প্রথমে বামে, তারপর ডানে। সামনে দিকটায় উপর-নিচ করে করতে হবে। ম্যাটাডোর থ্রি এঙ্গেল টুথব্রাশ দিয়ে উপরের পাটির হার্ড-টু-রিচ এরিয়ায় যখন ঘষাঘষি করছি তখন সাত্তার মামা খবরটি দিলো। মুখে টুথপেস্টের ফেনা জমে উঠলে আমি কিছুক্ষণ মুখ বন্ধ করে চুপচাপ থাকি, বড় বড় করে নি:শ্বাস নিই। কিন্তু সাত্তার মামার কথা শুনে চুপ থাকতে পারলাম না। ফুচ্চক করে কলগেটের ফেনা বেসিনে ফেলে চমকে গিয়ে বলি - 'কী বলো মামা? ...
যখনকার ঘটনা বলছি তখন আমার বয়েস সাতাশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্সটা শেষ করে চাকরিতে ঢুকেছি। কলাবাগানের মোড়ে এখন যে বড় মার্কেটটা উঠেছে তার সামনেই অফিস। অফিস মানে একটা কাঠের চেয়ার আর একটা টেবিল। নতুন চাকুরি জীবন। একটা উত্তেজনা কাজ করত সবসময়। মাসের শুরুতে মাইনে নিয়ে নাকের সামনে ধরতে অন্যরকম একটা আনন্দ হতো। যদিও বাবার অনুপস্থিতি এবং পরিবারের একমাত্র ছেলে হওয়ার কারণে ম...
অণুগল্প এক
বিদায়ের সময় বুকে জড়িয়ে ধরলাম ওকে। ভেতরটা একেবারে খালি খালি মনে হলো। একটি ব্ছর ওকে ছাড়া কাটাবো কি করে? আমার কাঁধের উপর ওর চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়া একফোঁটা অশ্রু ওর ভেতরের ঝড়কেও স্পষ্ট করে দিল। তাতে আমার নিজের কষ্ট আরো কয়েকগুন বেড়ে গেলো। একসময় পরস্পর পরস্পরকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হলাম। আমার দিকে একবার ম্লানমুখে তাকিয়ে বিদায় নিল সে। ওর অপসৃয়মান দেহটির দিকে তাকিয়ে রইলাম অনেকক্ষণ...
কাঁটাতারের কাক
ক.
সাঁই করে ছুটে এলো রক্তলাল মারুতি গাড়িটা। কলাভবনের পেছনের গেটের সিঁড়িতে বসেছিলো সজীব। গাড়িটা তার সামনেই ঘ্যাচ করে ব্রেক কষলো। খানিক আগে ওখানেই এক রিক্সায়ালা কয়েকদলা থুতু ফেলেছিলো। সজীবের মনে হলো ওই কফমিশ্রিত থুতুর সজোরে থাপ্পড় খেয়েই গাড়িটার ডানলপ চাকা ওমন ঠাস করে থেমে যেতে বাধ্য হলো।
কীরে সাতসকালে ভোদাইয়ের মতো অমন কী ভাবছিস? গাড়ি থেকে নামতে নামতে মৌসুম...
শনিবার সকালে ফারজানা নাজনীনের তেমন কিছু করার ছিলো না। ভারী বাইন্ডিং ফাইল দেখে দরকারী আপডেট শেষে প্রতিদিনের মতো নতুন-পুরনো ক্লায়েন্টের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। দেয়াল ঘড়িতে তখন সকাল দশটা দশ। এমন সময় ম্যানেজার মাসুদ চাচা চলে আসার কথা। অফিসের জানালা খুলে, পর্দা সরিয়ে, বারান্দা থেকে হাঁক দিয়ে ফারজানার জন্য চায়ের অর্ডারও দেয়ার কথা। ফারজানা তাই অপেক্ষা করে। দরজার ওপাশে দেয়ালে বড় করে ...
