মশক মিছিল
মেঘের মতো থমথমে মন নিয়ে ফুলের দিকে তাকালে, আপেলগুলো
ঝরে পড়ে আছে, পাখিদের অনিহাও দেখলে। ছোট্ট খালের ধারায়
গড়িয়ে যাবে সন্ধ্যা, দূরে জ্বলে গেছে যদিও দুই-একটি প্রদীপ। ধোঁয়া-ধোঁয়া
হাতছানি দেয়, উঁচু ঐ পর্বত ? একটু দাঁড়ালে, ‘পৃথিবীর এসব কী অযাচিতই
লিখে যাচ্ছি’? ভাবনার পায়ে আবার হাঁটছো, মুখের উপর মশক মিছিল।
পাখিরা সব গাঢ়কাক
রাতের শব্দগুচ্ছে চাঁদ উঁকি দিয়ে যায়- অন্ধকার দ্বিখন্ডিত
তোমার রাত্রির তীরে আছড়ায় প্রসন্ন বিকেল
স্টেশান স্পর্শ করে নিয়ত চলে গেছে দূরগামী মানুষ,
পাথর, মালবাহী যান
সমস্ত সংসার ঘিরে মোহিত এটুকু সময়
এইটুকু অপেক্ষার ঢেউ!
অবকাশ নিলো খুলে জন্মের নীল চোখ, দ্রাবিড় রক্তের ধাঁধাঁ
বড় ব্যথা শূন্যতা।
নগরে অগন্তুক; এখনো আঁকড়ে আছি পিতৃপুরুষের ঋণ সশব্দ গ্রাম্যতা!
বাইরে বাঁশির ডাক- ভেতরের উষ্ণ জানালা
লতা তোমায় করছি মনে, অনেক করে, বুঝছো লতা,
পড়ছে মনে, ভাসছে চোখে, সেই সময়ের উচ্ছলতা,
বইছে বাতাস, উড়ছে তাতে তোমার চুলের গুচ্ছলতা,
আর তুমি না আমার দেয়া গোলাপ খোপায় গুঁজছো লতা।
তোমায় ছাড়া জীবন যাপন আমার ছিলো তুচ্ছ লতা,
হঠাত দেখি চলার পথে আমার ত্রুটি খুঁজছো লতা,
আমার উপস্থিতির চাপে নিজের সাথে যুঝছো লতা,
তাই আঁধারে হারিয়ে গেলাম সাঙ্গ করে উজ্জ্বলতা।
একটা সময় আসবে যেদিন আমায় তুমি খুঁজবে লতা,
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ মাইল জুড়ে উদ্বাহু নৃত্যে মাতে প্রাগৈতিহাসিক শ্বাপদেরা।
যদিও প্রকৃতি মুখরিত হয় পাখির কুজনে,
যদিও যথারীতি বয়ে চলে নদী জলের প্রাবল্যে;
এবং যদিও কৃষকের পদপাতে মথিত হয় ভূমি...
তথাপি ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ মাইল ব্যাপি-
আমরা সম্পন্ন করি একটি অত্যাবশ্যাকীয় সৎকার।
নিদ্রাহীন আমরা, যাপন করি পুষ্পবিহীন আমাদের দীর্ঘ বসন্তটি।
রনি আতিক
৯/১২/২০১২
ধূসর গ্রামের গায়ে রেখে আসা
মাছের ঘামের ঘ্রাণ স্মৃতির অস্পষ্টতা
এখানে রাতের বুক চিরে
তীক্ষ্ণ ট্রাকের হর্ন সমূলে বিদ্ধ করে
কৈশরের সবুজ নোঙর
ঘুমিয়েছো? জেগে আছো?
