ঘর ভর্তি কাঁচা ফুলের ঘ্রাণ, নীলাভ আলো
আলোর ভেতর আমাকে দেখছি না!
এখনও ছুঁইনি ওই দু’টি হাত ও আঙুল
আমি ভেবেই পাই না চোখের আলোতে
এতো রহস্য কোত্থেকে আসে
কোত্থেকে বিড়বিড় করছে যমজমায়া...
বাহ্ কি প্রাণবন্তে জোড়াঠোঁটখানি কাঁপছে একা
সাক্ষাতে, বিবাহ-মধ্যরাতে
শিহরন, ঠিক দু’টি মন; কিছুই ভাবার থাকে না
একটা সময় আসে যখন চুপচাপ দাঁড়াই
চোখ বন্ধ করলেই মনে অনেক কথা জমে
‘আমরা ভাতের কাঙাল
মোড়লের ভাগ্য নিয়ে আসিনি
লাঙল কাঁধে নিয়ে সবুজের রাখালগিরি করি
খরা-মঙ্গার দুনিয়ায় আমরাও মাজরা পোকার মতো
কুরে কুরে খাই মাটি...’
আমি তাকে টেনে বসালাম, বললাম -
শ্রাবনের মুষল-বৃষ্টি ধরিত্রী ভাসমান, মাটির কসম,
কসম এই বিদ্যুৎ চমকের
আমাদের এই কলমের ফলা, যা চষে শব্দ-বীজ
আর ফলায় শিল্পের খোড়াক, এ সবই আপনার দেয়া...
এই মাটি থেকে পাওয়া...
প্রতিদান কিছু দেইনি আমরা - চিরঋণী
তারা-মুখ তার
বহু রাত পর
একটা রাতের তারাকে দেখছি
অনেক অনেক রাত
স্মৃতিতে খোদাই জ্বল জ্বল
এমন একটা রাত
যখন রাতের অতিথি তারারা
মশগুল পান-পাত্রে
গীটারের তারে ফুলকি ফুলকি জোনাকের ঝাঁক
সাগরের পাড়ে এমন একটা রাতের আকাশ
অন্ধকার করে দিয়ে
একটা তারার মুখ বারবার
মনে পড়ে - সেদিনের তারা-মুখ তার আর নাই।
সীমানা
আমাকে যারা হাসায় কিংবা কাঁদায়
অথবা আমি একইভাবে যাদের কাছে দায়ী
আবার ছুটবে বেগে করতলে সূর্যের ঢেউ
বিরান মাঠের বুকে উঁকি দেবে সবুজের স্তূপ
দীর্ঘ দুপুর জুড়ে ছায়াময় নিরালা নিশ্চুপ
শুয়ে র'বো দ্বিধাহীন কোন এক পুরনো অসুখ!
এই পথে ছায়া ফেলে হাতছানি দিয়ে যাবে কেউ।
শিশুর গালের মতো কোমল অলস কোন দিনে
আবার আসবে দেখো মিলনের মধুময় তিথি
চোখের গভীর কোণে ছায়াপথ তারা ভরা বীথি
জোনাকি জ্বালিয়ে জেনো আমাদের নেবে ঠিকই চিনে
আমাদের ভালোবাসা-রক্ত-স্বেদ-দেহের পিপাসা।
শরীরের সমস্ত নোঙর একসাথে গেঁথে যায় মাটির ভেতর
আমি চোখ রাখি দিগন্ত-ধূসরে
মহাসাগরের নীল থেকে মহাকাল মুছে যায়
আমি বাতিঘর খুঁজে মরি দিগন্তে, আকাশে, আতুঁড় ঘরের বারান্দায়
যারা আমাকে নাবিক বলে ডাকেন তারা জানেন না
ক্ষুধার্ত গাঙচিলের ডানা যখন হাওয়ায় পালক মেলে
তখন নন্দনতত্ত্ব দেখতে অনেকটা ফ্লাইং ফিশের মতো
পৃথিবীর তলদেশ নিকটবর্তী হয়
শেফালির সন্ধ্যা-স্মৃতি বারবার চোখে ফিরে আসে
অপেক্ষায় আছি, বসন্তে
