মার্কিন ক্যাপ্টেন স্যামুয়েল হর্নক্লিফ গম্ভীর স্বরে বললেন, হাঁ যা ঘটেছে তা অতি দুঃখজনক। আটারলি ডিস্যাপয়েন্টিং অ্যান্ড কোয়াইট আনফরচুনেট ইন্ডিড। এই ভারতীয় ছেলেটি চমৎকার রাঁধে, সে যে আচমকা ঢিল ছুঁড়ে মানুষ মেরে ফেলবে তা ভাবা যায়নি।
পাশে দাঁড়ানো লম্বা জামা পরিহিত চীনে প্রশাসক চাওলুং সরু চোখে তাকিয়ে রইলেন, কিছু বললেন না। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হর্নক্লিফ বললেন, আমরা আমেরিকান। স্থানীয় আইনের প্রতি সর্বদা শ্রদ্ধাশীল। এই ছেলের বিচার কি করবেন আপনারাই স্থির করুন।
লালুর মুখ এতক্ষণ বাঁধা ছিল। চাওলুং এর চোখের ইশারায় পাশে দাঁড়ানো চীনে পেয়াদা মুখের কাপড় খুলে শক্ত করে তার হাত পিছমোড়া করে পেঁচিয়ে ধরল, আর সেই ফাঁকে গলা ফাটিয়ে লালু বিশুদ্ধ ইংরেজীতে বলল আই অ্যাম ইনোসেন্ট। আমি কিছু করিনি। আই ওয়াজ নট ইভেন অন ডেক, আমি তো নিচে ফেটে যাওয়া আফিমের বাক্স সারাই করছিলাম।
ক্যাপ্টেন হর্নক্লিফ আর তার মার্কিন সহ অফিসারগণ কিঞ্চিৎ থতমত খেয়ে গেলেন। এই ভারতীয় চাকর বেশ ইংরেজী বলতে পারে দেখছি। অল্প কিছুক্ষণ নীরবতা, তারপর চাওলুং হর্নক্লিফের দিকে তাকিয়ে ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে সন্দিগ্ধ স্বরে বললেন, হি সে ওপিয়াম? য়ু হ্যাভ ওপিয়াম?
আর ইউ ওকে টু টক?
সামনে বসা পুলিশ অফিসারের প্রশ্ন। গলায় অঢেল কোমলতা। ধবধবে সাদা চামড়া। নীল চোখ। রিয়েল অ্যামেরিকান পুলিশ।
বাড়াকাত মোটেই ওকে না। ওকে থাকার কথাও না। পশ্চাৎদেশের ব্যথা কঠিন ব্যথা। কী যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে, কভু আশীবিষে দংশে নি যারে!
বাড়াকাতের মনে হচ্ছিল অন্য কথা। এই ব্যথার চেয়ে আশীবিষের কামড় ভালো ছিল। হায় রে সাপ! তুই কামড় দিলি না, কামড় দিল অভিশাপ!
বৃত্ত ভাঙা নিয়ে ভাববার খুব একটা অবকাশ পাচ্ছিনা। এখানে এখন রুদেলান্তির সময়, ঈশ্বরের অনুগ্রহ হাত ভরে নেবার কাল। সোনালি স্রোতের যেন কোন শেষ নেই, শেষ নেই ছাঁকনদারদের ব্যাস্ততার, তারচেয়েও ব্যাস্ত বাদামিরা। এরই ফাঁকে আমাদের তল্লাটে বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে। বৃত্ত গুলো এখন আরও বড়, আরও উষ্ণ। আর্দ্রতা কমে এসে অমৃতের স্বাদটাকে কেমন যেন পাল্টে দিয়েছে। তবে নিজেকে দারুণ শক্তপোক্ত আর চনমনে লাগে আজকাল, বাকি একুশ জনের দিকে তাকিয়ে টের পাই কলেবরে বেশ বেড়েছি আমি।
আরে, এই ইলেকট্রিকের খাম্বার পাশেইতো ছিলো মেয়েটা! লাল ফ্রক পরা! মিনিট তিনেক আগেইতো মিনুকে এখানে ট্রাঙ্কের উপর বসিয়ে রেখে ড্রেনের ধারে বহুক্ষন ধরে চেপে রাখা “ছোট-কাজ” সারতে গিয়েছিলেন নজীর আলী। কোথায় গেল বাচ্চাটা? এতবড় ঢাকা শহর। কিছুই চেনেন না। সদরঘাটে লঞ্চ থেকে নেমে সরাসরি বাসে চেপে পি.জি.
