তার নিষ্পাপ চোখের ছায়ায় বিস্ময়ের ছোপ ফেলে কাঁসার হাঁড়িটা নিজে থেকেই রান্নাঘরের তাক গড়িয়ে মাটিতে পড়তে শুরু করে, তারপর স্কুলঘন্টির মতন বিকট একটা ঠন্ করে উঠে। ভোরবেলার ধুলায় পাকা মেঝেতে কাতরাতে কাতরাতে পাত্রটা অনেকক্ষণ ধরে একটা কিচকিচকিচকিচ শব্দ করতে থাকে, যেমনটায় দাঁতে শিরশির ধরে যায়, তারপর থামে। কিন্তু এসব তখন তার খেয়াল করার সময় ছিল না, খেয়াল করলেও অবশ্য ক্ষতি ...
।।শামীম।।
ফুটপাথের এক কোনায় পাশের পাগলটার গা বাঁচিয়ে সাবধানে বসলাম। মোটা এক ধরনের কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে রাখা গা থেকে ক্যামন বিটকেলে গন্ধ। আজকাল আর শান্তিতে কোথাও বসার উপায় নাই! পিছনের থামের মত দেখতে বিল্ডিংটার এদিকে বিকালে রাজ্যের মানুষজনের ভিড়, তাই পেছনের বাগানের পাশ দিয়ে যাওয়া ফুটপাথে জিরানোর চেষ্টা করি একটু। দুপুরের খাবারটা এখনো কেমন ভুটভাট করছে পেটের ভেতর। একটু ঝিমিয়ে নিই, ...
বড় একটা দম নিয়ে কীবোর্ডে ‘এন্টার’ চাপ দিয়ে আমি চোখ বুজঁলাম। বুকের মধ্যে হৃৎপিন্ডটা এত জোরে লাফাচ্ছে যে আমাকে বা হাতে বুকটা চেপে ধরতে হল। অথচ আমি নিশ্চিত জানি, বিফল হবার কোনো সম্ভাবনাই নেই। একটু আগে সেই সম্ভাবনাও আমি হিসাব করে নিয়েছি, কম্প্যুটার দেখিয়েছে ০.০০০০০২ শতাংশ।
চোখ খুলে মনিটরের দিকে তাকিয়ে আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলি আমি। কম্প্যুটার দেখাচ্ছে,
The Next Prime Number –
নিচে কোটি কোটি ...
১
ঠান্ডা ধূসর আকাশ থেকে অদ্ভুত বিষন্ন বৃষ্টি পড়ছে, অবিচ্ছিন্ন অশ্রুর মতন, বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নেমে আসে, জানালার ধারে দাঁড়িয়ে আমি দেখতে থাকি পথবাতিগুলির জ্বলে ওঠা, একের পর এক। এইখানে কয়েক মাস হলো এসেছি, এই দ্বীপরাজ্যের আবহাওয়া নাকি প্রায় সারাবছরই এমন ছিঁচকাদুনে বৃষ্টি আর বৃষ্টি। বন্ধুবান্ধব যারা থেকেছে সকলেই এই নিয়ে বিতৃষ্ণ। কী জানি আমার থাকতে হয় কতবছর।
মনে পড়ে রৌদ্রতপ্ত দ ...
এ গল্পটি বিদ্যানারায়নের। অথচ চাইলে এটি অন্য অনেক কিছুর গল্পই হতে পারতো। তা হয় নি কারণ আজ বিদ্যানারায়নের সামনে মেলে ধরা বইয়ের পাতার গুটি গুটি অক্ষরগুলো ঝাপসা হয়ে আসছে। সারি সারি সমীকরণের গোলকধাঁধায় দিশেহারা হচ্ছে বেচারা। নিশ্চিত ভাবেই আজ বিদ্যার্জনের জন্য প্রসন্ন দিন নয়। আজ ডিসক্রিট সিগন্যাল আর মাইক্রোপ্রসেসর ইন্টারফেসিং বইগুলো তাকে তুলে রাখার দিন । আজ বিদ্বান হবার দিন ন ...
