মদের বোতলে মাতালের থাকে
মৃতু্যর উল্লাস,
ছিপি খোলা হলে সংকেতে জাগে
চিনে বাসনের লাশ।
বিবমিষাময় ক্লান্ত নগরে
রজনীর চুল যতো,
তারও চেয়ে ঢের গিলেছো পাঁচন
রমনদূতের মতো।
০৪. ফড়িং ও ঘুড়ি
ছোটবেলায় ফড়িং ধারা ও ঘুড়ি উড়ানো এদু’টি বিষয়েই মায়ের কড়া নিষেধ ছিল। আমাদের দু’ভাইয়ের প্রায় প্রতিটি সকালই বেপোরোয়া হ’য়ে উঠতো ঘুড়ি উড়ানো অথবা ফড়িং ধরার নেশায়। একটি টকটকে লাল অথবা গাঢ় বেগুনী রঙের ফড়িঙের পিছু পিছু ছুটতে ছুটতে কতো সকাল মধ্যাহ্নের কড়া নেড়েছে তার হিসাব নেই। স্কুল ছুটির পর সহপাঠিরা যখোন পোশাক ছেড়ে খেয়েদেয়ে লাঠিম অথবা গুলতির আড্ডায় মশগুল আমরা তখনো একটি লাল ফড়িঙের পিছু ছুটছি।
আমি কি জানি? শেষরাত্রি ছুঁলে কীভাবে
বুকপাথর থেকে খুলে পড়ে মর্মভেদী যত
কথা ও ভয়
শক্ত পাথর আকুল হয়ে উঠে; নরম ছোঁয়া পেতে পেতে
যে কথা বলা হলো না; তার জন্য জমছে কি বেদনা?
দোহাই তোমাদের; আমাকে জড়াতে বলো না রাত্রিকথা
আমার হাঁটার ফাঁকে জমছে হাওয়াপাগলা; মৌনধুলা
খুব চাপ দিয়ে জমিয়ে ফেলেছে কিছু জল
অনুভূতি তার হাতের মধ্যে
একবার সমুদ্রের সান্নিধ্য চেয়েছিলাম
উৎসের কাছে মানুষ যায়
জলের দর্পনে দেখেছিলাম অখণ্ড এক জলজ মুখ
তখনই একটা শক্ত হাত
অন্যশরীরে রূপান্তরিত হচ্ছিল
আমার কিছু নতুন অনুভূতি
সৃষ্টির আগে সৃজ্যকে
কিছুকাল কী থাকতে হয় স্রষ্টার সঙ্গে
আমিও গড়েছি ঘর
যেমন কবিতার সঙ্গে শব্দের একান্ত ঘর
অপেক্ষা করছি,
কিছুটাতো ভুল রয়েই গেছে, রয়ে গেছে কিছু কিছু দায়!
যেমন হয়নি খোঁজা কোনদিন কিছু কিছু নাগরিক উপায় -
যা-দিয়ে সবাইকে যার যার মতো করে তৃপ্ত করা গেলে
এ-জীবন থেকে যেত পুরোপুরি নাগরিক নাগালে।
তাই কি হয় নাকি, সবকিছুতে কি আপোষ করা চলে,
সবকিছু কি করা যায়, যাওয়া যায় সবকিছু ফেলে? -
দিবাগত রাত মানে কি শুধুমাত্র দিবাগত রাত,
দরোজায় করাঘাত মানে-কি কেবলই দরোজায় করাঘাত!
ভাগ্যিস আমাদের দুজনের দু’টি আলাদা অস্তিত্ব ছিলো
হয়তো সেজন্যই বিপন্নতার টানাপোড়নে
একে অন্যের জন্যে উদ্বিগ্ন হবার সুযোগ ছিল।
তুমি রোষ্ট বিফ পয়সা খসিয়ে তোমায় কিনেছি আমি
একান্ত সুখে পেঁয়াজ মিশিয়ে তোমায় রাঁধবো আমি
অনেক সুরের আভাস ইংগিত ছিল
কবিতার সৌজন্যে কোকিলদের সান্ধ্য আসরে।
আর গুপ্ত ছিল এই সুবর্ণ কাঁটা -
সংগীত হতে চাও? কোন কোকিল গাইবে শুনি!
একমাত্রা ফাঁক রেখে গাইতে চেয়েছিল
সু-কোকিলরা সবাই ঝাঁপতালে :
আমি কবিতার লোক, বুঝিনা সংগীত,
অযথাই কেন বাড়াতে যাই-
গানের দিকে, কবিতার হাত ?
আমি গানের একজন ভাল শ্রোতা, এটুকুই
আমার জ্ঞান। আমার অনুরাগ, ভালবাসা।
জুনের এই রৌদ্রদিনে কী এক অদ্ভুত আসক্তি
সারা শরীরে অধিক গরম নিয়ে-ও দীর্ঘ তিন
অনাঘ্রাত কৌমার্যের প্রাথমিক সময়ে
আত্নসৃষ্ট বর্ণসমষ্টির দিকে চাইলে
নরম বৃষ্টিবিন্দুর আলিঙ্গনাবদ্ধ এক
ভয়ার্ত কবুতরের কথা, তার শোকাহত
নিবেদনে সৃষ্ট উজ্জ্বল চিত্রকল্পের
কথা মনে হয়। একের পর এক
দেহজ পাঠ শেষ করেও কী চমৎকার
অজর, চিরযৌবনা।