কবিতার দৃশ্যান্তর, অন্তর্ভেদি দিগন্তের বিস্তার
ফকির ইলিয়াস
-------------------------------------------------------
প্রতিটি দৃশ্যের অন্তরালে থাকে আরেকটি দৃশ্য। একজন চিত্রীর চিত্রকর্ম সবসময় সবকিছু স্পষ্ট করে বলতে পারে না হয়তোবা। কিন্তু চিত্রশিল্পী তার মগ্নচেতনার রূপায়ণ করে যান তুলির আঁচড়ে। আর্ট গ্যালারিতে তার সেই চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হয়। নীরব দর্শকরা দেখে যান। কোনও কোনও রেখাদৃশ্য দর্শকের মনে ছায়াপাত করে...
একদিন সন্ধ্যায়
এ্যাই কি করছো তুমি?
কাজ করছি একটু, কেনো??
চা খাবে তুমি? বানিয়ে দিবো?
উমম দাও, তবে চিনি একটু বেশী দিও, দেড় চামচ
ঠিক আছে আজ চিনি বেশীই দিব, নিয়ে আসি চা
আচ্ছা তুমি বরং ছাদে চলে যাও, আজকে আমরা ছাদে চা খাবো আর জোছনা দেখবো।
তুমি গান গাইবে আর আমি তোমার হাত ধরে গান শুনবো।
শোনো, চায়ের সাথে আর কি আনবো?
নিয়ে আসো হালকা কিছু, যা তোমার পছন্দ, এ্যাই কোন গানটা গাইবো?
যা তোমার গাইতে ইচ্ছে ক...
এখানে ছিল
এখানে থোকা থোকা হলুদ ছিল, ভেসে গেল দুরে। কোনো তীর বিদ্ধ করেছে
এই অসহায় কণ্ঠ। আঙুল থেকে ঝড়ে পড়ে বিষের প্রপাত। অশ্রুর চুঁড়ায় ঝরে
জন্মান্তরের বিস্মৃত ঋতুটির মতোন ম্লান কোনো সাজ।
শব্দ সমুদ্রের পারে বধিরপুরুষ এক ভিক্ষা মাগে। ফিরে গেছে তীর। নীল জামা
ছেড়ে আকাশ রোদ্দুরে পথ চেয়ে আছে।
দুটি চড়াই, গেরুয়া প্রকৃতি, অসহায় ভূমি, উপবাস, স্মরন, মনে করা, ভুলে
তোমাকে রিসিভ করি দুই-একটা প্রতিরক্ষার আড়ালে
কারণ আমি একুশের শেষ সতর্ক আধুনিক মানুষ
চৌকষ প্রতারণায় কল্পনাতীত প্রেম হইছে আমার পাওয়া
এখন তুমি যেখান থেকেই আসো আর হাসো যাকে দেখেই
পুরনো আমার সরলতা অভ্যর্থনার লাল গালিচায় ঢাকছি
তোমাকে তিলতিল হত্যা করি গুলিস্তানের ফকিরমতো ধূর্ত
তবু
দশ সেকেন্ড পর তোমাকে মনে পড়ে আর
দশ পর মনে পড়ে কারো-না-কারো মা
মাঝখানে বিজ্ঞান মেনে জীবন তোমাদের শী...
কে – লিখেছে চিঠি ভুল বানানে !
কে – শোধরে দিয়েছে অভিধান
কে – কে রেখেছে নগ্ন পৃষ্টা অক্ষরবিহীন
কে – প্রথম পড়েছে সে সারসত্য
কে – সব আরিফরি বেদনায়,
কে – আঙুল ডগায় জমিয়েছে পাপ
কে – পেতেছে দেহ অপ্রস্তুত জ্যোত্স্নায়
কে – ভেঙেছে রাত, মৃত্ কলসের কানা
কে – ছূঁড়েছে শরীর ঘিরে বৃষ্টিধারা অবিরাম
কে – নেভালো একলা দেউটি নির্দয় ফুত্কারে !