কয়েক বছর ধরে স্যারের হয়ে কাজ করছে জয়নাল হাটিকুমরুলি। খাটনির তুলনায় বেতন খারাপ না। দুই ঈদে বোনাসও দেন স্যার। ছুটি তেমন পাওয়া যায় না অবশ্য, কারণ কখন কোথায় স্যারের ডাক পড়ে, আর তাঁর সাথে তাকে ছুটতে হয়, তার তো কোনো ঠিক নেই।
দুঃখ একটাই।
খেলাটা বেশ জমে উঠেছে এতক্ষণে। প্রীতি ফুটবল ম্যাচের প্রায় আধাঘণ্টা চলে যাওয়ার পর এবার দুই দলেই দারুণ উত্তেজনা উত্তেজনা ভাব বোঝা যায় মাঠের বাইরে থেকেই। হলদে আলো মরে আসতে থাকা এই ফ্যাকাশে শেষ বিকেলে সেই উত্তেজনার ভাগিদার হতে কপালের মাঝে উড়ে আসা গুঁড়ো চুল সরিয়ে জ্যোতি চোখ তুলে তাকায় মাঠের মাঝখানের নানা রঙের ছোট্ট ভিড়টায়। খেলাটা এই ট্রেনিং সেন্টারের প্রশিক্ষক আর প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে, এমন খে
নদীর নাম তরা, ব্রিজের পাশে ছোট একটা নামফলকে লেখা। ব্রিজটা বেশ উঁচু, অনেক নীচে মাটি দেখা যাচ্ছে। হ্যাঁ মাটিই, পানি না। যত দূর চোখ যায় শুধু ধু ধু বালি চোখে পড়ে। আমি সাঁতার পারিনা, কিন্তু নদী বা সাগর আমাকে কেমন যেন টানে। যে চাকরি করি, তাতে সারা দেশ টো টো করে ঘুরে বেড়াতে হয়।যখন যেখানে যাই, খোঁজ নেই আশেপাশে কোন নদী আছে কিনা। থাকলে একবার হলেও ঘুরে আসি।ব্যাপারটা কেমন যেন নেশার মত হয়ে গেছে।আজ অবশ্য সেরকম
(ভেবেছিলাম দুই পর্বে শেষ করব, কিন্তু ইচ্ছে করছে লিখতে থাকি- তিন, চার, হয়তো পাঁচ। সময় পাওয়াটাই মুশকিলের। তারচে মুশকিল মডারেটরদের রাজি করানো)
সবুজ তল্লাটে কাউকে প্রার্থনা করতে দেখিনি কখনো। ছাঁকনদারদের কাছে ঈশ্বরের কথা শুনেছিলাম একবারই- যখন প্রিংতা এসেছিলো। বাদামিদের কথা আলাদা, এদের ঈশ্বর ভক্তি দারুন প্রবল। রুদাই নিয়ে ফিরে আসার পর থেকেই দেখতে পাচ্ছি গুনগুণ করে একটা গান গাইছে সবাই। গানের কথাগুলো স্পষ্ট নয়, তবে যেটুকু ধরতে পারছি তাতে ঘুরেফিরে ঈশ্বরের বন্দনাই, সম্ভবত প্রার্থনা সংগীত। ভীষণ একঘেয়ে একটা সুরে, পালা করে জোড়ায় জোড়ায় গেয়ে চলেছে,
নিস্প্রানে থাকে প্রাণ
ঈশ্বর (দুর্বোধ্য) তাই
(দুর্বোধ্য) ঈশ্বর
পর্ব = ৬
(পূর্ববর্তী পর্বের লিঙ্ক গল্পের শেষে)
এই বিস্তির্ন তুষার ঢাকা প্রান্তরে জানালার কপাটগুলো তুলে লাগানোর মত কিছু খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু কিল্গাস বললো, “ভান্যিয়া (আইভান নামের সংক্ষিপ্ত রুপ), আমি একটা জায়গার খবর জানি যেখানে দারুন ফেল্টের (Felt : পশম বা লোমকে চেপে তৈরী এক ধরনের মোটা কাপর) রোল আছে যেগুলো ফ্রেমের সাথে জুড়ে ছাদের কাঠামোর অংশগুলো তৈরী হচ্ছে। ওগুলো আমি নিজের হাতে সরিয়ে রেখেছিলাম। চল, ওগুলো চুরি করে নিয়ে আসি।”
কিল্গাস জাতে লাটভিয় কিন্তু রাশান ভাষায় কথাবার্তা বলতে পারে একেবারে স্থানীয়দের মত। ওদের গ্রামের কাছে একটা প্রাচীন মতাদর্শীদের (Old Believers, এরা ১৬৬৬ ইং সনে এই মতাদর্শীরা আদর্শগত বিরোধের কারনে রাশান অর্থোডক্স চার্চ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন করে ফেলেছিল) একটা উপনিবেশ ছিল এবং একারনে শৈশব থেকেই তার রাশান ভাষা শেখা হয়ে গিয়েছিল। তার ক্যাম্পের জীবন মাত্র দুই বছরের, কিন্তু এরমধ্যেই সে সব কায়দা-কানুন বুঝে নিয়েছে। এখানে দাঁত দিয়ে কামড়ে আদায় করে নিতে না জানলে কিছুই পাওয়া যায় না। ওর আসল নাম জোহান এবং সূখোভও ওকে ভান্যিয়া বলেই ডাকে।
এরা মাঝে মাঝেই জানতে চায়, আমি কোথা থেকে এলাম। আমি বলি- একটা ভালভ টেনে, আর সে ভালভটা ছিলো সুতোয় বাঁধা। তখন অবাক বিস্ময়ে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে থাকে, ভালভ সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই এদের, সুতো জিনিসটাও অচেনা। আমি নিজেও বুঝিয়ে বলতে পারিনা, আমার কিছু মনে নেই। এদের কৌতূহল অবশ্য ওই পর্যন্তই, খুব বেশি ঘাটায় না আমাকে। আমিও নিবিষ্ট মনে কাজ করে যাই।