১.
সকালবেলা স্কুলে যাবার আগে নাস্তার টেবিলে বসে বসে খানিকটা পত্রিকা পড়ে ঐশী। এই অভ্যাসটা বাবাই তৈরি করে দিয়েছে। বাবা বলে, প্রতিদিন পত্রিকা পড়ে ঘর থেকে বের হবি, নিজের মধ্যে একটা গরম ব্যাপার থাকবে। আশেপাশে কী ঘটছে তার কমবেশি তুই জানিস। কেউ এসে আচমকা একটা খবর জানিয়ে তোকে হাবা বানিয়ে দেবে, এরকমটা করার সুযোগ তুই তাকে দিবি কেন?
কিন্তু আজকের ব্যাপারটা একটু অন্যরকম। সকালে উঠেই ধ...
আদিম
সারাদিন পাথরের গায়ে অনর্থক আঁকাবুকি করি। খিদে পেলে পোষা নেকড়ে কুকুরটাকে নিয়ে বনমোরগ ধরতে চলে যাই আমরা ক’জন। ভাগ্য ভাল হলে এক আধটা হরিণও জুটে যেতে পারে। আমাদের মাঝের শক্ত সমর্থ মানুষটার কাঁধে সেটাকে তুলে দিয়ে ফেরার পথ ধরি। শিশু আর বৃদ্ধরা মিলে কাঠকুটো জড়ো করে রাখে। সেখানে আগুন ধরিয়ে শিকার ঝলসে খাওয়া হয়। তৃপ্তির ঢেকুর তুলে কেউ কেউ গাছের ছায়ায় ঘুমিয়ে পড়ি। সন্ধ্যা হলে বসবে ...
চিলেকোঠা ঘরে একইরকম একটা নীল রঙের মোমবাতি জ্বলছিলো, শুধু জ্ জ্ জ্ জ্ জ্ শব্দ করে উড়ে বেড়ানো সেই পোকাটা নেই, এখন ঘোর শীত৷ গত গ্রীষ্মের শেষে প্রথম যখন এসেছিলো মিশেল, তখন অমন একটা পোকা উড়ে বেড়াচ্ছিলো মোমবাতির শিখাটা ঘিরে৷ তা ছাড়া অন্যসব একই আছে এই ঘরে-টেবিল, টেবিলের উপরে নানা আকৃতির রঙীন পাথর, মুদ্রা, পুরানো পুঁথি, হাড়, আরো কত চেনা অচেনা জিনিস এলোমেলোভাবে ছড়ানো৷
মিশেল খুব...
[justify]সমুদ্র আমার কাছে একঘেঁয়ে মনে হয়। ঠেলে ঠেলে একই স্রোত বারবার পায়ের কাছে গড়ালে করুণা লাগে। কক্সবাজারের সূর্যাস্ত বা সূর্যোদয়, সমুদ্রের পানিতে পা ছোঁয়ানোর মত বিরক্তিকর কাজগুলো বছরে একবার করতেই হয়। দিয়ার জন্য। অথচ সমুদ্র আমার ভাল লাগে না। আকাশ ভালো লাগে না। খোলা আকাশের নিচে চারপাশ থেকে চেপে আসা শুদ্ধ বাতাসে আমার হাসফাঁস হয়। কথাগুলো দিয়াকে কখনো বলি না। আরো অনেক কিছুই বলি না। অ...
ঘাড় লম্বা করে মাথাটা ঝাঁকালো কয়েকবার। হাত দুয়েক পিছিয়ে গেল, হঠাৎ সামনে এগিয়ে এসে দুম করে গুঁতো লাগিয়ে দিলো বয়স্ক মানুষটার গায়ে। আহ! করে কাতরিয়ে উঠলেন ভদ্রলোক, বয়স হয়েছে অনেক; একটা রাগী ষাঁড় সামলানোর ধৈর্য বা শক্তি কোনটাই নেই এখন তাঁর। একটা দড়ি ধরা ছিলো হাতে, ছেড়ে দিয়ে এগিয়ে এসে লম্বা ছুরিটা হাতে তুলে নিলেন। ঘাড় ঘুরিয়ে পাশের লোকটার উপর রাগ ঝাড়লেন কিছুক্ষন, ছুরিতে ধার ঠিকমত দেয় নাই...
