বনবালা
জানিনা কোথায় থাকে সে সুন্দর চোখ জোড়া,
আর সেই হাত জোড়া এখন কার হাতে রাখা ?
বনচুড়ি অথবা বনবালার নকশা আমি পেয়েছিলাম
এক দুপুরের কাছে, অতি আভাসে ইংগিতে --
বনভূমির শূন্য হাতজোড়া আমার দিকে বাড়িয়ে ধরে
দুপুর বলেছিল, আছে কোন অলংকার তোমার হাতে ?
তখনই শুরু করি খোদাই করতে, আমি সূর্যের আগুন!
তোমার হাতের মাপে মাপে বালার মতো করে
গদি থেকে নামিস যখন
জনগণের ব্ন্ধু তখন,
দেশের জন্য দু'চোখ বেয়ে
গড়িয়ে পড়ে জল
ঢের ঠকেছি, এবার বলি
ছল সবইরে ছল-
খারাপ কাটুক দেশের দিনটা
তোদের কেবল একটা চিন্তা
গদি এবং গদি পেলেই
তোরা সবাই লাট বাহাদুর
অন্য সবাই তুচ্ছ নেহাত
মশা, মাছি, ইঁদুর, বাদুড়-
সারাজীবন এইতো হলো
তোরা খেলি, ওরাও খেলো
আমরা কেবল দেশের মানুষ
দেশের সাথে পচে মরি
তোরা ওরা গদি নিয়ে
করিস পাছা মারামারি-
খাতামুন্নবুয়্যত জিনিসটাই যতো ভেজাল পাঁকাইছে, নাইলে আজ হিটলারের গোঁফ নিয়াও ক্যাচাল করন যাইতো। ছোটোবেলার এক বড়ো ভাই কইতো, মুহাম্মদের পরে কেউ নবী হওনের সিস্টেম থাকলে এডলফ হিটলারও নবী হইতো। লোকটা যে লাখ লাখ ইহুদিরে গ্যাস চেম্বারে দিছে, তার জন্যই সে মুসলমানের নবী হওনের যোগ্য। ছোটো বেলায় অল্প অল্প বুঝেছিলাম - হিটলার বড়ো ভালো লোকই হইবো; তয় একটু বড়ো হইয়া এক্কেরে অবুঝ হইয়া গেলাম, নবী-রাসূলের সংবিধানে ইহুদি
সূত্রধর!
ওহে নিরালা মানুষ, ঘরের আঁচলে খুদকুটো জমেছে যা,
তার সব নৈবদ্য জ্ঞানে পূজা করলেই দেখবে পূজারী মন
বেহালায় সংগত; সেইসাথে আলাপ জুড়ে দিতে একটা
মিঠেকাড়া মন্দিরা দূরাগত বাঁশীটাকে টেনে নেবে যখন -
তখন তুমি চাইলে একটা হারমোনিকা খঞ্জনির বোলে
যে গাইবেনা তার দিব্যি তোমাকে কে দিয়েছে কবে?
