১
রাহিল,এখনও ফোনে কথা বলছিস? কখন বলে গেলাম গোসল করে আয়,ভাত খাবো একসাথে!
দাঁড়াও আপু, এক মিনিট।ফোনের স্পিকারে হাত রেখে বলল রাহিল।
সেই একঘন্টা ধরেই ত এক মিনিট একমিনিট শুনে আসছি। তা তোদের এক মিনিট হতে কয়ঘন্টা লাগে?জার্নি করে এসেছে,গোসল করবে ,খাবে ,আমার সাথে গল্প করবে, আম্মু কী দিলো দেখাবে......
১
হাটখোলা বাজার থেকে উত্তর দিকের মাটির সড়ক ধরে আধা ক্রোশ দূরে মন্ডল বাড়ি। সড়ক এখানে অনেকটা ইংরেজী বর্ণ 'এস' এর মতন এঁকে বেঁকে ছিলিমপুরের দিকে চলে গেছে। সড়কের বাঁকে বাঁশ ঝাড়। তার পাশেই বিশাল এক কড়ই গাছ। কড়ই গাছের পাতায় বাতাসের বাড়ি লেগে যখন ছর ছর শব্দ উঠে তখন মনে হয় এক জায়গায় দাঁড়িয়ে উদ্দাম নৃত্য করছে অজানা কোন দানব। দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে জোড়ে বাতাস বইছে। মেঘে ঢাকা অন্ধকার আকাশে এক ফোঁটা চাঁদও নেই। কড়ই গাছের মাথা থেকে কিছু একটা ঝুলে ছিল। দূরে মন্ডল বাড়ির লাইটের আলোয় আবছা দেখা গেল এক জোড়া অস্বাভাবিক লম্বা পা ফেলে বসে আছে কেউ।
তাগড়া মধ্যবয়েসি নেতাগোছের লোকটি আমার দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় জিজ্ঞাসা করল, তর নাম কবুতর ফারুক?
কানে বিরাশী সিক্কার থাপ্পড় দিয়ে ঘুম থেকে উঠিয়েছে এইমাত্র, কান এখনো ভোঁ ভোঁ করছে। আমি কষ্টে মাথা হেলিয়ে বললাম, জ্বী।
চিন্তিত মুখে পাশে দাঁড়ানো দুইজনের দিকে তাকিয়ে সে বলল, বন্দুকচির নাম কবুতর হয় জিন্দেগীতে শুনছস?
খালিদ টেবিলের ওপরে হাসিমুখ ধরে রেখে টেবিলের নিচে আমার পায়ে একটা লাথি মারলো। বিশ্বকাপের সিজনের কারণেই হয়তো লাথিটাতে প্রয়োজনের চেয়ে বাড়তি বিষ ছিলো।
ভদ্রলোক ভুরু ওপরে তুলে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, "কী হইলো?"
আমি শার্টের হাতায় চোখের কোণ মুছলাম, খালিদ স্কুলে শেখা প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব শব্দটাকে আবার মনে করিয়ে দিয়ে বললো, "উফফ, মশা!"
আগের অংশ - http://www.sachalayatan.com/rongtuli/52525
একগাল মুড়ি মুখে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সেলিম গম্ভীর গলায় বলল, বন্দুকচি কি তবলচির মতন?
আমি একটু চিন্তা করে বললাম, হ কাছাকাছিই। দুইজনেই আওয়াজ বাইর করে। তবলচি তবলা বাজায় আওয়াজ করে আর বন্দুকচি মনে কর যুদ্ধেমুদ্ধে বন্দুক ফুটায় আওয়াজ করে।
বন্দুক ফুটায়? সেলিম আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করল, তইলে এক হইল কেমনে? আমাগো তবলচি আলী নকী তো কাউরে মারত না।
আমি হেসে বললাম, বন্দুকচিও কাউরে মারে না রে ব্যাটা। আওয়াজই বাইরায় খালি। হাতিঘোড়া ভয় খায় এই আর কি।
“কিন্তু স্যার... পানি লাগবে কেন?”
আহসানের ছুঁচো প্রশ্নে মিঃ জামশেদের ভ্রু কুঁচকে আসে। পঞ্চাশোর্ধ বলিরেখায় চাপ পড়ে। চোখে-মুখে তাচ্ছিল্যের ভাব ফুটে ওঠে। এবং এসব কিছুর পরোয়া না করেই সে তাকায় আহসানের দিকে।
১
গত তিন মাস ধরে লিনা নামের এক মেয়ের সাথে চুটিয়ে প্রেম করছি। অসম্ভব রকমের মিষ্টি গলা লিনার। সে গান গায়। যখন আমাকে রবীন্দ্র সংগীত গেয়ে শোনায় আমার বুকের ভেতর চিন চিন করে ব্যাথা করে। যার গলার স্বর এত শ্রুতি মধুর সে না জানি দেখতে কত সুন্দর! লিনাকে আমি কখনও সামনা সামনি দেখিনি।
আধুনিক যুগে মানুষের সাথে পরিচয়ের অনেক মাধ্যম হয়েছে। মোবাইলের কথা না হয় বাদই দিলাম, ইন্টারনেট এখন অনেক সহজলভ্য। ফেস বুক, স্কাইপ, ভাইবার আরও কত কি করে মানুষের সাথে মানুষের কথা হচ্ছে, পরিচয় হচ্ছে, এমনকি বিয়ে সাদীও হয়ে যাচ্ছে। লিনার সাথে আমার কিন্তু এসবের কোন কিছুতেই পরিচয় হয়নি। তাঁর সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল খুবি সনাতন পদ্ধতিতে। লিনাকে আমি পেয়েছিলাম স্বপ্নে।
হালের কালের পড়ুয়াকে প্রথমেই বলে নিই, এ গল্প সেই মান্ধাতার আমলের, আমাদের কালের। এ গল্প সামনা-সামনি দেখবেন তেমন কপাল করে সম্ভবতঃ আসেননি আপনারা। আর প্রবীণ পড়ুয়া, আপনাকে চুপিচুপি বলে রাখি এ গল্প একেবারেই আমার মগজের ভিতর হ’তে উৎসারিত। কোথ্বাও কারো সাথে যে কোন মিল নেই, সে আপনার থেকে বেশী আর কেউ জানে না। তবে, কপালের কথা কে বলতে পারে! সব্বাই হয়ত বলবেন আপনাদের চেনা গল্পটাই আবার চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। যাকগে, শুরু করে দিই।