ঘাড়ের চামড়া ধরে ঝুলিয়ে রাখতে দেখলে মনে হয় অতি ব্যথা লাগছে বুঝি, কথাটা আধা সত্য আবার আধা মিথ্যা। যুত্সই করে না ধরলে ঘাড়, গলা আর পিঠের চামড়ায় টান পড়ে বেহাল হয়ে ইয়া নফসি ইয়া নফসি জপ করা ছাড়া গতি থাকেনা। কিন্তু বেড়ালমাত্রই জানে অমন আরামের চলাফেরা আর নাই।
বাবুনের আজ রেজাল্ট দেবে। এস এস সি।
সারারাত ঘুমুতে পারে নি। দুঃশ্চিন্তায় বিছানায় এপাশ ওপাশ করেছে শুধু।
মাঝেমধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছে আর ভয়ংকর সব স্বপ্ন দেখেছে। যেমনটা সবাই পরীক্ষার আগের রাতে দেখে।
পড়া ভুলে গেছে, ঘুম ভাঙে নি পরীক্ষার দিন সকালে- এইসব হাবিজাবি স্বপ্ন।
আজ তো পরীক্ষা না, রেজাল্ট। তবু কেন ওসব স্বপ্ন দেখল কে জানে?
হয়ত অভ্যেস হয়ে গেছে ওসব স্বপ্ন দেখে দেখে।
বন্দুকটা আবার নামিয়ে রাখে সে টেবিলের ড্রয়ারে আর ঠেলে বেঁধে দেয় ড্রয়ারটা।
না, এই ভাবে না। লুইজি এভাবে কষ্ট পেলে চলবে না। সে মরে যাবে আর সব শেষ হয়ে যাবে আর সে কষ্ট পাবে না। তার কষ্টের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ-স্থায়িত্ব। কল্পনার মাঝ দিয়ে স্থায়িত্ব। কিভাবে যন্ত্রণাটা দীর্ঘায়িত করা যায়? প্রথমত, কিভাবে যন্ত্রণাটা দেয়া যায়? ঠিক হ্যায়।
শোয়ার ঘরের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে-থাক...
বুড়ো ওয়েটার গ্লাস সাজিয়েই খুব বিনয়ের সুরে বললো, স্যার...। আর কিছু বলতে হলো না। তার আগেই টুকু একটা গ্লাস এগিয়ে দিলো তার দিকে। ওয়েটার সেটা সোজা চালান করে দিলো গলায়, পানি কিংবা সোডার তোয়াক্কা না করেই। এই অন্ধকার বার-টায় বসে বাইয়ের ওয়েদার বোঝা সম্ভব না। এখানে ঢোকার আগেও টুকুর খুব ভালোলাগছিলো বাইরের বাতাসটা। রিকশা নিয়ে কোথাও গেলে হয়তো ভালোলাগতো। কিন্তু, টুকু জানে, কিছুক্ষণের মধ্যেই স...
শূন্য
লতা যখন এ বাসায় আসে তখন ওর বয়স নয় কি দশ। আন্দাজ করা। নিজের বয়স জানত না ও। আট সদস্যের অভাবের সংসারে ক্ষুধার্ত মুখগুলোর বয়সের হিসেব কেউ রাখে না। মেয়ে হলে তো নয়ই।
ওরা ছিলো চার বোন, দুই ভাই। ভাইবোনদের মধ্যে লতা দ্বিতীয়, বোনদের মধ্যে বড়। বড় ভাই রাসেল ঠেলা চালাত। বাবা আব্দুর রব শেখ একজন মৌসুমী ভিখিরি। ঈষৎ ত্রুটিপূর্ণ পায়ের জোরে ভরা মৌসুমে ভিক্ষে করে খান, বাকিটা সময় ঘরে বসে ...