পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলে সেনেগাল আর গিনি বিসাউ থেকে আরো পশ্চিমে, আটলান্টিককে নিচে ফেলে আকাশ দেখার জন্যে জেগে উঠেছে যে কয়েকটা আগ্নেয় পাথরের দ্বীপ, সেই রুক্ষ মরুস্পৃষ্ট দ্বীপদেশ কাবো ভের্দেতে কয়েকটা পতাকা নতমুখে ভাবছিলো সেজারিয়ার কথা। কারণ সেজারিয়া আর নেই।
অথচ তোমার ভিড়ে লুকোচুরি খেলে দেখি একফোঁটা বুনোজলে ঢাকা পড়ে গেছে তৎপর উষ্ণ আকাশ, রোদ সমাহিত। কৃতার্থ বনভূমি নিবেদিত বাতাসের উতলা তরঙ্গে আহরিত বিষ ঢালে, তোমার শেকলে জমে পরবাসী স্বেদকণা, স্তূপাকার; নিঃশ্বাসে নৈবেদ্য যার, তার তবু ইজেলের পেলব ত্বকে প্রতিটি রাতের ছোবলে আধেক জীবন;
অনেকগুলো চোখ বারবার পিছু ডেকেছে,
অনেকগুলো শব্দের আহ্বান নির্ঘুম চাদরে ছেয়েছে রাত।
চেসাপীক বে’র ঘুর্ণিজলে ডুবিয়ে দিয়েছি স্মৃতির বরাভয়,
বারবার হয়েছি নিরুদ্দেশ- প্রিয়মুখ
কিম্বা বেপথু অস্তিত্বের মায়াডাক পিছু ফেলে।
কৈশোরের মধ্যযামে ব্রহ্মপুত্রের লাইলাক স্রোতে
দীর্ঘশ্বাস মিশিয়ে দিতে দিতে প্রিয়বন্ধু বলেছিল-
“তুই চলে গেলে জীবনটা এলোমেলো হয়ে যাবে;
কেউ আর ফেরাতে পারবেনা। তখন দোষ দিসনা।”
বুকের দেয়াল ঘেঁষে যে নদী চলে গেছে
মদ্যপ মহাসাগরের দিকে,
সে বলে গেছে -
আগামী বর্ষায় জল নোনতা হলেই
পরিচিত সবাই যাবে নৌকাবিহারে।
এরপর থেকে
ল্যাম্পপোস্টের হলুদাভ চোখে জড়ো হয়
উচ্ছৃঙ্খল পোকাদের নীল নীল শরীর।
জ্যোৎস্না রাতের কাকতন্দ্রা চুপচাপ ভাঙে
কাঠুরিয়া মন জঙ্গলের দিকে হাঁটা ধরে,
উড়ুউড়ু দাবানলে ফুটে
রিমঝিম বৃষ্টির জলজ ফুল।
মাসুম
নিউইয়র্ক
শাদা রঙ শোকের শহর একটানা মৃত চোখে
লিখে রাখে এক একটা দিন
কাটানোর বিবেকী বিস্ময়!
স্খলিত আঙুলে তুলে পতিত স্বপ্নের পরাজয়
এ শহরে অমায়িক হিমাংকের নিয়মিত
পাতাল প্রদেশে পূজা হয়
সেই একই দেব সেই এক দেবদাসী,
শঙ্খের দুপুর ভাবে কীর্তনে কান্নায়
এখন গাছের সাথে বরফের যে সমস্ত
প্রাকৃতিক সঙ্গম নির্মিতি; হায়
ঋতুর অন্ধকারে ধ্যানের প্রকার
নিতান্তই অমূলক প্রয়োজনহীন
হিমাংকের নীচে শুয়ে ঘাস ভাবে
একদিন দাড়াতে হয় যতিচিহ্নের মুখোমুখি, একদিন জানা যায় আর কোন খোলা নেই অবারিত পথ, আপাতত এই। একদিন জেনে নেয়ার চাইতেও নিতে হয় মেনে - সব পথ শেষ হয় কোন এক গহ্বরে!
অতলান্ত গিরিখাতে একদিন তাকিয়ে দেখি অপরিসীম শূন্যতা স্থির হয়ে আছে, স্থির হয়ে জমে থাকে আবদ্ধ বাতাস। মানুষের তলানিতে তবুওতো বিষ, নির্বিষ ছাই থাকে দাবানলে;
সব দেখি, সব ঘটনা-রটনা আমাকেও বুঝে
ইচ্ছে করে রহস্য প্রাণে উড়াই ইচ্ছে প্রতারণা
কামনা জর্জর সম্পর্ক এমন যে, প্রাণও খুঁজে
কি আশ্চর্য, নিজের চোখটিও নিজে দেখি না
গালে রেখে হাত কি ভাবছো? একবার কও
সুদূরতা কতদূর থাকে, বিমর্ষ স্নেহের অতীত
সম্মুখে বসিবার আগে যত্নভরে একবার জাগাও
আগুনে পোড়াব না, সামলাও ব্যর্থ দু’টি হাত
আর্তনেশায় চমকে ওঠো, রাত জাগে হতাশায়
বিষে বিষক্ষয় বলে যে ব্যাপারটা আছে আমার বেলায় সেটা একবোরেই অকাট্য। দুঃখ, বিষন্নতা, হতাশা এই জাতীয় প্রতিটি ব্যাপার থেকে বের হতে আমার বিষে বিষক্ষয় পদ্ধতির ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে। যেরকম একবার এক কষ্ট পেয়ে মূক ও বধির হবার উপক্রম হয়েছিলো, তখন আমাকে বাচাঁয় The Bicycle Thief.
আমাদের যা নেই
তাই নিয়ে ডেকে গেল একটা লাজুক ঘুঘু
তার ডাকের ভেতর তৈরি হয়েছিলো কতগুলো মহাকাব্য?
দৃশ্যের ভেতর যা নেই
তার ইতিহাস তৈরি হয় অচিন অক্ষরে
আমরা নই সেই ভূবনের বাসিন্দা
কয়েক দশক দেখেছি আমি
একাত্তরের যুদ্ধ দেখেছি আমি টান টান যৌবনে
কাতারে কাতারে বুলেট খেয়েছিলো সোনার বাংলা
হিন্দু-মুসলিম কেউ বাদ যায়নি।
রক্ত জমাট বেঁধে আটকে গিয়েছিলো ড্রেন
রক্ত জমাট বেঁধে এক সময় কালো হয়।
মাথায় লাল-সবুজ এঁকে বিশ্বাস ভর করে
ঝাপিয়ে পড়েছিলাম অস্ত্র হাতে,
বন্ধুরা শহীদ হয়ে গেলো চোখের সামনে।
নরকের থেকেও ভয়ঙ্কর আগুনের পুরে গেলো বাংলা।