রাজ্যের নাম সুখময়ীতাল। দেয়ালে বাঁধানো ছবির দিকে চট করে একবার তাকিয়ে বুঝে নেয়া যায়- বাঁধানো ছবির মানুষটি ক্যামেরাতে সত্যিকারের সুখী মুখ নিয়ে তাকিয়েছে কিনা। সুখময়ীতাল রাজ্যের পানে একবার চেয়ে দেখলেই বুঝা যায়- রাজ্যের নামটি কত সত্যি! চারদিকে শুধু সুখ আর সুখ! সেই সুখকে ঘিরে সুর আর তালেরা খেলা করে।
সকাল বেলা ছোট্ট ছোট্ট ছেলেমেয়েরা দলবেঁধে পাঠশালায় যাবার বেলায় যে ছন্দের শুরু - বি...
[গল্পখানি বেশক পুরাতন। আন্ডাবাচ্চা লইয়া প্রবল বিপাকে আছি। জরুরি অবস্থা কাটিলে আবারও নতুন গল্প প্রসব করিবো। মঙ্গলকামনান্তে,
ভবদীয়
মুখফোড়।]
১.
আদমের হঠাৎ নিদ্রা ভাঙিয়া গেল গরমে৷ গায়ে জবজব ঘাম৷ পাশের খাটে শায়িতা ঈভ৷ বেলাল্লা স্ত্রীলোক, গায়ে বেশবাসের ঠিকঠাক নাই, নিঃশ্বাসের তালে তালে তাহার স্ফূরিত বক্ষ উঠিতেছে নামিতেছে৷ আদম মুগ্ধ দৃষ্টিতে চাহিয়া গুনগুনাইয়া, তোমার বুকের ফুল...
৬. মিস লংকা
দুই ছেলেকে নিয়ে আমাদের মায়ের পরিকল্পণাগুলো অনেক দূরপ্রসারী ছিল। ছোট ভাইটি আমার চেয়ে প্রায় সাড়ে চার বছরের ছোট। তখনও তার কেঁদে-কেটে স্কুলে যাওয়ার বয়স। আমি পড়ি চতুর্থ কি পঞ্চম শ্রেণিতে। ভাইকে নিয়ে তখনও তেমন নির্দিষ্ট পরিকল্পণা না থাকলেও আমার বেলায় ছিল। মায়ের ইচ্ছা ছিল আমাকে নানা-দাদার মত ডাক্তার বানাবে। শুধু ভাবলেই হল না। ডাক্তারি শেখা অনেক কঠিন ব্যাপার। আগে থেকেই ...
নাসের মাথা গুঁজে একমনে সেলাই করছিলো।
করছিলো মানে বলা ভালো, করার চেষ্টা করছিলো। যা দিনকাল পড়েছে , এই অটোম্যাটিক সেলাই মেশিন গুলোর সে কিছুই বোঝেনা! তার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে বলে পা দিয়ে ঠেকা দাও, কাপড়টা দাবিয়ে রাখো আর সরসর সরসর করে মেশিনের হাতল ঘুরিয়ে যাও, কাপড় তো সবচেয়ে ভালো ফোটে কাট আর ডিজাইনে, এই হড়বড়ানি মেশিনটা আপা, খালাম্মা আর নানিজানদের কিইবা কাজে আসে, তারপরেও এখন নতুন ফ্যাশন সব দ...
ছোট্ট এক টুকরো বারান্দা। তাও উত্তরদিকে।
আলো আসে না, বাতাস আসে না। মাঝেমধ্যে ভ্যাপসা গন্ধ পাওয়া যায় ওপরতলা থেকে ফেলা বাসি খাবারের, ময়লার। আর সামনের বিল্ডিংটা দানবের মতো ঘিরে রাখে অন্ধকার দিয়ে।
তারপরও একটা বারান্দা। আর সেখানে বসে দু-বিল্ডিংয়ের ফাঁক দিয়ে এক চিলতে আকাশও দেখা যায়।
ঐটুকুই পাওয়া।
মাঝে মাঝে গভীর রাতে চাপা একটা অজানা মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসে। ভারী রহস্যময় সেই গন্ধ। হয়...