১.
'স্বনির্ভরতা।' সুলেমান সাহেব হাসলেন। 'কথাটা হচ্ছে স্বনির্ভরতা।'
বদরুল কিছু বললো না, সুলেমান সাহেবের বাড়িয়ে দেয়া হাতের লাইটারে চুপচাপ সিগারেটটা ধরিয়ে নিলো। সুলেমান সাহেবের হাসিটা তার পছন্দ হচ্ছে না। ভদ্রলোক নিজেও অস্বস্তি নিয়ে হেসে যাচ্ছেন, আর তাকেও অস্বস্তির মধ্যে ফেলে দিচ্ছেন।
'চান্দিনা এখন স্বনির্ভরতা অর্জন করেছে।' বেশ গর্বিত সুরে বললেন সুলেমান।
বদরুল পায়ের ওপর প ...
লোকটা জ্বলজ্বলে চোখে তাকিয়ে বলে, "লোকে হয় জাম্বুরা খায়, নয় তরমুজ খায়।"
আশেপাশে দুয়েকজন উৎসুক চোখে তাকায় তার দিকে।
লোকটা উৎসাহ পায়। ঠেলাগাড়ির ওপরে রাখা বইগুলো থেকে একটা তুলে আনমনে দেখায় সবাইকে। প্রচ্ছদে বড় বড় হরফে লেখা, দুই শ্যালকের নাও।
জাম্বুরা আর তরমুজের প্রতি উৎসুকেরা আগ্রহ হারাতে সময় নেয় আরো কিছুক্ষণ। লোকটা আড়ে আড়ে তাকিয়ে দেখে তাদের হাবভাব। মনটা এক ...
দিদিমা এখন প্রায় সময়ই বলেন;
: সময়টা বালা নায়, কুব খারাফ সময় আইছে। দেখছ না, গাঙ্গের পানি তার দাঁতে দাঁত ছাইপ্পা কেমন হুড়মুড় কইরা পাহাড় তনি লামতাছের? গাঙ্গের ফানিত্ ক্ষুধার আগুন। এই আগুন সবার সুক জ্বালাইব, খেউরে সুকে থাকতে দিত নায়। আছকু আমি গাঙ্গের পানিত গোছল করবার সময় টের পাইছি। ইবার বুঝি এর লাইগ্গাই খেতে খেতে অত ধান অইছে?
: খেনে, কিতা অইছে দিদিমা? দিদিমা বিড়বিড় করে এই কথাগুলো বলতে নী ...
কতক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে আছি ঠিক মনে করতে পারছিনা। আমি ঘড়ি পড়িনা, মোবাইলের ঘড়ির অপশনটাও বন্ধ করে রেখেছি। ঘড়িটাকে কেমন ঘন্টি ঘন্টি লাগে। যেন বার বার বলে, ব্যাটা তোর সময় ফুরোচ্ছে। যা করার তাড়াতাড়ি কর। আমার তাড়াহুড়া পছন্দ না। আমি একটু আয়েশ করেই থাকতেই পছন্দ করি।
ক্যাব থেকে মাত্রই নামলো দেবী। আমার চোখের সামনে আমার দেবী। ক্যাব থেকে নেমেই ভাড়া চুকিয়ে আমার কাছে এলো। ঘেমো মুখ। অদ্ভুত টোল ...
প্রায় বছর পাঁচেক আগের কথা। অন্যান্য দিনের মত সেদিনও সন্ধ্যেবেলা অফিস থেকে ফিরে বাড়ির দরজায় বেল বাজিয়েছি। সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসা হাওয়াই চপ্পলের চটর-পটর ধ্বনি শুনেই মনে হল বৌ যেন আজ খুশীতে ডগমগ হয়ে নামছে। জুতোর ফিতে খুলতে খুলতে শুনলাম, ‘জানো তো আজ দিয়া, ... না থাক তুমি বরং ফ্রেশ হয়ে নাও। চা খেতে খেতে বলব।’
দিয়া, মানে আমার মেয়ে। বছর তিনেক বয়স। কিছুদিন হল প্লে-স্কুলে যাওয় ...
