তোমাকে নয়-
-----------------
আমার কেবলই কেড়ে নেবার স্বভাব-
যা কিছু ভাল লাগে কিংবা লাগার,
তার সব, সব কিছুই চাই আমার।
ঐ দোকানীর রাংতা মোড়ানো স্বপ্ন ভরা বয়াম,
ও পাড়ার ঐ দুরন্ত ব্যাটসম্যানটির সুনাম,
অদ্ভুত সব চকমকি মার্বেল, আর-
অগোছালো চুলে মায়ের অনিচ্ছুক বিলি কাটার আরাম।
তোমায় আমি আগলে রাখি বুকে
প্রতিদিনের এলোমেলো দুঃখ এবং সুখে।
যেন তোমায় ধরলে বুকে
আমার দিকে তাকিয়ে থাকা আদরমাখা তোমার মুখে
চোখটা খুলে গভীর মায়ায় তাকাই যখন একটু ঝুকে
থামবে তখন আমার যত অস্থিরতা
বুকের মাঝের ভুলগুলি সব মুহূর্তে ঠিক
এটাই যেন খুব স্বাভাবিক
এটাই, শুধু এটাই যেন হবার কথা।
আমার অনেক অনেক কিছুই দেবার ছিল
পাবার ছিল
অনেক কাছের হয়েও দূরের অন্য কোথাও যাবার ছিল
স্বাদহীন, অসহ্য, একঘেয়ে দিন শেষে
আমার আকাশে, ছুটি আসে।
সকালে সাদা-বেগুনি ফুল ফুটে
কচুরিপানার সবুজ বুকের কাছে।
আকাশের ওপারে, একটা আকাশ
শান্ত জলের স্নিগ্ধতায় ছবি আঁকে।
কাশফুলের নরম সাদা ঢেউয়ে
মেঘে মেঘে, মেঘ বালিকা হাসে।
বহুদূর অরণ্যের ঠিকানায় যেতে
প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষায় থাকে ট্রেন।
এই ছুটিতে, কোথাও না যাওয়ার সুখ
লেগে থাকে দিগন্তের হালকা নীলে।
তোমারই ইঙ্গিত খুঁজি আমি নারীদের ভীড়ে,
আন্দোলিত রমণীর দুরন্ত প্রবাহ, চুলের খোঁপায়,
আধবোঁজা পলক, ফেনীল ঢেউয়ে ভেসে যাওয়া
হালকা পায়ের ভেতর।
হঠাৎ যেন খুঁজে পাই তোমার আয়তাকার নখ,
টুকটুকে চেরির মত, গতিময়
তোমারই মত এলোমেলো মোহনীয় চুল
সমুদ্রের জলে জ্বলতে থাকা তোমার গনগনে অবয়ব
প্রাণের কাছে জলাভূমি আজ নত হয়েছে ছায়ায়
অথবা নত জলের কাছে প্রাণ
শব্দই গাঁথে জীবনের অস্ফুট
এসো তবে আজ ঈশারায় সব গল্প বলার শুরু
যদিও কিছুই বলার নেই আমার!
যদিও মেঘের ওপারে আর কিছুই দেখিনি আমি
ভোর হয়েছে দিগন্তে যখন আমি ফিরে গেছি পশ্চিম থেকে আরও পশ্চিমে- আরও
নিজের ছায়ায় নিজেকে দেখে চিনতে পারিনি তবু
সত্য যা তা সত্যের মাঝে শিল্পের মত বাঁচে
আমার য কিছু না বলা ছিল
অস্ফুট রয়ে গেছে!
আমার কোনো শেষ বার নেই, নেই চির প্রতিশ্রুতি;
বালির ওপর জয় তার পায়ের ছাপ ফেলে রেখে গেছে।
আমি এক দরিদ্র মানুষ, যে মানুষকে ভালবাসতে চায়।
তোমাকে চিনিনা, অথচ ভালবাসি,
কাঁটার উপহার দিইনা কখনো, বেচিনা তার ধার।
কেউ হয়ত জানতেও পারে, আমার হাতে তৈরী মুকুট
তোমার আগে যদি আমার মৃত্যু হয়
অথবা আমার আগে তোমার দেহান্তর,
তবু যেন আমরা বেদনার সীমানা না বাড়াই
কারণ বেঁচে থাকার মত বিপুল আর তো কিছু নেই।
গমের ভেতর লুকোনো ধুলি, আর বালির ভেতর সূক্ষ্মতর বালি
আমাদের উড়িয়ে নেয়। মুহূর্তের ঝিরঝিরে স্রোত, বেঘোর বাতাস
আমাদের বীজের মতন বাহিত করে,
তোমার হাসির রুপালি বিদ্যুৎ,
যেন কোনো বৃক্ষকে তড়িৎ-স্পৃষ্ট করে আধাআধি ভাগ করে দেয়,
যেন এক রিনরিনে সূক্ষ্ম তরবারি, আকাশ থেকে নেমে
ভেদ করে বৃক্ষের আমূল হৃদয়।
এ হাসি শুধু জন্মাতে পারে বনভূমি,
আর তুষারঝরা পাহাড়ের দারুণ উচ্চতায়, বাতাসের
অনাবিল আনন্দ যেখানে পত্পৎ ওড়ে। এ হাসি
অপ্রকাশ
প্রণয় সে গোপন গভীর থাকা ভালো।
শহরের উষ্ণতম সরোবরের অভিমানী জলে-
শীত-দুপুরে কোন ঘুম ভাঙানিয়া স্নান,
তারও চেয়ে ভালো, ডুবে ডুবে ডুবে
পানকৌড়ির অলৌকিক আহবান।
তোমার আলোময় চুল কী ধীর অনুভব করি,
এক একটির পরখ করি নিবিড় সুন্দরতা
অন্য প্রেমিক অন্য চোখে দেখে নেয় ভালবাসার মুখ,
তোমার চুলের বিন্যাসে আমি পাই আমার মুগ্ধতা।
ইতালিতে তোমার নাম ওরা রেখেছে মেডুসা,
নাগিনীর মত আউলানো চূর্ণকুন্তল
আমি বলি তরঙ্গময়ী; আমার হৃদয়