বনানিয়র্ক ইউনিভার্সিটির হিসাব বিজ্ঞানের শিক্ষক মাজিদ মাহমুদের ক্লাস ছিল না আজ। ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হওয়ায় ছয়তলা ভবন সর্বস্ব ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষকের আনাগোণা ছিল কম। কিছু নিরাপত্তাকর্মী এখানে ওখানে আধো ঘুমে আধো জাগরণে মোবাইল ফোনে গান শুনছিল। সে গানের হাল্কা সুর মাজিদ মাহমুদের কানেও আসছিল। চার তলার অফিস রুমে তিনি পরীক্ষার খাতায় ডেবিট ক্রেডিট দেখায় মনোযোগী ছিলেন, তবুও হিন্দি গানটির সুর তার কানের সুড়ঙ্
সুলতা কেঁপে কেঁপে ওঠে।
না, না, ওর এখন আর ভয় লাগে না। কিন্তু সবাই ভাবতে থাকে, আহা, মেয়েটার ওপর দিয়ে কত ঝড়ই না গেছে।
এখনকারটাও ঝড় বলা যেতে পারে। পাঁচ তারা হোটেলের ভেন্টিলেশন দিয়ে আসা ঠাণ্ডা কনকনে ঝড়।
শীতে কত কষ্টই না হয় সুলতাদের। আর এখানে! সুলতা আশেপাশে তাকায়। নিজের মানুষদের খোঁজে সে। পায় না কাউকে।
বৈশাখী মেঘের সংঘর্ষজনিত বিকট কয়েকটি বিষ্ফোরণের ত্রিতাল তরঙ্গে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল এবং বুঝতে পারলাম কী ভয়াবহ ভুল করে বসেছি। এই ঘরে ঘুমিয়ে পড়া আর মৃত্যুদুতের কোলে শুয়ে থাকা প্রায় একই জিনিস। এ পর্যন্ত তিন জন প্রাণ হারিয়েছে পাহারার সময় ঘুমোতে গিয়ে। আজ কি আমার পালা?
আমি নিজেই কাজটা নিয়েছি। আমার প্রাণটা কৈ মাছের প্রাণের চেয়ে একটু শক্ত এবং টাকার অংকটা বেশ মোটা বলেই দুঃসাহসী সিদ্ধান্ত নেয়া।
ডোরবেলটা আরও একবার খুব বিচ্ছিরিভাবে বেজে উঠল। বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু দরজার ওপাশের একগুঁয়ে মানুষটাকে সহ্য করা মুশকিল হচ্ছে, একনাগাড়ে বেল বাজিয়েই যাচ্ছে মানুষটা। অগত্যা উঠে পড়তেই হল। পেপারের বিল নিতে এসেছিল, টাকাটা দিয়ে ধড়াম করে লাগিয়ে দিলাম দরজা।
ও এসেছিল আমাদের বাড়িতে হাফপ্যান্ট পরে। ওর গায়ে ফ্রকের বদলে ছিল স্যান্ডো গেঞ্জি। বাবার গেঞ্জিটাই গায়ে চাপিয়েছিল কিনা কে জানে, নইলে পাঞ্জাবির মত ঝুল ছিল কেন গেঞ্জিটার?
তারা বলতেন, প্রতিযোগিতাই হচ্ছে ব্যবসার প্রাণ।
খুব অল্প বয়সে আমি বিষয়টি বুঝে গিয়েছিলাম আমার দাদাকে দেখে। আমার গরীব দাদা এ প্রতিযোগিতার কারণেই ব্যবসা করতে গিয়ে উপূর্যপরি দু’বার ব্যর্থ হয়েছিলেন।
সে বহুকাল আগের কথা। আফ্রিকার ঘন জঙ্গলের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে খাল। খালের পাশেই জঙ্গলের ভেতরে ছিল এক বড় গাছ। সেই গাছে বাস করত এক ছোট্ট পাখি। একদিন সকালে যখন সে বসে বসে ডিমে তাঁ দিচ্ছিল, গাছের পাশ দিয়ে একটা হাতি যাবার সময় তার গায়ের সাথে ধাক্কা লেগে নড়েচড়ে উঠলো গাছ। রাগের চোটে তেড়েফুড়ে ছুটে আসলো ছোট্ট পাখি - "বেকুব হাতি, গাছ নাড়াচ্ছো কেন? এভাবে তুমি গাছ নাড়ালে আমার ডিম গুলো ভেঙে যাবে না?