---নিশা---
১.
"বুঝলি টুকটুক, মাথায় দারুণ একটা তত্ত্ব এসেছে। একেবারে নতুন।" চেয়ারে বসে টেবিলের উপর পা তুলে দিয়ে বিজ্ঞের ভঙ্গিতে ভাইয়া বললো।
"তোমার মাথায় তো সবসময় নতুন নতুন সব 'তত্ত্ব' গিজগিজ করে। তা কী সেই তত্ত্ব, শুনি।" মুখ বাঁকিয়ে আমি বললাম।
"তোর মতন এমন বাচাল, ঝগড়াটে আর গুণ্ডি মেয়ের নাম 'ঝাণ্ডু' কিংবা 'বকবকানি বেগম' না হয়ে কী করে 'নীরব' হলো, তা-ই আমার তত্ত্বের বিষয়।" মুখে দার্শনিক ভাব ফ ...
- অনন্ত আত্মা
জীবনে প্রথম হলে গিয়ে সিনেমা দেখাটা অবশ্যই উত্তেজনাকর একটা মুহূর্ত, যদিও উত্তেজনারকর মুহূর্তটা ঠিক-ঠাক মনে পড়ছে না। সম্ভবত হলে গিয়ে দেখা প্রথম সিনেমার নাম ‘কসাই’। আমি তখন তিন বা চার; মা, ফুপু, বাবা, ভাইয়ার সাথে হলে গিয়েছি। আমাকে অবশ্য নিতে চাচ্ছিল না; জোরা-জুরি করে, ২০০/২৫০ মি.লি. চোখের জল বিসর্জন দিয়ে হলে গিয়ে ঢোকা। অন্ধকারে আর কতক্ষণ জেগে থাকা যায়; ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে ...
জালাল স্যারের মেয়ে মানু আমার সাথেই পড়ত, মানে একই ক্লাসে কিন্তু ভিন্ন স্কুলে। মানুর আসল নাম কী ছিল আমি জানিনা, হয়তো মনোয়ারা বা অন্য কিছু। আমি যখন জালাল স্যারের কাছে অঙ্ক করতে যেতাম তখন মানুও এসে বসত। আসলে স্বেচ্ছায়তো আর আসত না, স্যারের ভয়ে আসত। মেয়েটা অঙ্কে বড় কাঁচা ছিল, তার চেয়েও অঙ্ক ভীতি ছিল বেশি। চলিত নিয়মের অঙ্ক করতে গিয়ে এমন কোনো দিন নেই যেদিন স্যারের ঝাড়ি খায়নি বেচারি। একদি ...
সার্কাসের তাঁবু অনেক দূরে। রোদে আর মেঘে মাখামাখি দিনটায় হাতিটা এতখানি পথ হেঁটে এসে একটু তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ে, শুঁড়টা আকাশে তুলে বাতাসের ঘ্রাণ নেয় সে। মাহুত জানে, হাতি জলের গন্ধ পায় বহু দূর থেকে। কুঁচকির নিচে হাতিটার পিঠের পেশীর নড়াচড়া টের পায় সে, সেই চাঞ্চল্যে উত্তরে গলা খাঁকারি দেয় তার ডাঙস।
শেষ বিকেলের সূর্য তখন দূর পাহাড়ের কোণে হেলে পড়েছে। দুরন্ত বালকের দল ঘরে ফেরার আগে গোধুলীর কমলা রঙে নেয়ে আরো খানিকটা বেলা শেষের খেলা খেলে নিচ্ছিলো। ইব্রাহিম সাসা তার কাঠের চকোডুটা* ঠেলে ঠেলে ঘরে ফেরার পথের শেষ চড়াইটা পার হচ্ছিল। পেশল কালো দেহ ঘামে নেয়ে গেছে। বুকটা ওঠানামা করছে হাপরের মতো। ভেতরটা যেন নাইরোগংগোর** জ্বালামুখ। আর একটু উঠলেই বামে বাঁক নিয়ে পথটা নীচে নেমে শেষ হয়ে যাব ...