ভোররাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল নাসিমার। গলা শুকিয়ে কাঠ। দুঃস্বপ্ন দেখেছেন। পাশে মেয়েটা অঘোরে ঘুমুচ্ছে। ওকে ডাকতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত ডাকলেন না। কিন্তু খুব কথা বলতে ইচ্ছে করছে তার, বুকের ভেতরের পাথরটাকে নেড়ে চেড়ে গুমোট ভাবটা কাটাতে চাইছেন তিনি। চাদরটা গায়ে জড়িয়ে নিয়ে খাট থেকে নামতেই মেয়ে বিরক্ত গলায় বলল
-এত ভোরে উঠে পড়লে কেন মা?
-ইয়ে... সুমনকে একটা ফোন করবি, তিথি?
ভয়ে ভয়ে নাসিমা মেয়েকে বললেন কথাটা।
আমাদের পাড়ার পিছন পাগলের গল্পটা বলি।
ব্যাটা এমনিতে বেশ ভালো। সবার সাথে বিকেল বেলা আড্ডা দেয়, চা মুড়ি খায়, দেশের হাল হকিকত নিয়ে আলোচনা করে। খালি কেউ পিছন বললেই ক্ষেপে যায়। কারণটা আমরা ঠিক জানতাম না। পাগলের নিজ নাম পছন্দ না বলে পিছন বললে ক্ষেপে যায় নাকি পিছন বললে ক্ষেপে যায় বলেই তার নাম পিছন পাগল এটা আমাদের কাছে ডিম-মুরগির মতো একটা ধাঁধা ছিল।
দরজা খুলল সুচরিতা, জয়ন্তের আগেই আজ বাসায় এসে পৌঁছেছে সে। দু’জনের কাছেই দু’টো চাবি থাকে, যদিও বাড়িওয়ালা তাদের একটিই চাবি দিয়েছিল বাসা ভাড়া নেয়ার সময়। তখন অবশ্য সুচরিতার চাকরীটা হয়নি। প্রথম দিকে চাবি একটা থাকায় বেশ অসুবিধা হত সুচরিতার, জয়ন্ত’র আগেই কখনও কখনও অফিস শেষ করে তিনতলা ভেঙ্গে বাসায় এসে সিঁড়ির উপর বসে থাকতে হত ওকে। জয়ন্ত না আসা পর্যন্ত কারও বাসায় গিয়ে যে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে আসবে সে ইচ্ছেটুকু
[justify]
সিমকি ভাবী ফোনের ওই প্রান্ত থেকে প্রায় চ্যাঁচিয়েই উঠলেন এবার, ‘... উফফ, ভাবী- তারপর যা হলো যদি দেখতেন ! আমি তো বারান্দাতেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। গুলি শুরু হওয়া মাত্রই অবশ্য চলে গেলাম ভেতরে। দোতলার জানালার ফাঁক দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখলাম পুরোটা। একটা গার্ডও বাঁচেনি ভাবী, মুক্তিবাহিনী সবগুলোকে শেষ করেছে ! ...’
১.
অন্তু এখন ঘুমাতে হবে, এসো, হেনা ডাক দেয়।
আরেকটু কার্টুন দেখি আম্মু, অন্তু সোফায় নড়েচড়ে আয়েস করে বসে। ওর চোখ টিভির পর্দায়। সেখানে ছোট্ট এক ইঁদুরের দাপটে তাগড়া গোফওয়ালা বিড়াল কুপোকাত।
আর না বাবা, এখন সোজা বিছানায়, চোখ বন্ধ করে ঘুম, হেনা রিমোট টিপে টিভি বন্ধ করে দেয়।
তুমি একটা পচা আম্মু! অন্তু বিরক্তি দেখিয়ে সোফায় সটান শুয়ে পড়ে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে রাখে।
মোমেনা বেগম একঘেয়ে স্বরে বলে যায়,
- আমার নাম মোমেনা বেগম, স্বামী হাবিবুর রহমান, আব্বা হযরত আলী লস্কর।
- সেইসময় আপনার বয়স কত ছিল?
- একাত্তরে আমার বয়স ছিল বার বা তের বছর। আমরা চার বোন, তিন ভাই। আমি সবার বড়। আমার মা ২৬ মার্চ, ১৯৭১ সালে গর্ভবতী ছিলেন।
- কি হয়েছিল সেইদিন?
- ২৬ মার্চ ১৯৭১ সন্ধ্যায় বেলা ডোবার আগেই ঘটনা। আব্বা দৌড়ায়ে ঘরে আসে এবং বলতে থাকে কাদের মোল্লা মেরে ফেলবে।
- কেন?
মাইলের পর মাইল জুড়ে কোন বৃক্ষরাজি দেখা যাচ্ছেনা, গাছের সমস্ত শাখা-প্রশাখা শুভ্র বরফের নিচে ঢাকা। যতদূর চোখ যায় কেবল উপত্যকা, পর্বত এবং রাতের আকাশের তারা দেখা যায়। এর মাঝেই আছি আমি এবং আমার স্ত্রী। মৃত্যুর অপেক্ষা এবং কেউ এসে উদ্ধার করবে এই আশা দুটো অপশনের দিকেই চেয়ে আছি আমরা।
[i](মনমাঝিকে ধন্যবাদ, তাঁর ভূতাণুগল্প আমাকে বেশ ভাবিয়েছে এবং একটু করিৎকর্মা করে তুলেছে। তবে ভাবতে গিয়ে আর লাইনে থাকতে পারলুম না। মনের ভেতরে যে মন-মাঝি আছে, সে ব্যাটা ঠপাস ঠপাস বৈঠা মেরে নৌকা অন্যদিকে নিয়ে গেল। লিখে ফেললাম কটা ভূতাণুরঙ্গল্প। মানে সিরিকাস ভূতের গল্পের প্ল্যাটফরম থেকে আলটপকা রসিকতায় এসে পড়া আর কি!
রাত অনেক। ওতাকু বাড়ি ফিরছিলো। কিয়োতো'য়, রাস্তার এক পাশে তার বাড়ি। এখনো অনেক দূরের পথ। সারাটা শহর কবরের মত নিশ্চুপ হয়ে আছে।
কিইয়ো কি এখনো অপেক্ষা করে আছে বাড়িতে?
কয়েকদিন বাদেই কস্তুরের বিয়ে। তাই একটু অন্যমনস্ক হয়ে থাকে সে। অফিসে কেউ প্রথমবার ডাকলে সে সবসময় ঠিকমতো শুনে ওঠে না যেন, দ্বিতীয়বার একটু জোরে ডাকতে হয়।