১/
আমি কি লিখছি-
পাশে বসে বারুদে-আগুনে জ্বলছে
ছাইচাপা রহস্য!
২/
ছবির ভেতর মৌলিক আলোছায়া
রমনী একটু মেধা দিয়ে দেখুক,
অন্ধকার দেয়ালে
আলোর অধিক আরো কিছু আছে!
৩/
অভিমান ক্রোধ হলে আমি
মামুলী পৌরুষ ভস্ম করে দিতে পারি
যদি পায়ের কাছে বস প্রথম দিনের মত
ভাবতে পারি জলপদ্মের কথাও!
৪/
দুঃস্বপ্ন নামে অশ্রাব্য বৃষ্টি নামল
প্রেমিকই পৌঁছে দিল অঘাটায়
ফিরবার পথে শামুকে কেটেছে পা-
রাতের নিকষ গায়ে বুনে দিতে পারি যদি আমাদের ভালোবাসা সব
আমদের কিছু গান, কিছু কিছু ছেঁড়া সুখ, মায়াময় প্রিয় অনুভব
কিছু ম্লান মুখ যদি ফের ভাসে মাঠে মাঠে দুপুরের বিরহী বাতাসে
ফিকে রোদ নিভে এলে সুর তুলে ঝিঁ ঝিঁ ডাকা পুকুরের চেনা চারিপাশে
যখন তারারা এসে অচেনা দিনের মতো ভিড় করে আকাশের গায়
নিভে আসে ছায়াপথ আলো জ্বেলে দিয়ে দিয়ে ধীরে ধীরে দূর নীলিমায়
বিমুখ হাওয়া ও কথার ফুলঝুরির
ধ্যানে কেটে গেল অর্ধেক বেলা
আধোঘুম আধোজাগা; আহা! বাগানবাড়ি
যেখানে অন্ধকারের গভীরতা পরিপূরক...
২
যেখানে জিজ্ঞাসা
সেখানেই পালানো বিশ্বাসে
বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ ভালোবাসে
আমাদের সেই সাঁকোটা হারিয়ে গিয়েছে
এলজিআরডির কালভার্ট প্রিয় খালটারে দখল করেছে
হারিয়েছে দিগন্তের বুকে তার গুনচিহ্নের কাটাকাটি
ভি-ফ্রেমেবন্দি ওপাড়ের বয়সী বট, এবং
হঠাৎ আটকে যাওয়া কিশোরীর নীল ওড়না ।
সবকিছু এখন ছেলেবেলা হয়ে গ্যাছে,
এখন বাড়ী ফেরার আর কোন রহস্য নাই,
রিক্সাওয়ালা নেমে টেনে তুলে ব্রিজের চূড়া পর্যন্ত,
ক্যামন জানি একটা পর্বতাহোরণের স্বাদ হয়,
তারপর ঢালে ধীরে সহজ পতন,
পায় না প্রকাশ ঘরের প্রতি টান,
বাবা-মা এর খোঁজ দিতে যে চাপা অভিমান।
কয়টা টাকা , ইকটু আহার সবার প্রতি তাদের আহবান।
ওরা পথের ধারে পরে থাকা অনাথ , এতিম,
দুস্থ শিশু ।
চেয়ে দেখ ছুটছে ওরা তুমার পিছু পিছু।
কয়েছ কি কোন কথা ইকটু খানি আদর মাখা?
জানি বলনি !