চীন দেশের এক বৃদ্ধা এক ভিক্ষুকে বিশ বছরেরও অধিক কাল সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে আসছিলেন। তিনি তাকে একটি ছোট কুটির বানিয়ে দিয়েছিলেন এবং ধ্যানাবস্থায় তাকে খাইয়ে পর্যন্ত দিতেন। একসময় বৃদ্ধার সাধ হলো এটা যাচাই করে দেখতে যে এতটা সময়ে ভিক্ষুর কী এমন অগ্রগতি হলো।
অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছুতে তিনি এক বালিকার সহায়তা নিলেন। বললেন, ‘‘ওর কাছে যাও ও আলিঙ্গন কর। এবং হঠাৎ তাকে জিজ্ঞেস কর, ‘এখন কী হবে...
জানে, নগরী এখনো, ওঠে
নাই স্বপ্ন ছেড়ে।
সুন্দরের আস্বাদ
চকচকে চোখে খেলছে, নগরের
মুখে। গত্যন্ত হাসি লেগে রয়
মেকি অন্তরের
সুস্পষ্ট শীতে। তাকে কি আর পায়
মিথ্যের এ-শহরদ্বীপ?
এইখানে নম্র প্রার্থনার বিলয়
ঘটায়েছে মাত্র
কবছরের শীত; নিজে আগে
ছোঁয় সফলতার ভিত
তাতে সুনিশ্চিত কোমলের মৃত্যু?
কীইবা আসে যায়?
এ শহর, কঠিন বড়ো, মায়াময় রূপ
চারপাশে শুধুই
দৌড়ের টান। কী আর
করা বলো, বাঁচাই তো ব...
কবিতা লিখতে লিখতে প্যাচপেচে কাদা ও মার্সগ্যাসযুক্ত জলাজংলা পেরিয়ে গিরগিটির সামনে পড়েও তেমন অস্বস্তি হয় নি, ভরদুপুরে যেদিন ‘যৌনতা’ বিশেষ্যের সামনে গিয়ে পড়লাম, চিনতে শিখলাম ওর ক্রিয়াভিত্তি, সেদিনই উঠল গা-টা কাঁটা দিয়ে, লজ্জায় এমন জবুথবু অবস্থা হলো যে স্কুল-মিস্ট্রেসের চোখের দিকেও তাকানো গেল না
সেসব দিনে আপনজন থেকে পালিয়ে আমার নিগূঢ় ভূতের সাথে লড়ে যেতে হতো নিশিদিন, সবাই শুধু জ...
একটা পথের শেষে আরেকটা পথ নয়
পুরানো পথের ধুলায়ই বুঝি শরীর রঞ্জিত হলো
তোমার সমূহ ছুঁয়ে থেকে আরেকটা আকাশ বিহার
হলো না বিশেষ
একটা পাতার সবুজে নিবিষ্ট হয়ে
দেখতে দেখতে পুরোটা জীবন প্রায় ক্ষয়ে গেল
পরিধি ডিঙিয়ে কোনো নবোদিত ঠিকানা খোঁজার
সামর্থ্য হলো না
খুঁটি পোতা একটা খাসির মতো ঘুরে ঘুরে
মাঠের ছালচামড়া শুধু উঠিয়ে চলেছি
একদিন বহুদিন পরে
মৌনতা মুখর হয় ঘোলাটে আঁশটে ঝড়ে
ধোঁয়া ওঠা পিঠা আড়মোড়া ভাঙে,
ভোরবেলা গায়ে জড়ায় আলস্য চাদর।
সূর্যের কানে কানে কি যেন বলে
আবার ফিরে আসে সাদা বক এবং
ডাহুকের ডানা শুকায়না;
আর শুকায়না খেজুরের কান্না।
মুক্তার কণাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে
উলংগ শিশুর বিলাসী সোয়েটার হয়ে
লকলকিয়ে ওঠে আগুনের জিভ;
খুব শীত! দূরগ্রামে খুব শীত !!!