ঋতুর বৈরী ঝড় নৈর্ঋতে
প্রশ্নবিদ্ধ জীবিকার হাড়
রুক্ষ গাছের গায়ে
রঙহীন লেপ্টে থাকা পাখি
ডানার আওয়াজে তার নাম নেই
নাম নেই পাখনার ওড়াউড়িকাল
এসব কখনো কেউ লিখে রাখে না
এ সমস্ত ক্রমশই
অবসন্ন জেলেদের ফেলে দেয়া জাল
বঙ্গীয় উপসাগর বিষন্ন হলে
জানি তোর মনও বিষন্ন হয়,
তুই তোর শরীর ঢেকে দিস কালো চাদরে ।
কেন কে জানে, তুই বিষন্ন হলে
আমারআকাশেও দুঃখ ভর করে ।
উদাসী জানালার পর্দা
নেচে ওঠে উদ্দাম ক্যারাবিয়ান ছন্দে,
তখন সহসাই মরে যেতে ইচ্ছে করে
অসুখে ভুগে মৃত্যু নয়,সড়ক দুর্ঘটনায় মরে
সংবাদপত্রে ২ কলামের হেডিং নয়- অন্য কোনভাবে ।
মানুষ আসলে খুব যাচ্ছেতাইভাবে মরে
শত্র দ্বারা কিংবা অসুখে ভুগে বেঘোরে,
ঈশ্বর তুমি মানুষ চেন নি, চিনেছ ধর্ম, রাষ্ট্র?
ঈশ্বর তুমি ক্ষমতার দাস, ঈশ্বর তুমি শ্রেষ্ঠ?
ঈশ্বর তুমি মসজিদে বাঁচ, বাঁচ মন্দিরে, গির্জায়?
ঈশ্বর তুমি বুলেটের সাথে, তলোয়ারে আর ক্ষমতায়?
ঈশ্বর তুমি নেমে এসে দেখ, কাঁদছে মানুষ রামুতে,
ঈশ্বর আছ? নাকি আজও তুমি সামিল সংখ্যাগুরুতে?
ঈশ্বর তুমি মনে করে দেখ, চারিদিকে সব লড়াইয়ে,
জিতেছে রাষ্ট্র, ধর্ম বা জাতি, হেরেছে মানুষ -
কখনও কখনও তেতলা একটা মাটির বাড়ি স্বপ্নে দেখি আমি;
সেই বাড়িটা, ক্লাস ফোরের বার্ষিক পরীক্ষা দেয়ার পর যেটি ছেড়ে শহরে চলে এসেছিলাম।
বাড়িটার ভেতর থেকে কে যেন আমায় ডেকে বলে
‘ আয় বাপি, আয়, মাটির দেরাজের ভেতর লুকিয়ে রেখেছিলি যে পাঁচ পয়সাটা,
সেটা নিয়ে যাবি আয় ’
মাঝে মাঝে শহরের বহুদূরে মেঠোপথ আর ধানক্ষেতে ঘেরা শান্ত একটা গ্রাম স্বপ্নে আসে আমার।
মুদ্রণপ্রমাদ জীবন পাণ্ডুলিপির স্বত্ত্ব গ্রহণ করছো সহাস্যে
ফড়িঙের জীবন, অমরত্ব ভেবে নেচে যাচ্ছো তা থৈ থৈ
তৈরি করে যাচ্ছো নতুন নতুন চিত্রলিপি!
আমি তার বুঝি না কিছুই
না বুঝেই হাওয়ার শরীরে নির্জনে চুমু ভাসিয়ে দেই!
হলুদ পাতার দল উড়ে গেছে কোন সে কালে
জীবন বিভ্রাটে কেটেছে কতো না শতাব্দী,
আজ যা দেখি সব ধূসর,
স্বপ্নের মিছিলে ক্লান্তির জলস্রোত
স্মৃতি দর্শনে হারিয়ে যায় গোধূলি পাঠ্য বিস্তার
বাসস্টপে একরাশ শুকনো পাতা উড়ে গেল এইমাত্র...
বাতাসে মেঘের শরীর থেকে ভেসে আসা হিম হিম গন্ধ,
পাশের বারান্দায় একটা মিষ্টি বয়স্ক গলা ডাকছিল,
রবিন... এই রবিন...
একটু দূরেই দাঁড়িয়ে থাকা শালিক পাখিটা টুক করে
পালিয়ে গেল কাকে দেখে?
পাশেই পাকাচুল প্রৌঢ়টি হাত রাখল মেয়ের মাথায়,
কাছেই আরো একটি মেয়ে, বয়স কত? সতেরো-আঠারো?
টফিটা মুখে পুরে খচমচে খোসাটাকে ভরে নিল ব্যাগে!