আর কতো অপেক্ষার কষাঘাত, বলো -
দশদিগন্ত কাঁপিয়ে নামে অন্ধকার
মৌনতার দীপ জ্বেলে বসে থাকি ঠায়
আর কতদিন, বলো!
বারান্দায় সকালের আলো পড়ে
চড়ুই পাখিরা ওড়ে জানালার নকশায়, গ্রীলে
তোমার হাতের স্পর্শ পাবো বলে জেগে ওঠা হয়না আমার
কালনিদ্রায় আচ্ছন্ন রই হাজার প্রহর
কিন্তু আর কতো!
ভরা জোয়ারের তোড়ে ভেসে যায় দেহের তরনী
লাভা জলে টগবগ করে মন-প্রাণ
মধ্যগগনে মাথা তোলে পরাক্রম পাল
তোমার মেঘ-বৃষ্টি...
নিশীথের বুক চিরে বয়ে গেল দখিনা বাতাস!
যুগে যুগে ফিরে আসা এ কোন কিংবদন্তী নয়,
নয় কোন প্রভাতী পাখির গানে সুরের অরুণোদয়,
এ যেন শরতের এক বিন্দু শিশিরের মত,
বর্ষার জলের শরীরে সহসা বিজলীর ক্ষত,
দিনশেষে পথহারা ক্লান্ত পথিকের দীর্ঘশ্বাস,
কষ্টের ঘ্রাণ বুকে বয়ে গেল দখিনা বাতাস!!
তোর দেয়া হলুদ নোটবুকটার পৃষ্ঠাগুলো ভরিয়ে ফেলছে নীল নীল বর্ণ
উদয়-অস্ত বর্ণগুলো নানান প্রলাপ বকে
মাঝে মাঝে পাখা মেলে আসামান জোড়া -
মনেহয় স্বপ্ন-পাখির পালক-বিছানায় শুয়ে আছি
তারাদের দিকে মেলে রেখেছি দৃষ্টির মগ্নতা
আর নিয়ন্ত্রণহীন আঙুলগুলো নিস্তব্ধ ছায়াপথের গোলকে
লিখে যাচ্ছে পথিকের স্মৃতিকথা,
তুই জানিস সে পথিকের নাম -
মাঝে মাঝে বর্ণগুলো জ্বল জ্বল করে
একদিন রাতে আখ ক্ষেতে শেয়া...
সততাকে যখন তোমরা
পদদলিত কর, দুমড়ে-মুচড়ে ফেল নগ্নপায়ে
রক্তমাংসের এ শরীর
ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে ওঠে
পরাজিত হৃদয় থেকে
ফিনকি দিয়ে বেড়িয়ে আসতে চায়।
সংকল্পহীন হৃদয় আজ শক্তিহীন
ভূম্যবলুন্ঠিত হয়ে তাই
সোপর্দ করে তাদের কাছে;
পরিত্যক্ত অতীতে পরিত্যক্ত আমি,
অবিশ্রান্ত উপস্থিতি ভবিষ্যতের
অস্তিত্বের জন্য হাহাকার করছে।
মিথ্যে অলঙ্করণগুলো দৃশ্যমান
দিবাগত রাতে তাই আর
ঘুম ভাঙ্গেনা আম...
বলতে তোমায় অনেক কিছুই পারি
বললে হতাম দুষ্টু প্রেমিক
না বলাতে হয়েছি সংসারী
তোমার বাড়ি নদীর ওপার গ্রামে
খেয়াঘাটে নৌকা ছবির মতো
প্রেমিক হলে হতাম খেয়ার মাঝি
স্বামী হয়ে রয়েছি সংযত
উথাল পাতাল বৃষ্টি যখন নামে
মেঘলা আকাশ ফুঁসে ওঠে জীবন সংগ্রামে
প্রেমিক হলে তোমায় আমি উড়িয়ে নিতাম এসে
দুটো হৃদয় হারিয়ে যেত স্বপ্নে বিভোর দেশে;
স্বামী আমি ভাবছি মরে - কোথায় অর্থ-কড়ি!
বৃষ্টি এলেই ঢোক গিল...
