তটভূমির কাছে মাথা নত করে বলতে চাইছি
সূর্যদেবের জ্বলন্ত চোখের দিকে এখনো তাকাতে পারিনি আমি
এমনকি স্বচ্ছ স্রোতের কাছেও রেখে যেতে পারি্নি স্পষ্ট কোনো রাত-আয়না
ভৌগলিক সীমারেখার অবলুপ্তি প্রার্থনা করি আজ
আমাকে আমার ইচ্ছের উষ্ণতায় বিনা-বাঁধায় যেতে দেয়া হোক
আর অস্থির অগ্নিপিন্ডের সাথে দৃষ্টি-বিনিময়ে আগ্রহী নই
স্মৃতিপ্রণালীর নিরাপদ রেখায় নিরপরাধ ঢেউ যেন
নিয়ে না আসে যজ্ঞের কাঠ, বাঁচবার যাদুমন্ত্র
তোমাকে লুকাবো না, তার চেয়ে ঢের ভালো যদি জেনে যাও।
লুকাবার কিছুই নেই অপর্ণা,
যেমনটা শাড়ির দেয়াল লুকায় না তোমার ঘ্রাণ
কিংবা আমার পশুত্ব - লোভী অভিমান।
হাইকু ভালোবাসি। তিন লাইনের ছোট্ট কবিতাগুলো আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। একটা সময়ে জাপানে ছিলাম; হাইকু আডডা হতো;-মূলতঃ আমার বর্ষীয়ান ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে!
দূরের পার্বত্য শহরে কিছুদিন কাটিয়ে এসে ঘরে ঢোকার পর মনে হল
মাঝে মাঝে দূরে থাকা ভাল, সবকিছু থেকে।
দূরে যাওয়ার মুহুর্তে মনে হয়েছিল এ নির্বাসন হবে অসহনীয়,
সেখানে বন্ধু নেই, কোন কথা নেই, পরিচিত ফুলের গন্ধ নেই,
ঘরের সামনে দিয়ে রাগ করে চলে যাওয়া চেনা বাসগুলো নেই,
আমি নির্জন কারাবাসের বন্দীর মত ছটফট করব।
অথচ ক'দিন পর টের পেয়ে যাই
দূরে না এলে বোধ হয় কখনও আমার
বিষাদগ্রস্ত বিষণ্নমুখ
শুণ্য চোখের দৃষ্টি ।
হাহাকার রব মুছে দেয় সব
শেষরাতে নামা বৃষ্টি ।
নিঠুর জীবন নিঠুর ধরণী
কাঁটাবেধা খালি পা ।
বৃথা আক্রোশ অসহায় রোষ
নোনা ঘামে ভেজা গা ।
কত বেদনায় অশ্রুসজল
ক্ষীণ হয়ে আঁখি দৃষ্টি
তবু যত ক্ষোভ মুছে দেয় সব
শেষরাতে নামা বৃষ্টি ।
দিগন্তপানে মিলেছে অতীত
মধুময় সব স্মৃতি ।
আজ সেই পথে একলা পথিক
পথই তার সমব্যথি ।
পিপাসা তোমার মিটবে কি আস্বাদে
সেই ভেবে ভেবে গোধূলি থিতোয় সাঁঝে
রঙিন মুখোশ ছুঁড়ে ফেলে নীল খাদে
জন্মালে ফের ক্লেদজ কুসুম মাঝে
জলের গেলাস জলের গেলাস
রাতের প্রহর বাড়ে
বুকের ভেতর তেষ্টা জমে
আবছা অন্ধকারে।
মেঘে ঢাকা পড়ে যাওয়া তারাগুলো মেঘ সরে গিয়ে
হঠাৎ করে সারা আকাশে দৃশ্যমান হয়ে উঠলে আমি চমকে উঠি
কয়লার খনি খুঁড়তে খুঁড়তে হঠাৎ করে হীরার দ্যুতি ঝলক দিলে
ক্লান্ত শ্রমিকের লোভী চোখ যেভাবে চমকে উঠে ঠিক সেভাবেই।
আমার তখন মনে পড়ে যায় ঋত্বিকের ছবিটির কথা,
ঝিলের পাড়ে বসে হংসধ্বনির আলাপ গাইতে থাকা অনিল চ্যাটার্জি
কিংবা ছেঁড়া চটি জুতা নিয়ে হাঁটতে থাকা যে মেয়েটিকে খুকী ভেবে
একদা এখানে পাহাড় ছিল,
একদা এখানে সাগর ছিল,
ছিল অপরূপ নিসর্গ,
ছায়াময় প্রকৃতি,
পাখির কূজন
আর প্রকৃতির সন্তানেরা -
হোয়াইকংয়ের আদিবাসীরা।
ওদের হয়ত
গোলা ভরা ধান ছিল না,
গোয়াল ভরা গরু ছিল না,
পুকুর ভরা মাছ ছিল না,
কিন্তু ওরা তো পাহাড়ি-
প্রকৃতিতেই জন্ম,
বেড়ে ওঠা,
মৃত্যু।।
ওদের কোন বৈষয়িকতার বালাই নেই,
মুখ ভরা হাসি ছিল,
গলা ভরা গান ছিল,
প্রাণ ভরা খুশী ছিল,
মুজিব নামে যে খোকাটি টুঙ্গিপাড়ায় জন্মে ছিল
কিশোর বয়স থেকেই তার দেশপ্রেমটা মর্মে ছিল
দেশকে ভালোবাসা তার সদাই সকল কর্মে ছিল
মোদের হয়ে চাবুক সম পাক শাসকের চর্মে ছিল
বৈষম্যহীন আচরণটা সদাই সকল ধর্মে ছিল
অগ্নিবীণা কন্ঠে তার আর গীতাঞ্জলি মর্মে ছিল॥
বাংলাদেশের রাজনীতিতে মুজিব যখন যুক্ত হল
স্বাধীনতার ভিত্তিটাও অনেক খানি পোক্ত হল
অসংখ্য বার কারাবরণ এবং কারামুক্ত হল