আমি একটা টিয়া পাখি
আকাশলীনা নিধি
টেবিলে বসে আমরা সবাই খাচ্ছি। এমন সময় আপু বলল 'কার কী হতে ইচ্ছে করে'। ভাইয়া বলল ডাক্তার। মা বলল টিচার। বাবা বলল লেখক, আপু বলল নায়িকা। আমি বললাম পাখি। সবাই আমার দিকে তাকাল। ভাইয়া বলল তুই পাখি হবি। আমি বললাম হ্যাঁ। আর কেউ কিছু বলল না।
দ্বিতীয় দিন
ওহাব ভাই জ্ঞানী লোক এবং ওজনদার লোক। আমাদের আড্ডার দু’টো বেঞ্চের একটা সম্পূর্ণ তার জন্যই বরাদ্দ থাকে। কারণ ঐ যে বললাম ওজনদার লোক, তার বিশাল বপুর জন্য একটা গোটা বেঞ্চিও কম পড়ে যায়। তার ওজন যে কত সেটা বলা মুশকিল। একবার একটা ছোটখাটো ওজন মাপার মেশিনে দাঁড়িয়ে বললেন “দেখতো দেখি কত বলছে?” ঢাউস ভুঁড়িটার জন্য নিজে যে ঝুঁকে দেখবেন সে উপায় নেই। আমরাই ঘাড় নিচু করে দেখতে চেষ্টা করি, কিন্তু কাঁটাটা একেবারে শেষ
“কাল রাতে না খুব বাজে একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছিলাম।“
বিছানায় চোখ আধবোজা অবস্থায় শুয়েছিল শাহেদ। অফিসে থেকে ফিরেছে কিছুক্ষন আগে। শুনে ড্রেসিং টেবিলের দিকে তাকালো, যেখানে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মীরা চুল আঁচড়াচ্ছে। আজ তার অফিসে বিকেলে ডিউটি পড়েছে, একটু পরে বেরোবে, তারই প্রস্তুতি নিচ্ছে।
“তাই?”
আমাদের মায়ের মাঝে কোনো রহস্য ছিল না। মা ছিলেন সাদামাটা চেহারার বৈচিত্র্যহীন একজন মানুষ। মায়ের পরনে বরাবরই আটপৌড়ে পোশাক। ঘরে বা বাইরে বেরোলেও মায়ের পরনে মাড়হীন জংলি ফুলের নরম শাড়ি থাকতো। সাথে থাকতো কালো রঙের কুঁচি দেয়া বোরকা। সুতি শাড়ির বদলে কখনো জর্জেট বা সিল্ক নতুবা শাড়ির বদলে কামিজ বা ম্যাক্সি পরাও দেখিনি মাকে। মায়ের তোলা শাড়িগুলো আলমারি থেকে বের হতো কদাচিত। কোথায়ই বা যাবে মা?
গুলবদন রান্নাঘর থেকে খরচের তীরটা ছুঁড়ে দিয়ে জানালো, পেঁয়াজ নাই, পেঁয়াজ আনতে হবে।
দূর থেকে তীরটাকে আসতে দেখে পেয়ারালী লুঙিতে গিঁট দিয়ে গাঁট হয়ে বসলো। তীরটাকে খপ করে ধরে আবার জায়গামতন ফেরত পাঠাতে হবে। পকেটে একটা টাকাও নাই। কাল রাতে চাল ডাল তরকারি কিনে সব শেষ। পেঁয়াজের কথা মনে ছিল না। তবে লুঙ্গির গোপন খুপরিতে ১০০ টাকার একটা নোট লুকিয়ে আছে, সেটা আরো মহা কোন বিপদের জন্য। তরকারীতে পেঁয়াজ না খেলে কিছু এসে যায় না। সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান সাহেবও বলতেন - পেঁয়াজের দাম বাড়ছে তো কি হইছে, পেঁয়াজ না খাইলে কিতা অয়?
বুকের উত্তাপে রেখে দেওয়া সুখ-দুঃখের ফর্দখানা উল্টেপাল্টে দেখে নিয়ে ওরা প্রত্যেকে এক একটা নতুন গল্প বলবে বলে ঠিক করে। তারা, মানিক, মিতু, সবুজ আর তিতির। ওদের বয়স বাইশ-তেইশ বা মাস দুয়েক কম বেশি। এই বয়সে গল্প বা কল্পগল্প বলতে কাউকে ঠেলাঠেলি করতে হয় না। বরং কথার তোড় বন্ধ করতে মিনতি করা লাগে। তবে হার্ড পয়েন্টের আজকের পরিবেশটাই অদ্ভুত। মায়াময়। ধীরে ধীরে সূর্য জলস্নানে নেমে পড়ছে।