বাজো! গ্রহন লাগা ঘনঘোর নিশ্চিত জলের দেখা পাবে,
তারপর সাধিত গলায় জটাধর বিবাগী তুমি গেয়ে উঠলে -
দৃষ্টিহীন দৃষ্টি বাড়িয়ে প্রতিদিন, ছুঁয়ে থাকি এইসব স্বাভাবিক শহর।
উদ্বুদ্ধ হই প্রায়শই তোমার চোখে তরলতা, শব্দে পক্ষপাত অনুভব করে।
বাকিটা সময় কাটে নিমগ্নতায়, জলাবদ্ধ জানালায় বসে
আমাকে ঠেস দিয়ে রাখা পচনশীল কাঠে হাত বুলিয়ে;
নদীদের লিখে রাখা গোপন কথা স্বশব্দে অনুমান করে।
পথভুলে হঠাৎ হাজিরা দেয়া স্বপ্নজড়িত ভয়ংকর আশ্রয়
এখন নিয়মিত ধেয়ে আসে চেতনার মধ্যবিন্দু লক্ষ্য করে।
বিষাদ তুমি মায়ের চোখের অপেক্ষা জল,
তোমার দেয়া শুভ্র রুমাল -
হলদে হওয়া,
বিষাদ তুমি সকাল বিকাল -
শ্রাবণ সাঁঝের ইলশেগুঁড়ির খুব কোলাহল,
বিষাদ তুমি কর্মমুখর আটপৌরে -
দিনের শুরুর - স্মৃতির সকাল,
বিষাদ তুমি - তোমার সাথে মেলায় কেনা হারমোনিকা -
হারমোনিকায় সুরের আকাল।
বিষাদ আমার - তোমায় নিয়ে কাব্য লেখা,
মুঠোফোনের পুরোনো মেসেজ হাতড়ে দেখা।
বিষাদ তুমি খুব নিশ্চুপ পড়ার টেবিল,
লতার বিছাহার
অজস্র সূক্ষ্মবনফুল লতাগুল্মকে দেখেছি
বনে বনে ঘুরে অনন্ত বারোটি বছর
শুধু পূর্ণতা দিয়েছি হৃদয়কে
এক জনমে যতটুকু সম্ভব
ফোটাতে এই বনফুল
বনলতা নিজের মধ্যে ...
আমি পৃথিবীর পথে রোপণ করিনি টাকার বৃক্ষ
গড়তে আসিনি ইমারত।
এই খ্যাপা, গৃহত্যাগী-হৃদয় ছাড়া
আর কোনো ধন-সম্পত্তি নেই আমার
এ হাতের ইচ্ছার মতো
আমার কালজ্ঞপ্রেম
তোমার কোমল কোমরে জড়াতে চাই ;
সাংঘাতিক রকমের কৌতুহলবিমুখ
অবিশ্রান্ত, আবাদি আর উদ্ভিদময়
দিনগুলো একের পর এক কেটে গেলে পর
হঠাৎ করে লক্ষ করি আমার সমস্ত অব্যাবহৃত
নিরাকার, অলৌকিক, রমনঅযোগ্য, বায়বীয়
মস্তিষ্কজাত উদ্বাস্তু শব্দগুলো,
ক্রমশ নির্জীব হয়ে পড়ছে, যেগুলো
বিভিন্ন কবিনেশন পারমুটেশনে সাজিয়ে,
অর্থহীন এবং একই সাথে শীল্পগুনমানবর্জিত
একটি শব্দের শরীর গঠন করলে, অত্যন্ত সংকোচে
হলেও তাকে হয়ত কবিতা নাম দেওয়া যেত।
(২২ জুলাই ২০১১, মৃত্যুময় ঈষৎ)
আজ তৃতীয় বাণী অনুবাদের চেষ্টারত। এই অনন্য কবিতাটি 'তের্জা রিমা' আর 'ইয়াম্বিক পেন্টামেটার' নামক চমৎকার সুরেলা ছন্দে রচিত। মূলকবিতায় তের্জা রিমার এই বিন্যাসটি (A-B-A, B-C-B, C-D-C, D-E-D, E-E) ব্যবহৃত হয়েছে। তদ্রূপে আমি তৃতীয় বাণীর ক্ষেত্রে (কে-নে-কে, নে-আদ-নে, আদ-রে-আধ, রে-নো-রে, নো-নো) এই বিন্যাসটি রেখেছি। তবে মূল কবিতা থেকে অর্থান্তর না করার আপ্রাণ চেষ্টা ছিল।
সমুদ্রবিলাস!!
-- তানিম এহসান
১.
অসীম শূন্যতা তোমার!!
এতোটাই যে,
আমার যা কিছু শূন্যতা
সব ভেসে গেলো,
চলে গেলো তোমার আঁচলে;
এই দু’চোখের কোলে শূন্যতার বৃষ্টি ঝরেছিলো!
দু’চোখ সেই জল ধরে রেখেছিল দুঃখেরও বিলাসে,
সেই জল তীব্র বিগ্রহ আবেগে ঝরেনি।
আর সাগর!
কত সহজেই না জেনে নিলে তুমি
আমার দু’ফোটা ইতিহাস!!