অশীতিপর বৃদ্ধ যখন অভুক্ত শরীর নিয়ে ঘর্মাক্ত দেহে রিক্সায় প্যাডেল মারে,
তখন প্যাসেঞ্জারের সিটে বসে প্রিয়ার সাথে নির্জনতার সুযোগ নিতে নিতে ভাবি;
ভালোই তো আছি।
রাস্তার পাশে ধূলোধূসর দেহে যখন অভুক্ত মা তার শিশুকে নিয়ে ভিক্ষা করে,
তখন চোখটাকে রঙিন কাঁচ দিয়ে আড়াল করে, দুটি টাকা ছুড়ে দিয়ে মহত্বের বুলি আউরে ভাবি;
ভালোই তো আছি।
গভীর রাতে যখন অজস্র কিশোরীর সম্ভ্রম বিকোয় একমুঠো ভাতের দামে,
মায়ের ডাক
একলা ঘরের কাব্য কথা, আকাশ ভরা চাঁদ,
সারা বিশ্বে সবার মাঝে ছড়িয়ে আছে
কাজের মোহন ফাদঁ,
পড়ার শেষে ছেলে মেয়েরা হায়,
চাকরি করার দোহাই দিয়ে সব
কই যে চলে যায়!
জীবন মানেই সামনে চলা, কোন সুদুরের টানে,
‘হেথা নয়, অন্য কোথা, অন্য কোন খানে’।
আয় রে আমার রোদের ছেলে
জোৎস্না মেয়ের দল।
শুন্য ঘরে একেলা বসে
শুনছি তোদের স্মৃতির কোলাহল।
এক্টুকেতেই সেই যে তোদের কতই অভিমান,
কিছুই ফেলনা নয় মানব জমিনে
অনন্ত সমাধি ঢেকে দিলে দেহের ফসিল
এ প্রাণের বায়ু মিশে থাকে মাটির নিভাঁজে
উর্বরা ধরিত্রী তাকে পোষে মায়াবতী বুকের কন্দরে
দ্যাখো, প্রাত্যহিক পরিত্যক্ত বিষ্ঠাও ফলায় সোনার ফসল
পরিতৃপ্ত সবার জিহ্বা ভরায় তাতে স্বাদের চুম্বন!
এ দেহের নিকানো উঠোন, রক্তমাংস, অস্থিমজ্জা, হাড়গোড়
সবই বিলিয়ে দিয়েছি সম্প্রদানের চুক্তিতে এক স্বাক্ষরে
দায়
একই ছাদের নিচে বসবাস। তবুও নেই সহাবস্থান। লোক দেখানো ভালোবাসা। সে-ও তো ছায়ার মত নীরব, নাটক বলা যাবে না, যেন জীবন্ত অভিনয়!... কী অদ্ভূদ প্রজাতি দু’জন। সম্পর্ক আছে, যে সম্পর্ক ঠিকে থাকাই আত্মসম্মানবোধ—
যেন একা, একাই ছুটছে নিজেদের দায়
প্রতিদিন
..:: এক ::..
তারায় তারায় খুঁজতে থাকি
এই একটা এতটুকুন একরত্তি ছোট্ট ছেলে।
রাতের বেলা চুপিচুপি কেন গেলি কোথায় গেলি মাকে ফেলে?
..:: দুই ::..
দাওতো ওকে আরেকটিবার নিয়ে নেই বুকে
দাওতো ওকে আরেকটিবার দেই আদর।
ছোট্ট কপালে আরেকটিবার টিপ দিয়ে দেই
সরাওতো ওই ভীষণ ঠাণ্ডা সাদা চাদর!
..:: তিন ::..
সারি সারি মাটির ঢিবি;
তারই একটা আজ থেকে তোর ঘর।
নিয়ে যা আমাকে ভয় পাবি একা!
নিজ পরিচয়ে সচলে নিবন্ধন করলাম। লেখালেখি কবিতা দিয়েই শুরু হোক।
পৃথিবী প্রসবের গান
যিশু মহমমদ
০১.
গন্তব্যের কথায় প্রায় প্রতিটি জুতাই সন্দেহ প্রবণ। আর আমরা যারা হাঁটতে শিখেছি, পায়ে
ডানা লাগিয়েছি হাঁটতে, তাঁরা কেউই রজনীর ভিতর খয়েরি আভিশাপের জানালাটা ছুঁই নি।
আমরা কেউই পার হতে পারিনি ধূর্ত কালোজামের ঠাট্টা। ছোটবেলার গন্ধের ভেতর ঝাঁক ঝাঁক
অমিতাভ দেব চৌধুরী
বহুদিন পরে আমার ঘরের কোণে
আকাশের ঝারি বৃষ্টি তো অকারণে
নামলো এবং মেললো ঘরেতে পাখা
শেষে দেখি ঘর, ভুলে তার আংরাখা,
উড়ে যেতে চায় আকাশের মেঘলোকে...
চিৎকার করি ৷কাঁপি সে ঘরের শোকে
বলি, আয় আয়, পৃথিবীর ছবি তুই
আকাশ তো তোর মাটি নয়,শুধু মই ৷
মেঘলোকে এক দর্পণ রাখা আছে
তবু তারও বড় দর্পণ এই ঘাসে
শিশিরবিন্দু হয়ে কাঁপে থরোথরো
সেই দর্পণে নিজের মুখটি পড়ো ৷
সকালে ঘুম ভেঙ্গে প্রতিদিন শুনি 'আমরা করবো জয়’
হারমোনিয়ামের রিডে তার আঙুলগুলো কিছুটা ত্রস্ত-বিষাদমাখা
অনেকটা বহুদূর ঘুরে আসা
ঘোড়ার ক্ষুরধ্বনির মতো ক্লান্ত--নুয়েপড়া
সারাটাদিন গানের ভেতরকার করুণ সুরখানি আমাকে নাড়াতে থাকে
অমিতাভ দেব চৌধুরী
আমার ভিতরে ছিল সুর,
আমি সেই সুর তোমাকে দিয়েছি ৷
তারপর থেকে ধু ধু সুরশূন্যতার পথেপথে
উটপাখিটির মতো ঘুরেছি কেবল ৷
ওদিকে আমার সেই সুর ততদিনে যেন
বাতাসে শিমুলতুলো, পেরিয়ে সকল কাঁটাতার,
সনাতন বাউলের হৃদয়-দুপুরে
হয়েছে উদাস ফেরিওলা
যতদিন তুমি ছিলে,
গানের চেয়েও বড় হয়েছিলে তুমি ৷
আজ তুমি অন্য দেশ,
হারানো সুরের খোঁজে পথ হাঁটি আমি ৷