দূরে দাঁড়িয়ে শীতে কাঁপবে একাকীত্ব।
বুক থেকে উড়ে যাবে কালো কাকগুলো।
শূন্যে শ্বাসটেনে ক্লান্ত হবে না মানুষ।
অনিদ্রা গুটিয়ে নিয়ে যাবে লম্বা নৌবহর,
তেপান্তরের মাঠ তাদের আটকিয়ে রাখবে।
যদি বাহুবন্ধনে একবার কবিকে বেঁধেফেলো?
বিবসন করো যদি ওর শরীর থেকে ঝরবে আরতি,
পকেট থেকে জোনাকি, নক্ষত্র আর অবৈষয়িক প্রেম।
যদি শয্যায় পেতে সাধ হয় করো, দেখবে দ্রাক্ষারসে
সিক্ত করে তুলিহীন আঁকছে ...
আমাদের বাড়িটার কথা মনে পড়ে
গাঁয়ের মোড়লদের বাড়ি যেমনটা হয়
কাচারিবাড়ি, বৈঠকখানা, শান বাঁধানো পুকুর, পাকা মসজিদ
পুকুর ঘেরাও করা বড় বড় নারকেল গাছ, তাল গাছ, কত কত পাখি
ভারানি খালের পাশ দিয়ে ছোট্ট একটা পথ চলে গেছে বাড়ির ভেতরে
একটা বিশাল ঝাকড়া বট গাছ ছিলো বাড়ির সামনে, বড় রাস্তার মোড়ে
গাছটা এখন আর নেই
গাছটার ছড়ি ধরে যেসব ছেলেরা দস্যিপনা করতো
তাদের কলরোল এখনো শুনতে পাই
বৈঠকখানার পাশে ...
পেয়ারা গাছের একটা সবুজ ডাল
জানালায় উঁকি মেরে আছে
দোল দোল বাতাসের খেলা জানালায়
একটা গোলাপী প্রজাপতি শুধু শুধু ওড়াউড়ি করে
উড়ে চলে যায় - ফিরে আসে ফের - উড়ে চলে যায় - ফের আসে ফিরে
আকাশে জমাট মেঘের আস্তর
শেষ বিকেলের আলো জানালায় আলো-ছায়া আলো-ছায়া খেলে
মাছরাঙার ধ্যান নিয়ে চেয়ে থাকি সময়ের আয়ূর সমান
অনেক আলোকবর্ষ দূরে কোন এক অভিমানী পাখি
গোধূলীর গান গেয়ে যায়
অভিমান ভাঙানোর কেউ যেন নেই ত...
১
গতকালের গর্ভিনী মেঘের ফেরি করতে করতে
যখন পৌছুলাম সুন্দরতার জাহাজ-ঘাটায়
নৈঃশব্দের নোংগর ফেলে কেউ একজন একঠায়।
আমার পকেট উজাড় নক্ষত্রের ধুলোবালি
নৈবেদ্যের খালি ঝাঁপি, গোটাকতক দোমড়ানো
দুঃখের দুর্বায় পিঁপড়ে বসতির হদিস,
অথবা বড়জোর গতজন্মের এঁটো ঠোট।
আর ঋদ্ধ জাহাজী জলদুস্যের সাঁড়াশী প্রবন জুলফির অগচরে
নীল কাঁকরার দাঁড়া জমা রাখে কুহক দ্বীপে
তোমার জন্য আমার হাতে হাজার ফুলের ডালি,
তোমার তরে পথের ধারে লক্ষ প্রদীপ জ্বালি,
তোমার পায়ের ধুলোর আশায় অধীর মাতৃভূমি,
কোথায় তুমি!
দিগান্তরের আকাশ জুড়ে মেলছে শকুন ডানা,
অরক্ষিত স্বদেশভূমে দস্যুরা দেয় হানা,
কোথায় তোমার হার না মানা মুক্তিসেনার দল,
তোমার আশায় ঢেউ তুলেছে শঙ্খ নদীর জল,
পাপের বোঝা পূণ্য হবে তোমার চরণ চুমি,
কোথায় তুমি!
পাতাল পুরীর আঁধার থ...