আমি অপেক্ষায় থাকি
বাতাসের দরজায় কড়া নাড়ে মেঘ
আমি নিস্পলক থাকি
একটা নক্ষত্র জন্ম নেবে শীঘ্রই
ঘুমে ঢুলু-ঢুলু একটা পাহাড় হঠাত চমকে ওঠে
আর আমি মগ্নতায় চেয়ে দেখি
পলাশের রক্তে লাল একটা ভোরের পাখি চৈত্র পাড়ি দ্যায়
অস্থির আমার ভেতরটা তরপায়
একটা ভোরের অপেক্ষায় থাকে কোটি কোটি চোখ
একটা গুবরে পোকা সারারাত পাহাড় বেয়ে ওঠে
একটা ঝিঁঝিঁ পোকা নৈ:শব্দের বনে ডাকে
এই বৈশাখে
রায়হানপুর গ্রামখানি কাত হয়ে শুয়ে আছে
ভারানি খালের পাড়ে
বিশখালি নদী-গর্ভ প্রসব করেছে এই জনপদ
এখানে ভয়াল সময় উত্তাল নৌকার পালে ভাসে
সূর্যের থাবার নীচে টাগরা শুকায়ে যায়
গ্যালো বছর আউশ-ধান উড়ে গেছে সিডরের তোড়ে
এই বছর আমন ধানের মাঠ খেয়ে গ্যাছে রিপু-রাজ
নদীতে রাখাল, খালে শিশুদের বৈকালিক খেলা যত
মুখে লালা নাই, বুকে দুধ নাই, দেহ মরা-মাছ
পেটে মাঠ জ্বলে, কাঁধে জোয়ালের ক্ষত
এইখানে আজ অস্তিত্বের শেষ নোঙর,
কাগজের নৌকো বানিয়ে ভাসিয়ে দেবার সময়ও
হয়েছে গত। গাছের প্রাণ গেছে ফিরে
মৃত বাকল হয়ে দিকহারা ঝড়ে। কবে কোন স্মৃতিস্তম্ভে
পাগল ঠাওরানো ভাস্কর তার দক্ষ ছেনির টানে;
একেঁছে সহিষ্ণূ কাফেলা। পর্বতসম ভালোবাসা
নিয়ে কারা যেন মুড়েছে হৃদয়; জন্মেছে প্লাস্টিক জাদুঘর।
আল্পনা এঁকে সেজেছে প্রশস্ত রাস্তাখানি, নির্দয় তাতে
সিমারের দল লেপেছে কালিমা খালি। রাত-ভোর মাঝে
এক মুঠো সোনালি জরি
_____________________
মেঘের কাছে চিঠি দিও
অম্লভাব চোখের জমিনের কোমল ছোঁয়ায়
লবন শুষে নাও অমল রুমাল
হাওয়ায় উড়িয়ে দাও মলিন মখমল। মল বাজাও । মল জড়ানো
ভেজা পায়ে গোলাপের ঘ্রান জড়িয়ে নাও
যে চুড়ি বাজে না, শুধু কাঁচ হোক
ছড়িয়ে দাও শস্য ক্ষেতে
কিছু দানা হোক, কিছু দেনা হোক
অসময়ের খামে।
মেঘের কাছে চিঠি দিও
আজ সারাদিন পাখিদের স্নান -
আমরা দুজন শুধু বারান্দা!
লেখক: ক্রেসিডা
একেলা আকাশে ঘুমিয়েছে অন্ধকার
অন্ধকারই পাশে রাখছো নিত্যদিন
অন্য আবেগে
ভাষা জানি না, তবু বলছি অনেক কথা
ইচ্ছা-আত্মজিজ্ঞাসা, এক ইঞ্চিও নড়ে না
মানাভিমানে আমাদের অনেক কথা হয়
ভালোবাসা হয় না...
ভেতর-বাহির দু’রকম ভাবায় এই
ভেতরটা দেখতে চাই; খুলে ধরো
বুক, চিবুক, আমি মিলিয়ে যাই
অপেক্ষা আমাকে বুঝতে এতটা প্রীতি
গভীরে টানো দুই ভাগ করো, কেন
এই একটি চিহ্নে দেখো প্রতিশ্রুতি