টনকপুর থাকতে চেয়েছিলাম আরও একটা দিন। রহস্যটা ভালো করে বোঝার জন্য। কিন্তু সন্ধ্যায় পাণ্ডের মোবাইলে ফোন এলো। বুধা সিংয়ের। দোকান থেকে ফোন করেছে। আশ্চর্য ব্যাপার ঘটেছে নৈনিতালেও। ওঁর চাচা কুঁয়ার সিংকে নাকি দেখা গেছে নৈনিতালে।
কথাটা বিশ্বাস হলো না আমার। বললাম, ভুল দেখেছেন। কিন্তু বুধা সিং ভগবানের দিব্যি কেটে বলল। সে সত্যিই কুঁয়ার সিংকে দেখেছে। শুধু সে-ই নয়। নৈনিতালের যেসব বুড়োরা ছোট বেলায় কানওয়ার সিংকে দেখেছে সবাই নাকি চিনতে পেরেছে তাকে।
যেহেতু আজ বৃষ্টি হয়নি আর অফিস থেকে বেরুতেও দেরি হয়েছে তাই অনেকটা হালকা চালেই ওঠা সম্ভব হয়েছে বন্ধু পরিবহণে। শাহজাদপুর বাস স্ট্যান্ডের টং দোকান থেকে প্রাণ ডাল ভাজার প্যাকেট কিনে নিয়ে অনেকটা আয়েশি ভঙ্গিতেই বাসে উঠা গেলো। যদিও বাসের ভিতরে দাঁড়িয়ে থাকার ভবিতব্যকে বদলে দেয়ার মতো বড় কোনো অঘটন শহরটাতে ঘটেনি বলে দাঁড়িয়েই থাকতে হলো। তবু যেহেতু বৃষ্টি হয়নি আর ভদ্রস্ত অফিসগুলো আগেই ছুটি হয়ে গেছে তাই এখন পর্যন্ত কেউ পা মাড়িয়ে দেয়নি। এমনকি ভীড়টা এতোটাই সহনীয় যে, আমি ডালভাজার প্যাকেটটা খুলে খাওয়া শুরু করার আশায় একটু পরপর নেড়েচেড়ে দেখছি। মাঝে মাঝে তাকিয়ে দেখছি চারপাশ। সবকিছুকেই ধীর মাধুর্যমণ্ডিত মনে হচ্ছে। এই মনে হওয়া অবশ্য বন্ধু পরিবহণের থেমে থাকার কারণেও হতে পারে। শাহজাদপুর থেকে উঠার পর এটি বেশিদূর আগায়নি। বাসের ড্রাইভার জানালা দিয়ে মুখ বের করে উদাস মনে বসে আছে।
‘কালাধুঙ্গির আতঙ্ক!’ এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম খবরটা--
‘ভারতের উত্তরাখণ্ডেডর কালাধুঙ্গিতে মানুষখেকো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকাবসীরা জানিয়েছে হঠাৎ করেই নাকি একটা কেঁদো বাঘ পাহাড়ী উপতক্যা ধরে নেমে অজ্ঞাতনামা এক যুবককে তুলে নিয়ে পালিয়ে যায়। এ বিষয়ে নৈনিতাল ফরেস্ট রেঞ্জার অমরেশ দেশাই জানিয়েছেন, গত বিশ বছরে এ ঘটনা এই প্রথম। তবে হতভাগা লোকটার কোনো পরিচয় মেলেনি।’
আমার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য কালাধুঙ্গি নামটাই যথেষ্ট ছিল। মানুষখেকো বাড়তি পাওনা। ‘কালাধুঙ্গি’, ‘মানুষখেকো’ শব্দগুলো মনে আবেগের ঝড় বইয়ে দিল।
বিকেল ৫টা বাজতে না বাজতেই আজ আড্ডা ছেড়ে উঠে পরলো রাফি। অনেকদিন ধরেই যাব যাব করে যাওয়াই হচ্ছে না। মা’র জন্য একটা শাড়ি কিনতে হবে। পহেলা বৈশাখের আগে আর মাত্র একটা দিনই আছে হাতে! মা নিজেই যদিও শপিং করবে তবুও সবসময়ই রাফি নিজে থেকেও কিছু একটা কিনে দেয়। আড়ংএ গেলেই মনে হয় তাড়াতাড়ি হবে - দামাদামির ঝামেলা নেই।
এপ্রিল, ১৮১০। কলকাতা।
সকাল।
ইংরেজ সওদাগর এবং কোম্পানির অবসরপ্রাপ্ত মেজর মার্কাস স্মলের নতুন বাসভবনের ডাইনিং রুমে ব্রেকফাস্ট পরিবেশন করে গেল চাকর সুবহান আলি। বড় ডাইনিং রুম, উপরে উঁচু গম্বুজ। ভবনটি আগে এক স্থানীয় হিন্দু মহাজনের ছিল, সে পানির দরে কিনে নিয়েছিল মূল মুসলমান মালিকের কাছ থেকে বছর বিশেক আগে। বেশ খোলামেলা মাজারের মত স্থাপনা। বাইরে ফোয়ারা। মৃদুমন্দ বাতাস।
