অমিতাভ দেব চৌধুরী
অনেকখানি সুদূর যখন একটুখানি নিকটের কাছে এসে বসে থাকে
তখনই,গানের জন্ম হয় ৷
তোমার মনে হবে,যেন ইরান থেকে আফগান সীমানা পেরিয়ে
অসংখ্য কাটাকুটির বলিরেখা- ছাওয়া বৃদ্ধ কাঁটাতার সাঁতরে
ওই গান,পাক-প্রহরীর ঘুমচোখ এড়িয়ে
দাঁড়িয়ে পড়েছে তোমার এই
শ্যামল নদীতীরের পারে মাঝির লোমহর্ষে ।
অনেকখানি গান যখন একটুখানি পাথরের কাছে এসে বসে থাকে
তখনই,ঝর্নার জন্ম হয় ।
১।
কার জন্যে খুঁড়ে আনো জল
আনো তৃষ্ণা সব?
স্মৃতিদাহ'র পর কি আর
থাকে বাকী, শুধু ভস্মের
অপেক্ষা - ঊড়বার।
২।
সকলেই ব্যাগ্র ফিরতি যাত্রায়,
শুধু আমারই নেই কোন তাড়া, বহুজনেই
আছে জলদি পৌঁছে যেতে চায়,
কেবল আমিই বুঝি
তাড়া করে ফিরে যাবার কোন উপকার দেখিনা।
৩।
একটা গভীর কবিতা যদি
তোমার মনে থাকে, তবে তাই
লিখবো আমি, একটা কোমল
নরম গান যদি গুনগুন করো,
তবে তাই গাইবো আমি।
৪।
১
জলের গভীরে আছি
তবু জলসিড়ি ছুঁলো না আমায়
ছুঁতে পারি আমিও তো তাকে
সোমত্ত সে নদীর বাঁকে
জেগেছে যে তুমুল জোয়ার!
২
বুকে নিয়ে বরফের স্তন
কোন এক হিম নারী এসে
নষ্ট-নটীর মতো অষ্টপ্রহর
কেলি করে বিছানায়, বারান্দায়!
নিজেকে নিয়েছি সেঁকে
কান্তিমান সূর্যের একান্ত চুলায়;
তবু মেঘ কোন ছলনায়
ছায়া নেই ছায়া নেই বলে
দূরে বহুদূরে উড়ে চলে যায়!
৩
ফুলোঙ্গুরীয়
যুক্তমুক্তোর আকৃতিতে এই কাননেও
পুষ্পে রচিত হয় কারও জন্য অঙ্গুরীয় ?
কেউ তা পরে অথবা কেউ পরেই না। এক
বিমূর্তের খেয়াল-খুশী যেন বিরাজমান এখানে!
আমার যুবক পিতার আঙুলে এরকম
কয়েকটি উপমা দেখেছি,
বদলিয়ে বদলিয়ে পরতেন
আবার কাউকে দিয়ে দিতেন খুব সহজে।
পথে ফোটা রঙেছোপা মুক্তোর ঝুরির মতো
এই অতি ক্ষুদ্র ফুলগুলোকে দেখে,
পিতার যৌবনচিত অহংকারগুলোও
আমার চোখে ভাসে।
কাঁটাঅলা গাছ! ছাল ছুঁতে গিয়ে ভিন্ন অভিজ্ঞতা
না-ছুঁলে অপলক নতিজা হৃদাবেগ রোগা-পাতা
তোর কাছে এও আছে রঙিন দিনের ইস্তেমাল
হৃদপিণ্ডে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হচ্ছে গাঁথা-শোক
পরশ বিষয়ক কিছু কথা অসমাপ্ত না-থেকেও
বিপরীত দিকটার জানার ইচ্ছে তোরই প্রবল!
আমাদের আটকে যাওয়া অস্থির নিজস্বতা, আহা!
সে-ও এক বিষ্ময়!
জানি, নীরবতা ভাঙলে আমাদের ইতস্তত চোখ
হাত ঘষলেই ভিখিরি বাজারে তোর অংশীদার
সংশয়ে কামনা
- প্রখর রোদ্দুর
রেবতী তোর মাতাল ঝড় এ
কালকে যতো ডাল ভেঙ্গেছি
পাখির বুকে শিমুল বীজে
বাধ মানেনি ব্যাধ পুড়েছে
আক্রমণের সংগোপনে
জবার আগুন তারায় ফুটে
বৃন্ত খোঁড়ার লেপ তোষকে
উষ্ণ আদর আঁচল পাকে
ঘুমিয়ে থাকা জন্তুটাকে
ডাকাত হওয়ার মন্ত্র দিলি।
ফুলের ঝুমকো
আমার মায়ের কানে দুলতে দেখেছি
এ রকম ঝুমকো :
কয়েকটি যুক্তফুলের গোলাকার গুচ্ছকে
অনুভূতির সূক্ষ্মবৃত্তে বসিয়ে
তোমার কানের দুল
এখন সত্যি সত্যিই আমি
ফুল দিয়ে বানিয়ে দিতে পারি :
তাতে- গুড়ি গুড়ি-
বুটি বুটি
ঝুলে থাকবে-
হলুদ-
সবুজঝুরি...।
বনের ঠিক যেখানে ওরা ফুটে আছে -
ভরদুপুরে নিরিবিলি
তাদের সমুখে দাঁড়িয়ে বলেছি :
হে আমার মায়ের কানের ঝুমকো,
তার-ও আছে শরৎচিঠি ফড়িংরঙ খুব
রাতের অনুষদে
নক্ষত্রের ভবঘুরে আলো হয়ে ওঠে অতি-বেগুনি
নিরর্থক জীবনকে অর্থময় করে তোলার প্রচেষ্টা নিরন্তর।
জাগতিক জীবনে সঞ্চিত অভিজ্ঞতা ...
আন্ধকার থেকে আলোয় আসতে ,
ছিন্ন ভিন্ন করেছি অসংখ্য অদৃশ্য জাল।
আকন্ঠ পান করেছি জীবনসুধা,
নিমগ্ন থেকেছি নৈসর্গিক চেতনায়।
পথ চলতে চলতে ক্লান্ত হয়ে ,
শুয়ে পড়েছি সবুজ ঘাসের বুকে।
শান্ত দিঘির জলে নিজেকে ডুবিয়েছি,
ভূলে সব ক্লান্তি।
আদিগন্ত অবারিত সবুজ মাঠে,
ছুটেছি লাটাই ছেড়া ঘুড়ির খোঁজে।
তোমায় আমি প্রতিক্ষণে স্বরী
ভালোবাসি সারাক্ষন -
যার ভালোবাসা সমুদ্রসম
তার কি আর এক দিবসে চলে বলো?
আমি অপমানিত হয়
সুর হারিয়ে ফেলি
লজ্জায় আমার মাথা হেট হয়ে আসে
দৃষ্টির সীমানায় শূনত্যা দেখি
প্লিজ আমার আবেক নিয়ে বানিজ্য করো না।
বানিজ্যকরনে আমি নিঃপেষিত।
--------------------
নিত্যানন্দ রায়