি স্রেফ আনন্দের জন্য? অন্যদের কথা জানি না, আমি পড়ি আনন্দের জন্য। সেই ফাঁকে যদি দুয়েকটা জ্ঞানার্জনের পূণ্য অর্জিত হয় সেটা বাড়তি লাভ।
তো, এই পড়াশোনা ব্যাপারটা জ্ঞানার্জনের পাশপাশি মানুষের কল্পনাশক্তির প্রসারণ ঘটায় ব্যাপক ভাবে। আমি নিজে স্কুল বয়স থেকে আজ অবধি হাজার হাজার হাবিজাবি বই গিলে নিজের কল্পনাশক্তির বড়সড় এক পর্বত দাঁড় করিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম জীবনে আর নতুন কিছু পড়ার নাই। কিন্তু কয়েকদিন আগে শেষ করা একটি অভিনব পুস্তকের কাছে আমার সমস্ত কল্পনাশক্তির পর্বতের ভিত নড়বড়ে হয়ে গেছে। আরেকটুর জন্য ধ্বসে পড়েনি।
মজার ব্যাপার হলো, আমি আগ থেকেই জানতাম আমি একটি কল্পকাহিনী পড়তে যাচ্ছি যার সাথে বাস্তবের কোন যোগসূত্র নেই। তবু এই হোঁচট খাবার কারণ কী?
জানতে হলে, পড়তে হবে।
সে এক বিশাল ইতিহাস, বিশ্ব জুড়ে প্রবল জনপ্রিয় লেখক আর্নেষ্ট হেমিংওয়ে তখন ফ্লোরিডার ‘কী ওয়েস্টে’ তাঁর ২য় স্ত্রী Pauline Pfeiffer এর সাথে ছিলেন। এবং যে চমৎকার বাড়িতে প্রায় ১০ বছর তারা ছিলেন, যা এখন হেমিওংয়ে জাদুঘর হিসেবে বিখ্যাত, তা মূলত ছিল পাওলিনের ধনবান চাচার বাড়ি। সেই আংকেল গাস আবার ভাতিজির জামাই বিদ্যান হেমিংওয়েকে খুব পছন্দ করতেন, এমনকি তাদের নিয়ে আফ্রিকা ভ্রমণে সমস্ত ব্যয়ভার বহন করেছিলেন, যা
আশ্চর্য নয় কিছু,
নিতান্ত প্রাকৃতিক।