১।
ঝোড়ো বাতাস হচ্ছে সেই সকাল থেকে। দেখে মনে হচ্ছে সবকিছু উড়িয়ে নেবে বলে পণ করেছে দক্ষিণের এই নাছোড়বান্দা বাতাস।
ডাকপিয়ন কোনমতে আমাদের বাড়ির দরজায় এসে দাঁড়ালেন। তাঁর হাতে থাকা কাগজপত্র গুলো উড়ে যেতে চাইছে বাতাসের দমকে।
আমার মা কোনক্রমে দরজা খুলে বাইরে এসে দাঁড়ালেন।
“আপনার একটা চিঠি আছে” ডাকপিয়ন হেসে বললেন।
আহসান সাহেব হুঁকার নলে চুম্বন করিয়া গম্ভীর কণ্ঠে কহিলেন, "আমার পুত্রটি সম্প্রতি ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিয়াছে। এই বয়সে ছেলেপিলে একটু আধটু দুষ্টামি করিয়াই থাকে। মেট্রিক পরীক্ষার পূর্বে তুমি অভিযোগ আনিলে শাস্তি বাবদ উহাকে বেতপিটা করিতে পারিতাম। কিন্তু এখন ত সে নওজোয়ান। তাহাকে বড় শাসন করিতে গেলে সে যদি অভিমানে ঘরছাড়া হয়?"
নবনির্মিত ফতে জং কিল্লার সামনের বাগান। মধ্য দুপুর।
শান্ত পানির নহরের সামনে দাঁড়িয়ে কিল্লার মূল কারিগর ওস্তাদ আলি খাঁ ধীরে ধীরে ডান হাত তুলে সঙ্কেত দিলেন। আশপাশের সকলের চোখ কপালে তুলে দিয়ে সেই শান্ত নহর থেকে ছ্যাঁৎ ছ্যাঁৎ ভুসস শব্দ করে ঠান্ডা পানির ফোয়ারা ছিটিয়ে উঠল। খুব কাছে যারা দাঁড়িয়ে ছিল তাদের কামিজে পানির ছিটা লেগে গেল অল্প, তাই দেখে দাঁত বের করে তাদের সে কী হাসি! পুরো এলাকা যেন হঠাৎ বেহেশতের মত ঠাণ্ডা হয়ে উঠল। ছোট একটি ছেলে পানির খুব কাছে গিয়ে আনন্দে লাফ দিল দুইবার।
কিল্লার মালিক সুলতান বুরহানউদ্দিন তৃপ্ত চোখে পানির খেলা দেখতে দেখতে গাঢ় কণ্ঠে বললেন, মাশ্-আল্-লাহ্! মাশ্-আল্-লাহ্!
- মামা, আপনার একটা চিঠি আছে।
(১)
- “হ্যালো, সি-আই-ডি চেন্নাই? চেন্নাই ইন্টারন্যাশ্নাল এয়ারপোর্ট থেকে বলছি। ইমিডিয়েট এখানে লোক পাঠান। একটা খুন হয়েছে।”
- “এয়ারপোর্টে খুন হয়েছে?”
মুজিবর সাহেবের মেজাজ ভয়ঙ্কর রকমের খারাপ। তিনি অফিসের চেয়ারে ঝিম ধরে বসে আছেন আর খেয়াল করছেন ডেস্কে কাজের চাপ বেছে বেছে আজকেই বেশি, একারণে তাঁর মেজাজ আরো খারাপ হচ্ছে। অকারণে ধমকাচ্ছেন সবাইকে। পিওন চা রেখে গেছে অনেকক্ষণ, মুজিবর সাহেব খেয়াল করলেন না। পিওনকে ডেকে দিলেন কড়া ধমক। ব্যাংকের বিজনেস ফ্লোরে উচ্চস্বরে কথা বলা নিষিদ্ধ, সবাই কেমন ফিস ফিস করে কথা বলে। প্রাইভেট ব্যাংক গুলোর এই এক প্র্যাকটিস দাঁড়ি
গল্পঃ
গেরস্ত হাজী সাহেব হাটে গিয়েছেন পাট বিক্রি করতে। বড় বড় আঁটি করে ওজন মেপে রাখা পাট। গ্রামের-ই আরেক ক্রেতা এসেছেন পাট কিনতে। হাজীর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন -"হাজী সাব, পাটের দাম কত?"
হাজী সাহেব হাসি মুখে বলেন -"৭০০ ট্যাকা মণ বাবাজী। ওজন করাই আছে।"
ক্রেতা আবার জিজ্ঞেস করেন -"ওজনে ঠিক আছে তো?"
হাজী সাহেব সরল মুখে বলেন -"রসুল জানে বাবাজী।"
"সামিয়া"
আম্মুর ডাকশুনে বিছানায় নড়েচড়ে ওঠে সামিয়া। বিছানার পাশে রাখা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ঠিক বারোটা বাজে। খাটের পাশে রাখা টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে, পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে একটা চুমুক দিতেই আবার আম্মুর ডাক শুনতে পায়-
"সামিয়া"
নোনাসমুদ্রে এতকাল কাটাবার পর মিঠাপানির প্রথম স্পর্শটা সুখের ছিল তা বলতে পারি না। তবে বলতে পারি স্পর্শটা বড় বিচিত্র ছিল। মুখে নিয়ে কুলি করে ফেলে দেবার পর শান্তি।
আবহাওয়া ঠিক আছে। জলের কোলাহলও তেমনি। ঘনত্বে একটু পার্থক্য, আর রঙে। এখানকার রঙটা যেন ফ্যাকাসে। তবু কেউ কেউ বলছিল যে যাই বলুক, যত সুখ শান্তি সব মিষ্টি জলের নদীতে। অগাধ ঝড়ঝঞ্ছাবিক্ষুব্ধ সমুদ্রে অনিশ্চিত জীবনযাপন করার চেয়ে এখানে অনেকটা নিশ্চিন্ত জীবন। চাইলে যখন তখন কূলের কাছাকাছি যাওয়া যায়, গাছ লতাপাতা ফুল পাখিদের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। সমুদ্রে কি তা সম্ভব? তবু এতকালের অভ্যেস সমুদ্র। এই নেশা কাটানো মুশকিল। আমি ওদের পিছু পিছু নদীতে আসার পর সেই কথাই ভাবছিলাম।
রাত সাড়ে নয়টা বাজে। আমি খালিশপুরের কোন এক কানাগলিতে চায়ের দোকানের চিপায় লুকিয়ে আছি। এই জায়গাটা রাতের বেলা এমনিতেই খুব নির্জন এবং বিপজ্জনক। আমি লুকিয়ে আছি রাফসানের আব্বাকে ধরতে। মাসের ২০ তারিখ; বেতন পাইনি। খুব খারাপ অবস্থা। চায়ের দোকানী লিটন ভাই খুব কাছের মানুষ। কাছের মানুষ গুরুত্বপুর্ণ কথা সবার সামনে বলেন না। উনিও বাঁকির খাতায় অংক বেড়ে যাবার কথা সবার সামনে বলেন না। তবে যেহেতু সবার সামনে বলেন না তা