দিয়েছ তাড়িয়ে,
যে এসেছিল হতভাগিনী।
আমিও করি অমন,
ভয় হয় সেদিন ভেবে
বিধি মোদের জবাব নিবে যেদিন ।
বিপ্লব নিয়ে কবিতা লেখা মানায় না আমাকে।
সুবিধা ও ভোগ, এই দুই বাদের ভোক্তা আমি।
আর অবসরে টিভির পর্দায় ভোক্তা, বিপ্লবের।
তাহরির স্কয়ার, বেনগাজি বা নূর হোসেন স্কয়ারে নিপাত যাওয়া একনায়কেরা
আমার মীমাংসিত দৈনন্দিনে উত্তেজনা দেয় কিছুটা।
এই তো।
না-যুদ্ধ, না-প্রেম, না-তীব্র, টিপটিপ যাপন করা দিনে,
দায়সারা সাবধানী আত্মপ্রেমিকতা।
তবুও হঠাৎ সাবধানের পকেট কেটে বেরিয়ে পড়ে দু-একটা আধুলি ইচ্ছা।
আমাদের নদী মরে গেছে সেই কবে
দোলে না সেখানে রূপালি ঢেউয়ের ঝাঁক
জারি-ভাটিয়ালি হারিয়েছে আজ সব
বুক জুড়ে শুধু দখলের মচ্ছব
বর্জ্যের বিষে ভরে গেছে প্রতি বাঁক।
এই তো সেদিন বুক ভরা ছিল জলে,
মাছরাঙা আর সোনালি চিলের দলে।
এখন সেখানে ড্রেজারের ঘড় ঘড়
ধু ধু বালিয়াড়ি—নিষ্ফলা মরা চর
শুনেছি এখানে নতুন শহর হবে।
আমাদের ছিল কাব্যের সুপ্রভাত—
ঝিঁ ঝিঁ ডাকা সাঁঝ, মধুচন্দ্রিমা রাত
একদিন আমিও বিলাসি হবো
পা’য়ে দলাবো সূর্যমল্লিকা
দু’চাকার বাইকে চড়ে থাকবে
বুকে’র গাঢ় স্পর্শে আস্ত এক রূপসী
পূর্ণিমার চাঁদ জড়াবো আধ ভাঙা শিমুলের ডাল আর
এগারো কেভি বিদ্যুতের জালে
শেষে রাস্তার পাশে’র নর্দমাজলে ডুবোডুবি
আমিও হবো স্বপ্নবিলাসি, স্পর্শবিলাসি
ছুঁয়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে
শরীরের নৈর্ব্যক্তিক ভালবাসায় চুর হবো।
তাই(ভালো হয়)আজ আমাকে কাছে রেখে দাও।
বিকেলবেলা মেঘ দেখে তুমি পথ হারিয়ে
চলে গেলে সন্ধ্যার দাইড়ে
ভ্রাম্যমান দৃশ্যে তুমি রাখতে পারোনি দৃষ্টি
স্তব্ধতা ভেঙে বেড়িয়ে গেলো জোছনারঙা ঘোড়া!
অন্ধকারেই আমি খুলে রাখি আমার এক একটি দিন,
পাঠ করি; দেখি জীবনে যথেষ্ট মুদ্রণপ্রমাদ!
তারপর...
যাই ডান থেকে বামে
বাম থেকে ডানে আসতে গেলেই দেখি
তুমি মাথার উপর অন্ধকার নিয়ে
ভুল ঘাটের জল ঠেলে দিচ্ছো আমার দিকে।
সে জল ভাসাতে পারেনা স্মৃতির নাও!
ধীরে ধীরে গভীর হয়ে আসছে রাত, ফুটছে চাঁদের আলো,
আকাশের নীল নদীতে রুপোলী ইলিশের মতো ভাসছে
অনেক তারার ঝাঁক। আমার মেয়ের চোখে নেমে আসছে
স্বপ্নীল ঘুমের নেশা, স্ত্রী ব্যস্ত আরেকটি দিনের ক্লান্তিকে
আপাততঃ ছাইচাপা দেবার জন্য বিছানাকে প্রস্তুত করতে।
এমন সময় আমার বুকের ভেতর খুব অস্ফুটে মাগো তুমি ডেকে উঠ
বহুদূর হতে সেই সুর শুনে আমি ডুবে যাই অনন্ত নদীর মতো