মার্কাসের অতিথি সদ্য লন্ডন থেকে আগত কবি ডাল্টন হামফ্রি বেকন আন্ডায় কামড় দিয়ে রুমাল দিয়ে মুখ মুছে বললেন, যাই বল মার্কাস, নেপোলিয়নের ধান্দা ব্যানফিল ঠিকই ধরতে পেরেছিল।
ছুরি দিয়ে এক টুকরো সসেজ কেটে মুখে দিয়ে নির্বিকার কন্ঠে মার্কাস বললেন, ব্যানফিল একটা উজবুক।
অন্তর্ধান (দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব)
(৩)
‘১২ নম্বরকে আর বেশিদিন রাখা যাবে না। বুঝতে পারছো?’ রমজান ঘরে ঢুকতেই শুরু করেন যুবায়ের মাহমুদ। ঘরটা একটু আলো-আঁধারিতে। তূলনামূলক অন্ধকারে বসে কথা বলছেন যুবায়ের। বরাবরই তাই করেন। রমজান তখনো ধাতস্ত হয়নি পুরোপুরি। বড় সাহেবের ডাক শুনে একরকম ছুটতে ছুটতেই এসেছে সে। এরকম জরুরী তলব সাধারণত তিনি করেন না। কী কারণ তাই ভাবছিলো রমজান। আসার পথে সোবহানের সাথে এ নিয়ে কথা বলারও চেষ্টা করেছে। যদিও রমজান ভালো করেই জানে যে এই চেষ্টা অহেতুক। কারণ রমজানই হচ্ছে বড় সাহেবের ফাস্ট হ্যান্ড। সোবহান তার পরে। এর পাশাপাশি আর কেউ আছে কিনা তা অবশ্য রমজান জানে না। রমজান অনেক কিছুই জানে না, এই যেমন বড় সাহেব। রমজান শুধু জানে অনেক বড় সরকারি কর্মকর্তা। ব্যাস এইটুকুই।
(আঞ্চলিক ভাষা সংযুক্ত করে অশেষ কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ করেছেন টিউলিপ এবং নীল কমলিনী)
----------------
জয়তুন বেওয়া দুই হাতের ওপর ভর করে হেঁচড়ে হেঁচড়ে আবার মাটির ডিবির সামনে দাঁড়ায়। মাটির গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে বলেন তুমার দুক্কু লাগতাসে গো চাষার ব্যাডা? হেয় নাকি মাফ চাইব। রাজার সোয়ামী রে বলে হে মারছিলো? রাজায় মাফ কইরবার কেডা?
জয়তুন বাড়ির পথ ধরে। আলী হোসেন ডেকে বলে ও হেসরি বেডি, বিচার শুইন্না খুশী হইছুনি?? হেঁচড়ে হেঁচড়ে চলে তাই গ্রামের লোকেরা বলে হেসড়ি বেটি।
আমি যদি ভুল করেও কখনো বলি, আজ আমার ভাল লাগছে না, তবে সবাই আমার ভাল না লাগার একটাই কারণ ধরে নিয়ে আমাকে স্বান্ত্বনা দিতে থাকে। খুব শুভাকাঙ্খীর মতো আমাকে বোঝাতে থাকে, এসব কষ্টের গল্প সব মায়েরই কম বেশি থাকে আর সময়ের সাথে সাথে পুরনো ক্ষত সেরে যায়। আমাকে নিরুত্তর দেখে তারা নিজের দায়িত্বে গাফিলতি হচ্ছে ভেবে শেষ পর্যন্ত শেষ বুদ্ধি বাৎলে দেয়, সুরভি তুমি ব্যস্ত থাকো। কেন যেনো সব কিছুর পরও এই একটা উপদেশ আমার
কাঁটা চামচ দিয়ে একজনের চোখ গেলে দেয়ার ক্রিটিক্যাল মুহূর্তে আমার বেশ কিছুদিন আগের একটি অনুভূতির কথা মনে পড়ে যাবে এবং প্রতিবেশির বদলে নিজেকেই মেরে ফেলতে ইচ্ছে হবে, মনে হবে আমিই তো চেয়েছিলাম, এরা উৎসব নিয়ে আসুক, দু একটা ভালো-মন্দ কথা বলুক; এখন এই নিস্ফল আক্রোশের কোন মানে নেই, তবে এই চিন্তাটি আসতে কিছুক্ষণ দেরি হয়ে যাবে এবং হাতের রিফ্লেক্সকে ফিরিয়ে আনা যাবে না, শেষ সময়ে ভিকটিম মাথা নাড়িয়ে ফেললে কাঁট