#
পলেস্তরা খসে পড়া ঘর, ঝুল মাখা ছাদ; কাঁচবিহীন জানালাবন্দী আমি ক্রমশ গতিহীন হয়ে পড়া ফ্যানের বাতাসে হাত পা ছড়ানো অবস্থায় প্রতিদিন বিষণ্ণ, নিস্তেজ সকালে নিজেকে আবিষ্কার করি। দেখি- চোখ দু’টো খোলা অবস্থায়,তিরতির করে কাঁপতে থাকা চোখের পাতায়, ঝুরঝুর করে ভেঙে পড়া, স্বপ্নের ভারে ক্ষয়ে যাওয়া বৈশিষ্ট্যহীন আমাকে।
আমি অর্ক। ক্লাস ফাইভে পড়ি। ফাইনাল পরীক্ষার পর লম্বা ছুটি। আমি আর মা গ্রামে এসেছি। এবার মামা বাড়ি। প্রতিবার এই সময়টা দারুণ কাটে। বাবা আসলে আরও মজা হতো।
[justify] দুষ্টুর অনেক আফসোসের মাঝে একটা বড় আফসোস তার নানাভাই। নানু মারা গেছেন সেই ছোট্টবেলায়, আবছা একটা ফটোগ্রাফ ছাড়া নানুর আর কোনও স্মৃতি নেই দুষ্টুর। তার আছে শুধু নানাভাই। ওর অনেক বন্ধুর নানুকেও দেখেছে ও, কিন্তু কেউই ওর নিজের নানাভাই এর মতো না। পাড়ার বন্ধুদের কথাই ধরি, মারুফের নানা থাকেন দেশের বাড়ি, প্রতিবার মেয়ের বাড়ি আসার সময় শুধু মারুফ না, দুষ্টুদের সকলের জন্যেই কতশত মজার জিনিস নিয়ে আসেন! রুপার নানা মারা গেছেন, ওর আছে নানী, নানীমনি কী সুন্দর গল্প বলেন! দুষ্টুর মাথায় বিলি কেটে কেটে কতদিন ওদের সবাইকে ঘুমকুমারির গল্প শুনিয়েছেন। দিনার নানাভাই এর মাথাভরা টাক আর গালভরা দাড়ি, ইংরেজি ছবি সান্তা ক্লজের মতো, দুষ্টুকে দেখলেই ছড়া কেটে বলেন, ‘দুষ্টের শিরোমণি, নামটাও তাই/ সারাদিন হেসে খেলে তাই তাই তাই! রিফাতের নানু একটু রাগী রাগী চেহারার, দেখলেই বানান জিজ্ঞেস করবেন, আর উৎরে গেলেই লজেন্স বা বাবলগাম দুষ্টু পাবেই!
ওপারে সন্যাসী গ্রাম। এপারে কলারণ। মাঝখানে পানঘুচি নদী। ও নদীর কুল নাই কিনারা নাই—আছে দৈরার পানি। পানি দেখলে বিশুবাবুর প্রাণ উড়ে যায়। তার এই ভয়ধরা মুখ দেখে বুড়ো মেনাজ মাঝি হাসে। বৈঠা হালকা মেরে বলে, আপনের বাড়ি কনে?
–ফরিদপুর।
চেয়ারে বসে থাকতে থাকতে কোমড় ব্যথা হয়ে গেল, আরমান বিরক্ত মুখে আরেকবার নড়েচড়ে বসে। বয়টাকে অর্ডার দিয়েছে ত কতক্ষণ আগে, এখনো চায়ের খবর নেই।আরিফের আসার কথা আরো পনের মিনিট আগে, দূরদূরান্তেও তার টিকিটা দেখা যাচ্ছে না। বড় টেবিলটার এক কোনে গুটিসুটি মেরে আছে একা, টেবিলের ওপর পড়ে থাকা পানি আর চায়ের মিশ্রণ, কয়েকটা চায়ের গ্লাস আর উচ্ছিষ্ট খাবারগুলোর দিকে তাকিয়ে কেমন একটা বিবমিষা হয় ওর। অনেকটা দাঁতের সাথে লোহার চামচের ঘর্ষণে যেমন লাগে তেমন।
#
গলিটির নাম কানাগলি, যদিও নামটি অস্বাভাবিক কিন্তু এলাকার লোকজনের ভেতর নাম নিয়ে কোনো অসন্তোষ ছিল না। পূর্বে এর নাম কী ছিল, শহর থেকে দূরে এই এলাকায় মানুষ কবে থেকে বসবাস করতে শুরু করে সে ব্যাপারে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় না। অনেকে বলেন, শহর থেকে বিতাড়িত কিছু লোকজন এখানে এসে বসবাস করতে শুরু করে এবং তখন তারা এর কোনো নাম দিতে ব্যর্থ হয় কিংবা দেয়ার ব্যাপারে কোনো উৎসাহ পায় না। কেউ কেউ এই যুক্তিকে ফুঁ মেরে উড়িয়ে দেয়, উড়িয়ে দিয়ে বলে লোকজন কেন এখানে এসে বসবাস করতে আসবে হঠাৎ করে? মানুষ আগে থেকেই থাকত ; কিন্তু তারাও পেছনে কোনো শক্ত যুক্তি দেখাতে ব্যর্থ হয়।
আমাকে সবাই কাব্য বলে ডাকে। নামটা আমার ছোটমামার দেওয়া। মামা ছড়া-কবিতা লেখে। আমাকে নিয়েও লিখেছে কয়েকটা। সবাই বলে, আমিও নাকি মামার মতো হয়েছি।
ঈশ্বর তাকিয়ায় হেলান দিয়া পান চিবাইতেছিলেন কচরমচর করিয়া। মাদার সুপিরিয়র রুষ্ট কণ্ঠে কহিলেন, "আর তো পারি না। স্বর্গযাজিকাদের লইয়া বিষম বিপদে পড়িয়াছি।"
ঈশ্বর পিকদানিতে পানের পিক ফেলিয়া বিগলিত রসসিক্ত কণ্ঠে কহিলেন, "কেনু? তাহারা কি দুষ্টামি করিয়া বেড়ায়? লিখাপড়া করে না?"
নিকশ কালো অন্ধকার। মাঝে মাঝে ময়লা হলুদ ছোপ ছোপ। ব্যাকগ্রাউন্ডে নীল, মাঝে সাদা সাদা ছিটে। একটা আবছা ধোঁয়াশা অবয়ব। এই মধ্যরাতে জনশূন্য রাজপথ আর একলা আকাশের মাঝে মিতালির সাক্ষী হয়ে মৃদু ছন্দে হেঁটে হেঁটে চলে যাওয়া এক কিশোর। কে জানে, তার গন্তব্য কোথায়?