অম্বর নদীর তীরে সুলতান মহব্বত জং এর তাঁবু। মধ্য দুপুর।
তাঁবুর বাইরে দাঁড়িয়ে পত্রবাহক ফরহাদজান ফতেপুরী জামার খুঁটে কপালের ঘাম মুছে নিল একটু। খবর ভালো নয়। একেবারেই ভালো নয়। খবর শুনে সুলতান রেগেমেগে তার কল্লা নামিয়ে দেবার সমূহ সম্ভাবনা।
গ্রীষ্মকাল, ১৭০৫ সাল। ফিরোজগড় দূর্গ।
গুদামঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে বাবুর্চি নাজিমুদ্দিন জামার খুঁট দিয়ে কপাল মুছল একটু। ঘটনা কি সে ধরতে পারছে না ঠিক, সকাল সকাল খানসালার তাকে ডাকবেন কেন? সে তো প্রতিদিনকার মতই ভোরে পাকশালায় বাসন মাজতে লেগে গিয়েছিল, এমন সময় খবর এল খানাসালার মুস্তাকিম উস্তাদ তাকে ডেকেছেন। কিন্তু ডাকার কারণ? সে মনে করতে চেষ্টা করল গতকাল সে কী রেঁধেছিল, কারো পেট খারাপ করল নাকি?
১
ঘটনাটা ঘটেছে এক ঝড়ের রাতে । বাইরে বাতাসের গো গো শব্দ, গগন বিদীর্ণ করে দেয়া আলোর ঝলকানি আর মেঘেদের গর্জনে ধরনী কেঁপে কেঁপে উঠছিল । বাইরে চলছে তুমুল বর্ষণ । বাড়ির পাশেই আমগাছের ডাল মড় মড় করে ভেঙ্গে গেল । এমন সময় দ্রিম করে বিকট শব্দ তুলে বিদ্যুতের লাইন ছিড়ে গেল । মুহূর্তের মধ্যেই ঘুটঘুটেু আঁধারে তলিয়ে গেল সব কিছু । প্রয়োজনের সময় কিছুই হাতের কাছে পাওয়া যায় না । নিয়ম মাফিক কোন মোমবাতি পাওয়া গেল না । রান্না ঘরে গিয়ে দেখা গেল ম্যাচ বাক্সে একটা কাঠিও নেই ।
এবার কোরবানীর ঈদ পড়েছে বৈশাখ মাসে । আগামিকাল ঈদ । সবাই দেশের বাড়িতে চলে গেছে ঈদ উৎযাপন করতে । পুরো বিল্ডিং টাতে আমি একা।
সুবর্ণ এক্সপ্রেস প্ল্যাটফর্মে ঢুকতেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বগির ঝাপসা জানালা দিয়ে উদ্দেশ্যহীন দৃষ্টিটা বাড়িয়ে দিলাম বাইরে। ঢাকা এখন আমার কাছে অচেনা একটা শহর। আমার স্মৃতির ঢাকা শহরের সাথে এই গিজগিজ উঁচু দালানের ধোঁয়াটে শহরের কোন মিলই নেই। কিন্তু এই প্ল্যাটফর্ম আমার খুব চেনা। আমাকে দেখেই যেন ওরা ডাক দিল। ডাকলে ডাকুক, আজ আমি কোন ডাক শুনতে আসিনি। টুকরো টুকরো মোজাইকের নকশা মাড়িয়ে আমি এগিয়ে গেলাম টিকেট চেকারের দিকে।
খালি হাতে আত্মরক্ষা
- মো. আনোয়ার পারভেজ
একদা একজন রাজা বন্দী ছিলেন সুউচ্চ মিনার ওয়ালা এক বন্দীনিবাসে। সেই বন্দীনিবাসে নেই কোন দরজা নেই কোন প্রবেশপথ! শুধু একটি জানালা। বন্দীনিবাসে নেই কোন প্রহরী, নেই কোন লাঠিয়াল কি বরকন্দাজ!
১.
পীরজাদা হাত একটু উঁচু করে বললেন -"বাবা কবুল করেছেন!" আবেশে অথবা অভিনয়ে তার দুই চোখ আধবোঁজা। একই বাক্য বারবার উচ্চারণে ঠোঁটের দুই কোণে সাদা ফেনা জমে উঠছে একটু পরপরই এবং তিনি জিভ দিয়ে তা পরিষ্কার করে পেটে চালান করে দিচ্ছেন। আমার ডান পাশের বছর চল্লিশের এক লোক এসেছেন বাচ্চা হওয়ার তদবির নিয়ে আর বাম পাশের জনের ব্যাবসা ভাল যাচ্ছে না। তবে আমার কোন সমস্যা নেই, আর আমি কোন তদবিরও করি নি। তারপরও পীরজাদা তার পীর বাবার কাছ থেকে আমার জন্য কী কবুল করিয়ে আনলেন ঠিক বুঝতে পারছিলাম না!
সরাইওলা আমার চোখে চোখ রেখে গম্ভীর স্বরে বলল, কবুতর খুব ভালো পক্ষী। আমি প্রত্যেক বিষ্পতিবার কবুতর পাক কইরা খাই।
তন্দুর রুটি চাবাতে চাবাতে আমি আতকা বিষম খেলাম একটু। শালা বলে কি?!
[justify]
বাবাকে বড় ভয় পায় মুকুল। তবে অবশ্য ভয় পাওয়ার কারণও আছে। মুকুলের বাবা মতিউল্লাহ সাহেব ঝিগাতলা হাই স্কুলের জাঁদরেল অঙ্কের শিক্ষক। চেনা পরিচিত প্রায় সবাই তাঁকে ভয় পায়। টকটকে গায়ের রঙ, চোখে মোটা কাচের গোল চশমা, মাথায় কাঁচাপাকা চুল। একটু নাকি সুরে চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলেন তিনি। রাশভারি গম্ভীর লোক, দেখলে মনে হয় এখনই গর্জে উঠবেন।