জল গড়িয়ে চলে
পতনেই বুঝি জলের আজন্ম সুখ,
বাধা পেলে প্লাবন ডাকে,
ভাঙ্গনের স্রোত ভাসায় ফুল্লরার বুক।
ও মেয়ে,
তুমি কি গো জলকন্যা?
কেবলই আপন খেয়ালে চলো?
ডুবসাঁতারে সঙ্গে নিলে
কী'বা এমন ক্ষতি হতো বলো?
এই জনমে নাইবা হলো,
রইলো আরো হাজার জীবন....
তোমার সাথে স্নানে যাবো
জেনে নিয়ে জলের সমীকরণ।
ভাসাও, ভাঙ্গো কিংবা মারো করে আস্ত বরফ জমাট,
জলের তোড়েই খুলবো সেদিন তোমার সকল বদ্ধ কপাট।
এখন রাত প্রায় মাঝামাঝি
তিনশো বছরের হট্টগোলের এই শহর
নিঝুম ঘুমে তলিয়ে আছে কয়েক ঘণ্টার জন্য ।
দিনভর ক্লান্তির পর
যেমন মড়ার মত পরে থাকে
স্টেশনের কুলি, অফিসপাড়ার সরবতওয়ালারা –
কিংবা ঐ তিনজন রিক্সাওয়ালা ।
স্যাঁতস্যাঁতে গলির হলুদ আলোআবছায়ায়
চাকায় চাকা ফেলে
ঘুমিয়ে আছে তিনটে রিক্সা ।
কে জানে,
ওদের অন্ধকার বুকে শুয়ে আছে কিনা
পাড়ার নেড়ি, হুলো আর ইঁদুরেরা !
একদিন কিছু কান্নারত মুখ হাটছে দেখি
আমার পিছু পিছু
কোন এক বিকেলে নির্জন পথে একলা পেয়ে
ওরা টান্ দিয়েছিল আমাকে
খুব জোরে হাত ধরে
পথের পাথরে বসে আমিও কেঁদেছিলাম
ওদের সঙ্গে
ফুলেরা পড়ছিল পাথরে ঝরে
করুণ এক কান্না যেন কোথা থেকে আসে
বৃষ্টির শব্দের মতো
আমাকে তুমুল ভিজিয়ে দিতে
আসে কুয়াশার জাল বিছিয়ে বিছিয়ে
আমি যেন পলাতক
আমাকে ধরে নিতে
আসে পৌরাণিক নায়িকার মতো
প্রেমের নূপুর পায়ে
এক.
তারপর জানা যায় কোন এক ভুল বুঝে চলে গেছে কেউ,
কোন এক কথা তবু থেকে গেছে বাকি; --
থেকে যায় অপসৃত ফোঁটা জল, প্রতিশ্রুত ঢেউ!
রং লেগেছে গাছের পাতায়
রং লেগেছে মনে,
বছর ঘুরে ফের এসেছে
ফাগুন সংগোপনে।
গোপন তো নেই নির্মমতা,
নিত্য দেখি শোক,
আজকে রঙের মিছিল দেখে
জুড়াক দুটি চোখ।
চোখ জুড়ানো ফাগুন এনো
মন ভুলানো হাওয়া,
ধূসর রঙের সময়টাতে
এইতো মনের চাওয়া!
[শেলির 'অৌড টু দ্য ওয়েস্ট উইন্ড' কবিতাটি ইংরেজি সাহিত্যের রোম্যান্টিক যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা। এখানে বাংলা রোম্যান্টিক যুগের ভাষা-শব্দ-চিত্রকল্প অনুসরণ করে কবিতাটি অনুবাদ করার চেষ্টা করা হয়েছে।]
১.
উদ্দাম ঈশানী ঝড়! আশ্বিনের প্রাণের নিঃশ্বাস
তোমার অদৃশ্য স্পর্শে উড়ে যায় ভয়ার্ত চঞ্চল
আজ আমার মন খারাপের রাত,
কল্পনাতে চাইলে আমি আলতো করেই
রাখতে পারি তোমার হাতে হাত।
(দেখতে দেখতে নতুন বছরের একটা মাসও শেষ হয়ে গেল, ফেব্রুয়ারি চলে আসলো। ফেব্রুয়ারি মানেই বই মেলা, ফেব্রুয়ারি মানেই একুশে... তবে এই বছর হাজার মাইল দূরে থাকার কারণে দেখা হবে না তার অনেক কিছুই। যাই হোক, পুরনো অসমাপ্ত লেখা ঘাঁটতে গিয়ে একটা কবিতা পেলাম। অনেক অনেক পছন্দের শহর ঢাকার এক শীতের রাতে এই কবিতার শুরু হয়েছিল। কবিতাটি নিয়ে বেশ কিছুদিন নাড়াচাড়া করে অবশেষে এই রূপে দাঁড়ালো সেটা...
হাঁপ ধরে যায় যন্ত্র হলে, যন্ত্র হলে টের পাওয়া যায় জীবন মানে যান্ত্রিকতায় তোমার আমার ভুল হয়ে যায়; ভুল হয়ে যায় বলেই বোধহয় থমকে গেলে আর চলেনা সাড়া দেয়া, নাচেনা আর কাঠবেরালি, খরগোশেরা বন্দী এখন কারাগারে, সব ফুলেরা পালিয়ে গেছে শহর ছেড়ে; সবাই পালায়। পালাতে পালাতে অস্থির হয়ে গেছে জারুলেরা সব -- পাখীদের মত ডানাময় পাপড়ি, খসে যেতে যেতে, যেতে যেতে, কেবলই জেনে যায় -- এর চেয়ে ঝড় ভালো!