১
[justify]চকিতে ভিড়ের ভেতর দৃষ্টি গিয়ে পড়লে নজু দেখতে পায় এক হাতে পায়ের ঝোলানো স্যান্ডেল অন্য হাতে ছোট্ট হাত ব্যাগটি দিয়ে উড়ে যাওয়া অথবা হাওয়ার বিক্রমে স্থানচ্যুত হওয়ার আশংকায় চেপে ধরা কমলা রঙের ওড়নার মাঝামাঝি।
আচ্ছা দেশে ফোন করা হয়নি আজ কদিন হোল? দশ দিন, নাহ পনের দিনতো হবেই। বাবা মা নিশ্চয়ই চিন্তা করছেন খুব। ফোনের দিকে পায়ে পায়ে এগিয়ে যায় দিপম, দেশে এখন রাত ১ টা প্রায়, ফোন করা কি ঠিক হবে? যদিও জানে এক দুবার বাজলেই মা দৌড়ে এসে ফোনটা ধরবেন, ব্যাকুল হয়ে জানতে চাইবেন দিপম কেমন আছে, এতদিন ফোন করেনি কেন?
গেরস্থালিতে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত জরুরি বিষয়। তবে চান্দি রক্ষার স্বার্থে ইস্টিলের হেলমেট অতি আবশ্যক। মনে রাখবেন পেটে খেলে পিঠে সয়; কিন্তু মাথা ফাটলে জীবন ক্ষয়...
আমাকে আমার সংসার থেকে তাড়ানো কতই সহজ। ‘তুই বিদায় হ, এখানে আর চেহারা দেখাবিনা।’ এটুকুই যথেষ্ট।
কোথায় যাব? পানিতে পড়বনা, সে জানে। ঢাকা শহরে আমার বাবার নিজের একটা ফ্ল্যাট আছে। সেখানে অ্যাটাচড বাথ একটা রুম আমার জন্য সারাজীবনই আছে। বিয়ের পর আব্বু এসি লাগিয়ে দিয়েছেন। জামাই এসে মাঝে মাঝে থাকবে।
আমার কেন জানি মনে হয় আমার স্ত্রীর মানসিক সমস্যা আছে । কিছু মানসিক সমস্যা থাকে না ,যা বাইরে থেকে খুব্ একটা সপষ্ট নয়, কিন্তু খুব সর্ন্তপনে খেয়াল করলে ঠিক ই চোখে পড়ে।
‘ছিঃ ছিঃ, আমার নাকের ডগা দিয়ে চুরি, বলিহারি সাহস তোর!’ বিল্টুর পিঠে শপাং শপাং কঞ্চির লাঠি চালাতে চালাতে বললেন
হেকমত স্যার। ‘লোকে কী বলবে? কী বলবে, বল্। আমরা স্কুলে চুরি শেখাই! চুপ করে আছিস কেন হারামখোর, উত্তর দে...’
টিফিনের ফাঁকে স্কুলের পাশে রায়বাবুদের আমবাগানে আম চুরি করতে গিয়ে হেকমত স্যারের হাতে ধরা পড়ে গেছে বিল্টু। হেকমত স্যারের নামটা যেমন, তেমনি দশাসই তাঁর চেহারা। মুশকো জোয়ান, শুধু পেছন দিকে অড়হর ক্ষেতের লাইনের মতো একসারি চুল ছাড়া মাথার বাকিটুকু চকচকে টাক। আর এই চেহারায় যখন অগ্নিমূর্তি ধারণ করেন তখন শুধু ছাত্র-ছাত্রীরা নয়, জুনিয়র শিক্ষকরা পর্যন্ত কেঁপে ওঠেন।
[justify]
।।১।।
তিনি একটু বিরক্তভরে ভদ্রলোকের দিকে তাকালেন।
সাতসকালেই ভদ্রলোক এসে উপস্থিত। বসবার ঘরে সোফায় বসে আছেন, চোখে গোল্ড রিমের চশমা। হাত দুটো কোলের উপর রাখা। মনে হচ্ছে ওই দুই বেচারাকে নিয়ে একটু বিব্রত আছেন ভদ্রলোক। মাথার উপর বনবন ঘুরছে ফ্যান। এই সকালেও চড়চড়ে গরম পড়েছে। এক ফোঁটা বাতাস নেই কোথাও। দুটো মাছি ইতঃস্তত উড়ছে ঘরের ভেতর।
অনেক অনেক দিন কথা। চুয়াডাঙ্গার আপেলদ্দি ডাক্তারের তখন বেশ নামডাক। হাসপাতাল আর চেম্বারে তো রোগি দেখেনই, প্রয়োজনে মুমূর্ষূ রোগিকে বাঁচাতে ছুটে যান দূর-দূরান্তে। একদিন এমনই এক রোগির চিকিৎসা করতে গেলেন চুয়াডাঙ্গা থেকে বিশ মাইল দূরে জীবননগরে। রোগির অবস্থা তেমন সুবিধার নয়। তাই আপেলদ্দি ডাক্তার বেশ সময় নিয়ে রোগির চিকিৎসা করতে লাগলেন। কখন যে দুপুর গড়িয়ে গেছে ডাক্তার সাহেব তা খেয়ালই করেননি।
তখনকার দিনে এত ঝকঝকে রাস্তাঘাটও ছিল না, এত এত বাস-মোটর গাড়িও ছিল না। ওদিকে রোগির চিকিৎসা করতে গিয়ে ডাক্তার সাহেব চুয়াডাঙ্গাগামী শেষ বাসটাও মিস করলেন। অথচ যে করেই হোক সন্ধ্যার আগেই তাঁকে চুয়াডাঙ্গায় পৌঁছতে হবে- কে জানে কতজন রোগি তাঁর অপেক্ষায় প্রহর গুনছে!
তখন চুয়াডাঙ্গা আর জীবননগরের মাঝে শুধু বন আর বন। মাঝে মাঝে খাপছাড়া দু-একটা গ্রাম। কেন্দুয়া বাঘ, ভালুক, হায়েনা আর বুনো শুকরদের অবাধ বিচরণ সেই বনে। ডাক্তার সাহেব তো পড়লেন মহা মুসিবতে। এখন বাড়ি ফিরবেন কীভাবে? একট গরূ কিংবা ঘোড়ার গাড়ি টাড়িও চোখে পড়ছে না। ঠিক সেই সময় একজন লোক সেই পথ দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিল। রাস্তার পাশে ডাক্তার সাহেবকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে লোকটা সাইকেল থামিয়ে বলল, ‘আরে ডাক্তার সাহেব! আপনি এখানে দাঁড়িয়ে কেন?’
বেলগাছটির অবস্থান ঈশান কোণে। রুয়েছিলেন দীননাথ। সেটা পঞ্চাশ সালের ঘটনা। তখনও আইয়ুব খানের পয়দা হয়নি। চাঁদে আমেরিকা পৌঁছায়নি। চীন আর রাশিয়া নামক দুটি দেশে একই বৃষ্টির ফোঁটা পড়ত। সোহরাওয়ার্দ্দী বড় নেতা। দীননাথ বিয়ে করেছে তার মায়ের অনুরোধে। কৃষ্ণলীলা পালাগান করার ফলে দীননাথের ধারণা ছিল—বিয়ে করার কোনো মানেই হয় না। স্ত্রী হৈমবালাকে বাড়ি আনার পরে একদিন মধ্য রাতে বলেছিল, রাধাকৃষ্ণর প্রেম—নিকষ