আমার কিছু গল্প ছিল।
বুকের পাঁজর খাঁমচে ধরে আটকে থাকা শ্বাসের মত গল্পগুলো
বলার ছিল।
সময় হবে?
এক চিমটি সুর্য মাখা একটা দু'টো বিকেল হবে?
গল্পগুলো বলব তোকে।
যেসব গল্প হয়নি বলা তুমুল শোকে,
অথৈ হাসির ধুম প্রলাপে,
যন্ত্রবদ্ধ নগর-চাপে,
যেসব গল্প বুকের মাঝে ফেনিয়ে ওঠে
বলতে গিয়ে আটকে থাকে গলায়,ঠোঁটে,
মুখ ও চোখে,
গল্পগুলো বলব তোকে।
এক পাহাড়ের পাথর চাপা কান্নাজমা গল্প ছিল,
ছায়াটি দীর্ঘতর হয়ে আছে কাছে, টের পাই
তার গাঢ় অস্তিত্ব; যখন অগ্নিজ্বরের দাবদাহে
শরীর ভিসুভিয়াসের মত ফুটন্ত- ছায়া রিক্ত-
চোখের উপর এসে পরে; পেলব স্পর্শানুভূতি
হয়, শিউরে উঠি, জীর্ণ শৈশব ফিরে আসে পথে
ধূপখোলার শু'নো কাঠালপাতা মোড়া বিরানির
অক্ষয়িষ্ণু ঘ্রাণ পাই, মগ্নরাত মধ্যভাগে থাকত তখন
শেষ পথিকের পদাংক এঁকে উনি নির্বিকার ছুটতেন-
সুঘ্রাণ নিয়ে আসলে অবাধ্য দ্রুতিতে গোগ্রাসে গিলতাম!
সনাতন, খুব করে এসো ফিরে
প্রবঞ্চক সময়ের হাত ধরে
ভেঙে সব আধাঁরের স¡রলিপি
আরবার এসো; আরো একবার দেখি
সরল, সহজ ক্যানভাসে মোড়া
জননী - জন্মভূমির আচঁলজোড়া
অদ্ভূত নবান্নের উৎসব লেগেছে
পাললিক শতধা প্লাবনে
সব নষ্টামী ধুয়েমুছে গেছে
ঐতিহ্য অনুগামী অশেষ আগুনে;
প্রানপন দেখি,
বাংলাদেশের হৃদয় জুড়ে
আবারো উঠেছে জেগে
মৃত্তিকার বোধ।।
--- খুলনা, 17.01.2011
তুমি আমি, কাজলরেখা, জ্যোৎস্না চাখতে
যখন যেতাম উত্তরের গাঙে,
সেখানে বিশাল সব হাঁ-করা ঢেউ,
যেন বোয়ালের মতো গিলে খাবে চাঁদ সদাগরের নাও
জ্যোৎস্নায় ধুয়ে যায় মন,
জ্যোৎস্নায় ভিজে যায় শরীর,
জ্যোৎস্না না কাজলরেখা - তুমি,
কার নেশা বড়, ভাবতে ভাবতে আমার কিস্তিই
বুঝি গিলে খায় তোমার উথালপাথাল হাওড়।
তারার শামিয়ানা, ছলাৎ-ছলাৎ, তুমি আমি
পাশাপাশি, বলো, মরণেই বা আর কিবা আসে যায় -
গত রাতের আকাশ ছিল
গ্রহণ লাগা চাঁদের মত
চোখের ছায়ায় ঘুম জাগানো
আজ সারাদিন বৃষ্টি হলো
মন-বালিকার দহন-ক্ষত
জুড়িয়ে দেয়ার শীত লাগানো
বৃষ্টি থামে মেঘ থামে না
আলোর ঘোরে সন্ধ্যা আসে
আজকে রাতের সব আয়োজন
সূর্য সাধার পূর্বাভাসে।
[center]ভালোবাসি এই দুরন্ত দুপুর গনগনে রোদে
ছোঁয়াছোঁয়ি করা পাশাপাশি বসে
একসাথে বাড়ি ফেরা,
আবোলতাবোল বকে যেতে যেতে
হাতপাগুলো এলোমেলো ছুড়ে
এদিক সেদিক অযথাই চেয়ে
একটুখানি ছুঁয়ে দিতে ভীষণ লাগে।
ভরদুপুরে ক্লাসের শেষে
তোমার জন্য অপেক্ষাতে
বসে থাকা ও লাগে ভালো,
বিকেল শেষে তুমি এলে
টিএসসি কিংবা পুরান ঢাকায়
চটপটির ওই সেই দোকানে
খেতে খেতে ঝালের চোটে
চোখের কোণে পানি আসা ও ভীষণ লাগে।
স্বপ্ন তো ছিল স্বপ্ন না দেখার………….
প্রথম বিকেলে, তোমার কাঠলিচু চোখ
হঠাৎ ধসে পড়ল আমার চোখে
আর স্বপ্নরাও খসে পড়তে থাকল
অবরিাম নৃত্যপটু পাখিদের ডানা থেকে
ক্রমাগত প্রণয়সিক্ত ফুলের সুরভি থেকে
এমনকি কোমর বাঁকিয়ে তারা এল
দুবেলা রান্না করা আটপৌরে গিন্নীদের চোখ থেকেও।
স্বপ্নরা রক্তাক্ত হরিণের ক্ষুর
শিশির ফোটার মতো হাওয়ায়ও মিলিয়ে গেল খুব
নীল নেই, ধূসর মেঘে আকাশ ছেয়ে
আছে বরোষার আগমনী পাখায়
চেপে ভাসিয়ে দিচ্ছে স্মৃতি-
স্মৃতিতে বর্ষণমুখর সন্ধ্যা অপেক্ষায়
কতদিন পরে অঝোর ধারায়
নামলো বৃষ্টি আমার বিজন ঘরে;
____________________
কালো মেঘ ছুঁয়ে গেলো জানালার কাঁচ
দৃষ্টির পাখিরা বিপর্যস্ত দিগ্বিদিক ঝড়ে
ভাঙচুর সময় হাঁটে কণ্টক পথে বেসামাল
জানে না সে কতো দূরে নীলাঞ্জনাদের বাড়ি!
একটা কাজলা দিঘি ছিলো এই পথে হেঁটে যেতে
বুক জুড়ে ছিলো অগণন শ্বেতপদ্মের হাসি
হাওয়ায় মেঘেরা উড়ে এসে দিতো ছায়া দিনভর
হিজলতলায় পাশাপাশি বসা দুজনার চোখেমুখে।
জানে কি সে কতো ঝড় গেলে মিলবে শিমুলতলী গ্রাম
প্রণয়ের শাড়ি খুলে দেখো সব আজ বিরহ উদাম!