আমারই পাশে শুয়ে থাকে সে
আমারই সাথে হাসে, কাঁদে, গায়
ভরদুপুরে ভাতঘুমে শারদ সংখ্যায়
আমারই সাথে তারও ভারী হয়ে আসে চোখ।
সকালে হেডলাইনে অহেতুক উত্তেজনায়
সেও খুঁজে কবিতা আমার, সাহিত্যপাতায়।
কড়কড়ে মুড়ি আর গরম চায়ের পেয়ালায়
তারো মনে হয় আহা, শুধু তুইই নাই।
টক শোতে দেরী হলে - আঙুল ছুঁয়ে হাতে
সেই বলে এই যে ঘুমুচ্ছো বেশী রাতে,
ভোরে স্বপ্নের দলে সে কি আর ধরা দেবে?
আমিও ভাবি, তারই মতো,
ভালো করে তাকালেই মনে হবে
দিঘীটার জলে জোছনার ফুল ফুটে আছে
তখন অনেক রাত, তখন জোছনা পরিপক্ব
তখন জোছনা হীরার কুচির মতো
কথার-খেই-হারিয়ে-ফেলা-কোন-বৃদ্ধের চোখের মতো জোছনা তখন...
অথবা-সে জোছনাই নয়,
নগ্ন কোন যুবতীর মৃত লাশ জোছনার মতো
দীঘিটার এপাড় ওপাড় জোছনার মতো
তখন অনেক রাত, তখন জোছনা পাগলপারা
অথবা আপনি জীবনের সব অভিজ্ঞতা হাতের মুঠিতে
নিয়ে সসংকোচে দাঁড়াতে পারেন দীঘিটার ঘাটে
ধরেন আমার বাড়ি নাই
অথবা বাড়িতে আমি নাই
তাতে কার কী যায় আসে?
তার মানে দায়-স্বীকার করাটা দরকার?
ধরেন পঁচিশে মার্চ রাতে যদি শেখ মুজিব বাড়িতে না থাকতো?
অথবা হেমলকের পেয়ালায় লাথি মেরে সক্রেটিস চলে যেত বাড়ি?
অথবা জন্ম-বাড়িটা রক্ষা করবে বলে যারা যুদ্ধে গেলো, আর বাড়ি ফিরলো না
কোনদিন
অথবা জন্ম-বাড়িটা রক্ষা করতে না পেরে যারা ওপাড় পালিয়ে বাঁচলো
আর ফিরতে পারলো না কোনদিন
(১)
আজ ফাগুনের ফুলগুলি সব ইচ্ছে করে মনের ভুলে,
পথ হারিয়ে যাক জড়িয়ে তোমার দীঘল কুন্তলে।
মন পবনের ভেলায় ভাসুক রোদ্দুরের ওই সুরগুলি,
যাক ছুঁয়ে যাক বসন্ত রং তোমার মনের ঘুলঘুলি।
(২)
এসো সব ক্রন্দন হাহাকার
এসো সব নিসীম শূন্যতা
ধূলির গর্ভে ফুটায়েছ যে ফুল
নিয়ে যাও তার স্নিগ্ধতা।
(৩)
চিবুক ছুঁতে গিয়ে হঠাৎ ছুঁয়ে দিলাম চুল,
সেটাই ছিলো ভুল আমার সেটাই ছিলো ভুল।
- আমিও একটা নৌকা বানাইছি, কী দিয়া - কমু না
(নৌকার প্রসঙ্গ উঠতেই সুশীলরা নড়েচড়ে বসলেন
কথাবার্তা কোনদিক দিয়া কোনদিকে যায় বোঝা চাই
আজকাল টকশোগুলা সব লাইভ, কাট-ফাট বাদ
ঝলসানো আলো;
কী কইতে কী কইয়া পরে আদালত অবমাননার মামলায় পড়া যায়)
- হাজার বছর ধরে আমি খাল খুঁজিতেছি এই বাংলার প্রান্তরে
(খালের প্রসঙ্গ উঠতেই আবার উসখুস চারপাশে
নিরপেক্ষ থাকাটাই আজকাল জ্বালা, ব্যাবাক পক্ষেই কালি
১.
একেবারে মেঘে ঢাকা নিশী, জলবিন্দু হয়ে এসেছো, অঝোরে নামবে
নাকি ? ঘাস ভিজে গেলে বসতে কষ্ট হবে, পাতারা কাঁদো কাঁদো হলে
বতাসের দু:খ বাড়বে, ঝিরিঝিরি কাঁপাতে পাতা,- কী হয়েছে কী ? পথে পথে
কাঁদে কারা, ঘরহীন মানুষের কথা শোনে নাকি কেউ ? ভাবছো কী আর
কাব্য লিখে কী হবে ? মেঘ কী পৌঁছিয়ে দেবে ? ‘এঁ বিরহে মরি’!
২.
চলে যাও ফিরে- কষ্ট হয় দেখতে, হঠাৎ রোদ নিভে যেভাবে পথের পরে
তোমার কথাই ঠিক।
তুমি যা যা বলো;
আমি মাথা-ঘাড়-লেজ নাড়ি...ঠিক...ঠিক...
তুমি বললে - ওড়াও ঘুড়ি
আমি মাঞ্জা দেয়া সূতা আর লাটাই নিয়ে তৈরি ততক্ষনাত
ঘুড়িবাজ, মাঠ-ঘাট, গাছ-গাছালি, লাটাই-সূতা
সব্ই উড়লো
হালায় খালি ঘুড়িটাই উড়লো না...
তুমি বললে - বড়শি ফেলো
আকর্ষনীয় খাবার (টোপ) আর ছিপ নিয়ে আমি তৈরি নিমিষেই
মাছ ধরা নৌকা স্থির; বড়শি ফেল্লাম -
এখন তুমি অনেক দূরে থাকো
এখন তুমি আটকে থাকো কাজে
এখন তুমি সঙ্গীবিহীন একা
কাটাচ্ছ দিন মগ্ন নিজের মাঝে
সেই পুরনো টুকরো কথাগুলো
স্মৃতির মাঝে যখন তোলে ঢেউ
খুব বিজনে আঁধার নেমে এলে
মিছেই ভাবি ফিরবে বুঝি কেউ
ফেরার পথে অনেক পাহাড় নদী
ফেরার পথে দ্বিধার জোয়ার-ভাটা
ফেরার পথে কুটিল চোরাবালি
খিড়কী-দুয়ার জটিল খিলে আঁটা
তোমার-আমার মুখোশগুলো আজও
মুখের সাথে লেপটে মাখামাখি
[ ভেতরে সংগৃহীত মধ্যম আবেদনের প্রণয়-ভাস্কর্য। কারো কোন অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে বিধায় অন্দরে রাখলাম। ]
…
ঠিক আধাঘণ্টা আগে বাড়ি ফিরলাম,
সারাদিন কড়া রোদের নীচে দাঁড়িয়ে থাকার পর,
ঘরে ঢুকতেই টুপ করে ঝড়ে যায় রৌদ্রের গন্ধ।
ইতিহাস হয়ে যায়, তীব্র সূর্যালোক।
আমি ইতিহাস পড়ি না, বুঝি না, পাত্তা দেই না,
রৌদ্রের গন্ধরা কোথায় মিলিয়ে যায়! মুহূর্তে, ইতিহাস হয়।
রাস্তার মোড়ে দেখা ক্ষণিকের রূপসীরা -
তাদের সমস্ত চর্চিত সুতীব্র রূপ নিয়ে চোখের পলকে উধাও হয়,
বুকের ভেতর চকিত তীব্র তোলপাড়,