সময়টা প্রায় দুপুর। অর্পিতা হাফ ইয়ার্লির খাতা নিয়ে বসেছে। হাতে একটা হলুদ কলম যার কালি লাল। ডান গালে একটা লাল রেখা। তর্জনীতে লেপটানো লাল কালি। ছুটির আর মাত্র দিন তিনেক আছে অবশিষ্ট। এর মধ্যে শেষ করতে হবে এত এত খাতা। কাগজের খস খস গা শিউরানো কর্কশ শব্দ ছাড়া এ ঘরে আর কোনো শব্দ নেই।
এটা ছোট্ট গোল কাচের টেবিল, নিচু, গাঢ় রঙের। খাতাগুলো ছড়ানো টেবিলে। অর্পিতার বাদামী-খয়েরী মগ এক পেট চা নিয় ...
"Memories are all we end up with. At least pick the nice ones."
- Morales
[The Secret In Their Eyes (El Secreto De Sus Ojos)]
মৃত্যুর পূর্বমূহুর্তে শহরের লোকেরা নাকি ফিসফিসিয়ে 'নির্জনপুর ! নির্জনপুর !' বলে থাকে। এই শহরের মানুষেরা মুখোশও পড়ে থাকে সবসময়ই- হয়তো মৃত্যুর সময়েও তারা সেটি খুলে নিতে অলসতা বোধ করে। কাজেই ঠিক মরণের ক্ষণে সেইসব ফিসফিস স্বরকে তাদের মুখোশের অন্তরালের প্রলাপ বলে আখ্যা বোধহয় দেয়া যায়। অথবা ইটের, অথচ মানুষের, শহরে আজীবন নির্জ ...
আঠারো তারিখ, শনিবারঃ
আমি বিলু।
আমার নাম আসলে অনেকগুলো। বিলু,বাপী,বাবন। আর কয়েকদিন পর আমার অবশ্যি কোন নামই থাকবে না। আমি তখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরব, কাগজ টুকাবো। কাগজ টুকানি ছেলেকে কি কেউ বিলুমণি বলে ডাকে? আদর করে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়?
রাস্তায় কারা থাকে? যাদের মা নেই, বাপ নেই, তারা। আমার অবশ্যি সবাই আছে। তাও আমি রাস্তায় থাকবো। কারণ আমার মা আর বাবার মধ্যে শিগগিরি ডিভোর্স হয়ে যাবে।
ক ...
ফেসবুকে যারা ঢোকে, তাদের কি কাজকাম নাই?
প্রশ্নটা মাঝে মাঝে সশব্দে করে ফেলি, বউ অন্য ঘর থেকে তখন ইস্রাফিলের শিঙার মতো সুরে কী যেন বলে। পুরোটা বুঝতে পারি না, মনে হয় সায় দেয়।
ফেসবুকে লোকজনকে ফালতু কাজে ব্যস্ত রাখার জন্য চতুর লোকজন কত কারিকুরি বার করেছে, দেখে মাঝে মাঝে তাজ্জব হয়ে যাই। একটা কম্পিউটারের সামনে বসে কোনো নিরস চেহারার ছেলে, হয়তো সাতদিন ধরে গোসল করে না, দাঁত মাজে না ...
১,৩৬৭,৪৪০ টি মৃত চড়ুই
১৯৫৮ সালে চীনের চেয়ারম্যান মাও জেদং কৃষকদের কথা ভেবে চারটা ক্ষতিকারক প্রাণীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামেন। চালু করা হয় চার বছরব্যাপী ফোর পেস্ট ক্যাম্পেইন। ইঁদুর, মাছি, মশা আর চড়ুই চীন থেকে তাড়াতে শুরু হয় ব্যাপক প্রচারণা। চড়ুই খারাপ কারণ তারা বীজ খায়। ঢোল, বাসনপত্র বাজিয়ে বাজিয়ে চীনের লোকজন চড়ুইদের ওড়াতে ওড়াতে ক্লান্ত করে। বাচ্চারা বুড়োরা তখন কানটা গুলতি দিয়ে ...