‘দ্বিতীয় বিপ্লব’!!
- তানিম এহসান
ঘোর কলিকাল - নষ্টামীর এই দারুন সময়ে আজ তুমি কি লিখো,
কি লিখে ক্রোধের জল - নিজেকে সামলাও কবি?
এখানে ধানের ছড়ার মতন উন্মুখ উনুনেও বিলাপ,
এখানে ভিন্ন রাগে প্রতিদিন কাঁদে মানবতা,
প্রতিরাতে কোন এক নতুন নারী সুবাস বিকিকিনির
হাটে নতমুখে হেটে যায়; ধর্ষিতাকে আবার ধর্ষন করে সমাজ আর রাষ্ট্রযন্ত্র;
কচুর লতিতে লতিতে নুন মাখা নুন যায় শেষ হয়ে,
সময়ের নোনা বাঁকে অনেক ভ্রমণ
হলো; এবার তো তোল মুখ― স্পষ্ট হোক
আপন উচ্চারণ!
মুগ্ধ আকাশ, দুগ্ধ কপোত তোমার ব্যাকুল হাতে
ঋতুবতী মেঘ, পাখির প্রবাহ, শালিকের গ্রহলোক
পালক পুকুরে টলোমল করে তোমার গভীর চোখ
তোমাকে একাকী উড়তে দেখেছি নক্ষত্রের রাতে।
অতিবিখ্যাত রোমান্টিক ইংরেজ কবি 'পার্সি বিশ শেলি(১৭৯২-১৮২২)'র "Ode to the West Wind(১৮১৯)" ধ্রুপদি কবিতাটি অনুবাদের চেষ্টা করেছিলাম, প্রথম বাণীটি শেষে আজ দ্বিতীয় বাণী অনুবাদের চেষ্টা করেছি। এই অনন্য কবিতাটি 'তের্জা রিমা' আর 'ইয়াম্বিক পেন্টামেটার' নামের অসাধারণ সুরেলা ছন্দে রচিত। 'তের্জা রিমা' সম্পর্কে একটু আলোকপাত করছি, এটি অন্তঃমিল দেখে, ১৪ পঙ্ ক্তির প্রতিটির শেষে এই প্যাটার্ন (A-B-A, B-C-B, C-D-C, D-E-D, E-E) রাখতে হয়। আমি দ্বিতীয় বাণীটি অণুবাদের সময় (রে-তা-রে, তা-এর-তা, এর-কে-এর, কে-নো-কে, নো-নো) এই প্যাটার্নটি রেখেছি। তারপরও মূল কবিতা থেকে অর্থান্তর না করার আপ্রাণ চেষ্টা ছিল। কতটুকু সার্থক হয়েছি- তা আপনাদের বিচার্য ।
গোলাপ টিকলি
পথিক ছিলাম শুধু দেখে যেতাম পড়শির বাগানে
ফুটছে প্রতিদিন
কয়েকটি লাল এবং গোলাপি গোলাপ নিশ্চুপ।
মানুষেরও নীরব সৌন্দর্যে, আমি সর্বদাই মুগ্ধ হই!
ফুলের ভারে সে বৃক্ষ এখন নুইয়ে পড়েছে আমার
কবিতার টেবিলে
কচি পাতা আর দেখতে পাচ্ছি তার সবুজ ডালগুলো
অতীত কাঁটাগুলোকে ভালোই লাগছে আমার।
আমার বড়বোন হলুদের দিন গলায় গাঁধা ফুলের মালা
আর সিঁথিচূড়োয় পরেছিল গোলাপের টিক্লি ...
জন কীটস-এর ‘Ode to a Nightingale’ বা ‘নাইটিংগেলের প্রতি’ কবিতাটি ইংরেজি সাহিত্যের রোম্যান্টিক যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা। প্রবল ইন্দ্রিয়কাতর ও রূপভারাতুর এই কবিতাটির মুখোমুখি হয়েছিলাম ২০০১ সালের মাঝামাঝি, তখন আমি শৈলশহর শিলং-এ; ‘অৌড টু এ নাইটিংগেল’ ছিলো উচ্চ-মাধ্যমিকের ইংরেজি ক্লাসে পাঠ্য। কবিতাটি সাথে আমার অনেক বিনিদ্র রাত কেটেছে।
নিম্নোক্ত অনুবাদ-কাব্যাংশটি সুবিখ্যাত ইংরেজ কবি 'পার্সি বিশ শেলি (১৭৯২-১৮২২)'র "Ode to the West Wind" ধ্রুপদি কবিতাটির প্রথম চরণ সাপেক্ষ। পূর্ণ কবিতাটি পাঁচ পর্বে শেষ করার ইচ্ছে আছে(যদি আপনাদের সমর্থন পাই )। মূল কবিতা থেকে অর্থান্তর না করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। কতটুকু সার্থক হয়েছি জানি না।
আকাশ-নীল-নিভিয়া
ঐ তো তোমার দিকেই তাকিয়ে আছে,
নীলাকাশ।
ভালবাস মনে মনে, তা বলো না কেন তাকে ?
তোমার প্রয়োজন মাত্রতো কিছু নীল,
তা বলো না কেন আকাশ কে ?
স্বপ্নের চেয়েও সুন্দর মুখ খানা তোমার
আমি নিয়ে যাই আকাশের কাছে ...
আকাশের গায়ে লেপ্টে থাকা নীল
নেমে আসে তোমার মুখের কাছে,
যেন বা নিজহাতে আকাশ -
তোমার দু-গালে মাখিয়ে দিচ্ছে নীল।
চেরী ফলের টিপ
তোমার লাল-টিপ্গুলো এখনো রয়ে গেছে সবুজ
কাজ চলছে, কবির হৃদয়ে এখনো চলছে কাজ :
চেরী ফলের সবুজ গুটিগুলো
রোদে ভিজে চকচক করছে,
বৃক্ষটা গীতার শ্রীকৃষ্ণের মতো
চতুর্ভঙ্গনৃত্যে ফলবতী ডালগুলোকে
মেলে ধরেছে নিসর্গের উদ্যানে। সেখানে দুপুর বাজিয়ে
চলেছে ঝুমুর, উদাসীন বাঁশি।
পাখিরা ঝোপে জিরিয়ে নিচ্ছে।
জগতের যাবতীয় অকল্যাণ
অগ্রাহ্য করে, একদিন রঙ ধরবে
এক.
আজ আমার মন ভালো নেই!
টুকরো কাগজ হাওয়ায় হাওয়ায় উড়ে
তারপর টুপটাপ, রিনিঝিনি, টুনটুন;
সকাল গড়িয়ে যায়
দুপুর গড়ায়
উচ্ছল বিকেলে এসেও
মনের দেয়াল জুড়ে বিষন্ন ছবি
আকে অজানা অচেনা সব হাত,
রঙতুলি কেবলই বেছে নেয় নীল রঙ,
আঁকে, আঁকতেই থাকে আর
দরোজা, জানালা সব একের পর এক
কে যেন বদ্ধ করে নিপূণ সামর্থ্যে;
আমি শুধু ঘোরলাগা ঘাসের ডগারমতন
একফালি সূর্যের দেখা পাবো বলে
আনমনে বসে থাকি, বসেই থাকি