১
প্রবল তরঙ্গে আমি ভেসে যাই
নির্লিপ্ততার পিছুটানে হতবাক
কোথায় যেন তলানিতে ঠেকেছে প্রাপ্তির
ঘোলা জল।
হিসেবের খাতাঘরে চিরকাল ঘ্যানরঘ্যানর
দ্বিধাযুক্ত সমান্তরাল রেখার টানে চুপ করে
শুনতে থাকি চূড়ায় থাকা ছায়াদের
দম্ভকথন।
অনেক দিন আগের কথা
বুবুন বলেছিল তুই আমায় ভালোবাসিস
ঊন্মোক্ত নিবিড় ছায়াতলে দাঁড়িয়ে ভেবেছিলাম
প্রথম স্বীকৃতির সুখ।
তারপর কেটে গেছে সময়
১.
জানি, তুমি আর আমি আমাদের হাতে
হাতে রঙে রঙ মেখে জীবনের তৈলচিত্র এঁকে
নেবো বলে ক্যানভাসে নেমে আসে ঝড়;
অথচ রাতের সাথে একা হলে পরে
দেখি তেলরঙ মুছে গেছে জলছাপে।
জল এর কাছে ঋণী সখা -
আমাদের মৃৎপাত্র সব!
(পটুয়াখালী, ২৭.০৯.২০১১)
২.
ভালোবেসে শালিকের মত একা হলে টের পাই
হরিণী পৃথিবী তার চোখ থেকে মমতা হারায়;
শালিকের সংখ্যায় ব্যাকরণ গড়েছে পৃথিবী।
আর আমাদের চোখে জল-ছায়া ঘিরে
মহুয়ার বনে মেতেছে যখন ফাগুনের ঝোড়ো হাওয়া
পাতায় পাতায় শিশিরের মতো ঝরে গেছে দিনগুলো
পাখিদের ভিড়ে উড়ে গেছে কারা ফেলে সব চাওয়া পাওয়া
ক্লান্তির ভারে কুঁজো হয়ে আছে হৃদয়ের ঋণগুলো
ধূসর মলিন স্মৃতির পালক পড়ে আছে আঙিনাতে
সে কি প্রেম নাকি বিরহ বিলাস সময়ের রূঢ় হাতে?
নলটোনা ঘাস এর মত সবুজের একমুঠো দিয়েছিলে নোলকের তীব্র ঘ্রাণ;
উত্তুরে বাতাস তুমি, দখিনের হাওয়ার মত প্রকৃতির অফুরান অভিধান
জেনেছিলে, আর তার ভাজ খুলে নিরাকার বেঁধেছিলে কোন এক রমণীয় সুর;
মাধবীলতার বনে মাধবীর মত তুমি - তুমি আর তুমিময় একটি দুপুর
একসাথে কাটানোর পর - প্রজাপতি সময়ের ডানা জুড়ে এসেছিলো নীল রাত;
রঙ্গনের রঙ নিয়ে মেহেদীর আলো মাখা পৃথিবীর সবচেয়ে মায়াবতী হাত
হতবাক, রূপ ধরে হেসে ওঠো আপনগৃহে
নিজসমগ্র ঘিরিয়া রাখো, যেন সর্তক নিমার্ণ
ফুল-মাটির-স্নেহে
অন্ততঃ একটি দিন— তুমি শুধু মন টেনে ধরো
তোমার জামার ভেতর একবার হই নিশ্বাসহীন
আপনগৃহে হলাম নর্দমারমুখ, বৃক্ষতলবাসি বিবশদেহ
আগত স্নেহময়ী, ভেঙো না প্রতিশ্রুতি, পিনপতন
নীরবতা জেনেছে কি আঙুল ফোটাবার ছলচাতুরি
কিংবা পাল্টানো নিয়ম
এখানে এমন গান, ঝরে পড়ে গোলাপের দল
ঘাসের ওপর পড়ে, এই সুর তার চেয়ে ধীর,
আলোছায়াময় রাতে গিরিপথে শিশিরের জল
তার চেয়ে এই গান আরো সুকোমল সুনিবিড়।
অপরূপ স্পর্শ আনে, সেই গান দুই চোখ জুড়ে
টেনে আনে ক্লান্ত ছায়া, ঝরাসময়ের সেই সুর,
অস্ফুট পাতার কলি ডানা মেলে দেখো বীজ ফুঁড়ে
অসীম আকাশ থেকে বয়ে আনে ঘুম সমধুর!
নদী কি পারে- তার গহীন অতলে
জন্মান্তরের যত সঞ্চিত ব্যথা
উপচে দিতে ঢেউয়ের ছলাৎছলে ?
নারী কি পারে- এমনি অবহেলে
মুছে ফেলতে দেহের সন্তাপ
ঐ খরস্রোতা নদীর জলে ?
যদিও পূণ্যার্থী ছিলাম না কখনোই,
তবুও নদীকে নারী ভেবেই গিয়েছিলাম তীর্থস্নানে
ছুতেঁ চেয়েছিলাম জলের শরীর, মৃত্তিকা পলল,
অঞ্জলি পেতে নিতে বেহুলার খোঁপা থেকে খসে পড়া ভাঁটফুল-
হায়- সেখানে ভাঙ্গনের উল্লাস, শোনিতের ধারা ,
সবুজ বৃত্তের মমতা ছেড়ে ভিনদেশের পথে
পা বাড়ানোর ইচ্ছে কোনদিনই ছিলোনা আমার
স্বজনদের মায়াবী সুতোর গিঁট,
সবুজ রংমালের দোলা
সব আজ মুল্যহীন।
খুব বেশী আখাংক্ষা ছিলোনা আমার, পাখী্র মতো
মাটির গন্ধ চেয়েছিলাম
দিতে পারেনি স্বাধীন এ স্বদেশ।
যে দেশ তার সন্তান্দের পঙ্গু বানায়, সে ভূখণ্ড
কতোটুকু স্বাধীনতার স্বাদ ভোগ করে?
সাজেদুল চৌধুরী রুবেল
কি করে লুকোই বলো তোমার দস্যুতা―
বিবশ স্তনের চুড়ো
শিহরণে থরো থরো
কি ভীষণ ভয় হয়,
যদি বলে দেয় সব?
নিজের উচ্চতা মাপি! ‘গা-ঘেঁষে দাঁড়াই’ আলাপে-প্রলাপে
‘গা-ঘেঁষে’ দাঁড়াবার ঢরে বার-বার দম বন্ধ হয়ে আসে
ছায়ার আঘাতে
তোর চাপাহাসি খুললেই গালের টোল খুবই স্পর্শাচেতন হয়
আমার চোখও লুকিয়ে লুকিয়ে হাসে নিয়ম মোহের ডানায়
এসময় তোর দেহবাতাসের সুঘ্রাণ ছাড়া দাঁড়ানো কী সম্ভব?
কতটুকু দাঁড়িয়ে থাকা যায়? ফুলের মতো, ছায়ার মতো