"এই যে ভাই, ৬৬/৪ বাড়িটা কোন দিকে"?
"আরেকটু সামনে আগায়া হাতের ডাইনে যে লাল গেইটের বিল্ডিংটা দেখবেন, মাথা নিচু কইরা সেই গেইট দিয়া ঢুইকা পড়বেন"।
ক্যালকুলেটরে হিসেব কষতে কষতে আধবুড়ো দোকানী না তাকিয়েই জবাবটা দিল। ভাবে মনে হল, আগেও অনেককে এমনি করে রাস্তা বাতলে দিতে হয়েছে।
"কিন্তু ঐ বিল্ডিং তো একজন ডাক্তারের চেম্বার..." খানিকটা স্বগতোক্তির মতই কথাগুলো মুখ থেকে বেরিয়ে এল। আমি যা খুঁজছি সেটা তো নয়।
…
ঘড়িতে সাতটা বাজে। মানে সকাল সাতটা। রুহি জানে, এখনি কলিং-বেলটা বেজে ওঠবে। ছুটে গেলো জানলার পাশে। সারি সারি ফ্ল্যাট বাড়িগুলোর ফাঁক দিয়ে গলিটা খুব একটা দেখা যায় না। তবু যতটুকু চোখ যায় দেখছে সে। কিন্তু কই, দেখা যাচ্ছে না তো কাউকে। আর তর সইছে না তার। আসছে না কেন, কী হলো আজ ?
অভ্রের সাথে আমার যখন বিয়েটা হয়, বুঝতেই পারিনি কি হতে যাচ্ছে। খুব হঠাৎ করে আর খুবই সাধারণভাবে আমাদের বিয়েটা হয়ে গেল। সাধারণ বলতে আসলে অনুষ্ঠানটার কথা বলতে চাচ্ছিনা, অনুষ্ঠান একটা হয়েছে মাশাল্লাহ, কিছুরই অভাব ছিল না। বলছিলাম পুরো প্রক্রিয়াটার কথা । কোথায় কেউ এসে আমাকে একটু খোঁচা দেবে..." আপু, বরটা তো সে রকম পেয়েছেন"।অথবা বিয়ের পর কি কি হবে সেসব নিয়ে দু'একটা কথা বলতে ছাড়বে না, এমন কিছুই হয
পাকা রাস্তার পাশেই স্কুল। বাজার থেকে একটু দূরে। দোতলা বিল্ডিং। সামনে বিশাল মাঠ। মাঠে অবশ্য খেলা হয় না। ভাড়া দেওয়া। সপ্তাহে দুইদিন হাট বসে। স্কুলে মোট চারজন শিক্ষক। প্রধান শিক্ষক খুব একটা ক্লাস নিতে পারেন না। যেদিন ঢোকেন, সারা স্কুলে খবর হয়ে যায়। বের হওয়ার সময় বলেন, একটু ওষুধ দিয়ে গেলাম। যখন লাগবে আবার আসব।
কতিপয় পিঁপড়া
আমিন সাহেব অনেক দিন পর বাজারে যাবেন ঠিক করলেন। কেবিনেটের ড্রয়ার খুলে একটা বান্ডিল সাফারি কোটের পকেটে পুরতে পুরতে একটু থমকে দাঁড়ান। ছাত্রাবস্থায় বিনা পয়সায় বাজার করার কথা মনে পড়ায় তার মুখের এক কোণায় একটু হাসি ফুটে উঠে, এখন নিজের একটা স্ট্যাটাস আছে, এইসব ছোটখাট মাস্তানি এখন আর তার সাথে যায় না।
১##
মুসলিম সমাজে ইব্রাহীম নাম খুব পরিচিত নাম হলেও ভূতের গলির ইব্রাহীমকে পাড়ার দু’একজন লোক ছাড়া কেউ চিনত না, জানত না। এর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্রমূলক অভিপ্রায় কারো ছিল না। বস্তুত, ইব্রাহীম নিজেই ওমন ছিল, সাধারণ, খুব সাধারণ।
"এই সকাল বেলা কোথায় যাও তুমি?" দরজা দিয়ে বের হয়ে যাবার সময় পিছন থেকে জিজ্ঞেস করে রুহান। ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে আছে দরজার দিকে। তন্বি একবার ঘাড় ঘুরিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে কোন কথা না বলে বের হয়ে যায়। কাল রাতের কথা মনে পরে কেমন যেন লাগতে থাকে রুহানের। "তন্বির চোখটা কি ফোলা ফোলা ছিলো?" কথাটা মাথায় আসার সাথে সাথে বিছানা থেকে নেমে দরজার দিকে যেয়ে খুঁজতে থাকে তন্বিকে। কারো পায়ের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে সিঁড়ি দিয়ে উপরে
এখন শুধু অপেক্ষা করার পালা। জুৎসই মতো একটি জায়গায় ঘোড়াটিকে দাঁড় করিয়ে রেখে তার ছায়ায় বসে পড়ল মেষপালক। তার পাশেই আধ হাত মত দূরত্বে পেছনের পায়ের ওপর ভর দিয়ে বসেছে কুকুরটা। সামনের পা দুটোকে তীর্যক ভাবে টান টান করে চিরাচরিত কায়দায়। মুখের তুলনায় অস্বাভাবিক বড় জিবটাকে ঝুলিয়ে দিয়ে মাথাটাকে দোলাতে লাগল একটা ছন্দ বজায় রেখে। মেষপালক হাত বাড়িয়ে বার কয়েক কুকুরের মাথা ছুঁয়ে দিল আদর করার ভঙ্গিতে।
ধুকধুক করে কিসের যেন শব্দ হচ্ছে। সে চমকে ওঠে, একটু ভয় ভয়ও করে। এদিক ওদিক নড়াচড়ার চেষ্টা করতেই সে বুঝতে পারে পুরোপুরি ডুবন্ত অবস্থায় আছে সে। সামনে বা পিছনে যাবার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে শেষ পর্যন্ত সে শান্ত থাকে। কিন্তু শরীরকে কোনভাবেই আয়ত্বে আনা যাচ্ছে না, শরীরটা ঘুরেই যাচ্ছে, ঘুরেই যাচ্ছে। ধুকধুক শব্দটা মনে হচ্ছে তার ভেতর থেকেই আসছে। আতংকে চেঁচাতে চায় সে, কিন্তু কার উদ্দেশ্যে চেঁচাবে? সে আসলে কে?