গতকাল সন্ধ্যা ঘন হলে
রাত্তির আনুমানিক আটটা নয়টা বাজে
অথবা দশটায়
মনে নাই ঠিক
আমায় ফোন করে বাল্যবন্ধু মুকুল (ছদ্মনাম,
বাস্তবে উহার নাম বকুল, কিন্তু কথা সেটা নয়)
উত্তেজিত কণ্ঠে বলে, দোস্ত কারেন গেছেগা।
শুনে আমি থমকাই দু'টি ক্ষণ, তারপরে শুধাই
বলি ও মুকুল (ও বকুল বলেছিনু, যেহেতু ওটাই
তার বাস্তবিক নাম, তবে কথা সেটা নয়)
কারেন গেছেগা তাতে কি হয়েছে, আইপিএস ছাড়।
শ্বাপদের পাল ঠেলে প্রতিদিন তুমি কাজে যাও,
তাদের লালার স্রোত বিস্মৃতির বর্মে ঠেকাও।
তোমার চলার পথে অক্ষমেরা বসে ঠোঁট চাটে
নিন্দার তুফান রোজ কড়া নাড়ে তোমার কপাটে।
কখনও চড়ালে গলা একশোটা পাল্টা গলা চড়ে
হায়েনা শেখায় এসে নিঃশব্দে কাঁদবে কী করে।
"অল্পে থাকো তুষ্ট আর গল্পে থাকো মায়াবতী হয়ে"
এ মন্ত্রে আকাশ ফাটে অশিক্ষিত-শিক্ষিত বলয়ে।
যুবক গোপনে পায় স্বস্তি সে যুবতী নয় বলে
ঘুমিয়ে থেকে থেকে অনেক সময় গিয়েছে তোমার। ঘুমিয়ে থেকে আমারও সময় গিয়েছে অনেক। দেখছি, পাতাবাহারের দিনে শূন্যে কুণ্ডলি পাকাতে-পাকাতে একটি ঘাসফড়িং নেমে আসছে আমাদের দিকে। দেখছি, এক উদভ্রান্ত যুবক শূন্যে তর্জনী পাকিয়ে কথা বলছে সন্ধ্যার আকাশে। দেখছি, কয়েকটা পাখি ডানা ঝাপটিয়ে ছুটে গেল দ্বিকবিদিক।
জাহাজীর মত একা আর কেই বা আছে?
লোনা হাওয়া, পোর্টহোল, সরু বিছানা আর
ঢেউয়ের দুলুনি সঙ্গী কেবল।
জাহাজীর মত একা আর কেই বা আছে?
ছেড়ে আসা বন্দর, শুঁড়িখানার পেয়ালা,
ঘন্টা মেপে কেনা রক্ত-মাংস এবং অবসাদ,
সব, সব, সব বিগত রাতের চেয়েও বেশী মৃত এখন।
তবু জাহাজী দিগন্তে চোখ পাতে,
নতুন বন্দরের তৃষ্ণা বুকে চেপে ভাবে,
"নোঙরের মত উদ্বাস্তু আর কেই বা আছে?"
-ইকরাম ফরিদ চৌধুরী
জীবন এখনো আছে কষ্টের পাতালে বন্দী
কিন্তু অত কষ্ট নয় যে, তোমাকে ডেকে বলি
জানি, আমি অনেকের চেয়েই হয়ত খারাপ আছি
কিন্তু অতটা খারাপ নই যে, তোমায় ডেকে বলি!
এখনো প্রতিদিন সন্ধ্যায় ক্লান্ত চরণে আমি ঘরে ফিরি
কিন্তু অতটা ক্লান্ত নই যে, তোমায় ডেকে বলি
জানি, অনেকেই এগিয়ে গেছে জীবন পথে-- আমাকে করে একাকী
কিন্তু অতটা একা নই যে, তোমায় ডেকে বলি!
এখনো প্রতিটা ভোর এসে শুরু করে নতুন আলোর দিন
আবার ভিজে মাটির গন্ধ আসে
পরশ লাগে গায়
হাওয়ায় হাওয়ায় চুল খেলে যায়
চুল খেলে যায়
সে মেয়ের চুল খেলে যায়
গ্রীবায় দুলে ওঠে সে মেয়ের লজ্জানম্রনদী
আঁধারের অধর ভাসিয়েছে যেন সেই সন্ধ্যা আবার
পথ তার চেনা ছিল এক আঙুর অন্ধকার
সে তো পথ নয় মাবীর ঠোঁট
সে তো চেনা নয় ছিল সম্মোহনী টান
সেই টান আবার টানছে আমায়
বলো তুমি কেমন মানুষ?
ভেতরে কি পাহাড়, নদী
তার পাশে পথ; পথিক চাইলে হাঁটতে পারে?
আছে আকাশ? মেঘলা দুপুর—
গাছের ছায়ায় রাখালরা কি মনের সুখে বাঁশী বাজায়?
জানলা আছে? চুল ওড়ানো ফুলের বাতাস?
রোজ বিকেলে চিঠির আশায় কেউ কি বলো
দাঁড়িয়ে থাকে?
মানুষটা কি এমন তুমি?
পাল তোলা এক মনের মাঝে ‘বউ কথা কও’ পাখি পোষো,
যত্ন করে ছড়িয়ে রাখো সোনালী ধান উঠোন জুড়ে—
একদিন সব ভেঙে গিয়েছিল একলহমায় । সম্পর্কটাকে পরিত্যক্ত বাড়ির মতন পেছনে ফেলে পথে বার হয়ে গিয়েছিল তারা দু'জনেই । তিল তিল করে গড়ে ওঠা বহু সুখদুঃখের মুহূর্ত মালা থেকে ছিঁড়ে যাওয়া মুক্তোর মতন ছড়িয়ে পড়েছিল ধুলোয় বালিতে বাতাসে জলে আগুনে শূন্যে ।
‘আমাদের বয়স হয়েছে, খোঁজ রাখবেন’-
কত সহজে মা বলে যেতে পারলো কথাটি
আমাদের মায়েরা সেই অমোঘ বাক্যে
বিচলিত হল না, একটু হয়তো ঝরে পড়লো
সন্ধ্যার বনজ অন্ধকার শূন্যতা থেকে শেষ আলোটুকু
নিংড়ে নিয়ে আমাদের মায়েদের মুখে ছড়িয়ে দেয়
তাদের হাসি শালবনের বাতাসে সহজ ভঙ্গিতে তোলে মর্মরধ্বনি
পরস্পরের চোখে বহুদিনের গড়া সংসারকে পূর্ণ রেখে
আমাদের মায়েরা এখন
ফাল্গুনের এই বনের মত নিঝুম, নির্জন।
আলেকজান্দ্রিয়া থেকে অমর একুশ,
নালন্দা থেকে শুদ্ধস্বর,
জালুস্কি থেকে কম্বোডিয়া,
অভিজিৎ থেকে এন্ড্রোমিডা -
পুড়ে যাচ্ছে তীব্র দহনে।
দহন মূলত রূপান্তর, গ্রহণ মূলত সাময়িক পলায়ন;
যাত্রা মূলত ক্ষণস্থায়ী অবস্থানের সীমায়িত সমাকলন;
স্থির সংকল্প মূলত নির্বিকার যাত্রার মতো গতিময়।
পুড়ে যাচ্ছে জাউরাক, জিবাল আর বিশাখা;
পুড়ে যাচ্ছে চিত্রলেখা, প্রত্যুষ, প্রতীতি;