অনেক সয়েছে রাতুল।
আজ একটা হেস্তনেস্ত না করলেই নয়।
ছোট বলে কি তার মান-ইজ্জত কিছু নেই নাকি? বিশেষ করে পাশের বাসার রাসেলের সামনেই কথাটা বলতে হবে কেন? এত বড় হয়েছে মা-টা, কিন্তু এইটুকু বুদ্ধি নেই? সেই কখন থেকে সে গাল ফুলিয়ে বসে আছে, একবার বলতেও আসলো না যে রাতুল সোনার মুখটা ভার কেন? এমন তো না যে পরের মা। একেবারে নিজের মা। সে-ও যদি এমন করে তাহলে আর রইল বাকী কী?
ঝাকানাকা বিরসবদনে বললেন, "কার্টুন ছবি চলার সময় আপনি কেন আসেন বলেন তো? আরেকটু পরে বা আরেকটু আগে আসেন না কেন?"
কিংকু চৌধারি গোমড়া মুখে বললেন, "স্যার আপনি সারাদিনই হয় ছায়াছন্দ নয় থাণ্ডার ক্যাটস আর না হলে খবর দেখতে থাকেন। যখনই আসি তখনই তো ধমক দেন। তাহলে ক্যাম্নেকী?"
ঝাকানাকা বললেন, "হুঁহ, বললেই হলো! যাকগে, আবার কী গণ্ডগোল বাঁধিয়েছেন আপনারা?"
কোন দেয়ালেই ছবিটা মানাচ্ছিল না। যেখানেই ঝোলাই মনে হয় ছবিটা টেরা চোখে তাকিয়ে আছে। ঘরের চারটা দেয়ালের একটাতেও ফিট করা গেল না। ছবিটাতে সবুজ ত্বকের একটা বাচ্চা ছেলে কেমন একটা অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ব্যাপারটা স্বাভাবিক লাগে না। অথচ যখন আর্ট গ্যালারীতে অনেক ছবির ভিড়ে সাজানো ছিল বোঝা যায়নি। এই একলা ঘরে ছবিটা সামনে রেখে বসতেও কেমন একটা অস্বস্তি লাগছে। ভুল করলাম কিছু?
ঠিক দুপুর বেলাটায়, একদম ঠা ঠা রোদ যখন বাইরে, ঘরের ভেতর বনবন করে ঘুরতে থাকা পাখার হাওয়ায়ও হাঁসফাঁস লাগতে থাকে, ঘাড় এদিক ওদিক করে, শরীর এপাশ ওপাশ করেও যখন শান্তি আসে না মোটে- মিঁয়াও তখন আর গরম হজম করতে পারে না মোটে- “জান বেরিয়ে যাচ্ছে রে বাবা! ওফ কী গরম! ওফফফ!!- ছোট্ট লাফে বিছানার কোনে সাজানো বালিশ-টিলা থেকে নেমে আসে ও- “বাইরে যদি শান্তি থাকে কিছু!”
হাঁটতে হাঁটতে বাঁশঝাড়ের বাঁকটাও পাড় হয়ে গেলেন টুকুনের বাবা । ঐ তো লিচু গাছটা দেখা যাচ্ছে । তিনি যেন স্পষ্ট দেখা পাচ্ছেন টুকুন দোল খাচ্ছে দোলনায় । তেমন বিশেষ কিছু নয়- পাঁটের দড়ি গাছের ডালে বেঁধে ঝুলিয়ে দেয়া আর এতেই কী খুশি ছেলেটা । সকাল-বিকাল দোল খাওয়া । লেখাপড়া ওখানে- ভাত খাওয়া ওখানে- পারলে ঘুমও ওখানে । মন্তু একবার ঘুমে ঢুলে পরতে দেখে দৌড়ে গিয়ে ধরেছিল ।
প্রত্যেক বৎসরের ন্যায় এই বৎসরও যথাসময়ে আদুমিয়ার ইশকুলে বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হইয়াছে। সে যথারীতি দুরু দুরু বুকে ইশকুলের বারান্দায় টাঙ্গানো নোটিশবোর্ডটার সম্মুখে গিয়া দাঁড়াইল। সহপাঠিরা তাহাকে দেখিয়া বলিয়া উঠিল, “এইবারে নিশ্চয়ই তুমি উপরের কেলাশে উঠিয়াছ!” শুনিয়া আদুমিয়া আরও কিছুটা আশায় বুক বাঁধিয়া নোটিশবোর্ডে নিজের নামখানি খুঁজিতে লাগিলো।
১
বনের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে সরু রাস্তাটি খোলা মাঠে মিশেছে। সাপের মতো এঁকে বেঁকে একটু একটু করে ঢালু হয়েছে সামনের পথটা। একজোড়া বাইসাইকেল ফ্রি হুইল করে এগিয়ে আসছিল। একটিতে বাবা, অন্যটিতে ছেলে। প্যাডেলে একটুও চাপ ছিলনা, তবু এগুচ্ছিল বেশ ভ্রুতই। বাপ বেটা দুজনেই শ্বাস ফেলছিল অনায়াসেই। অবশেষে বনের প্রান্তে এসে সামনে চোখ মেলে সামনে তাকালো তারা। ফ্রি হুইলের স্বস্তি ফুরিয়ে যাবার আগেই দেখলো, ছোট্ট ঢালুটা ফুরিয়ে এসেছে। সেইসাথে রাস্তাটা আবার উপরে উঠতে শুরু করেছে।
রাতের দীর্ঘ রাস্তা। ঠিকরে পড়েছে নিয়নের আলো। বসন্তোৎসব থেমে গেছে চুপিচুপি। দুরের গির্জার ঘণ্টার শব্দটাই এখন একমাত্র শব্দ। বহুক্ষন ধরে বেজে চলেছে সে ছন্দময় মদোন্মত্ততা। বসন্ত মরুৎ এখানে আর আসবে না আজ। আমি নিষেধ করে দিয়েছি।
বিজ্ঞানী বিষ্ণুপদ বাঁড়ুজ্জের সাথে পরিচয় আমার বিশ বছর আগে। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে। আমি তখন ছাত্র। তিনি কেবল জয়েন করেছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা বিম্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন 'বিগব্যাং ও মহাবিশ্বের' প্রসারণ বিষয়ক এক সেমিনারে বক্তব্য দিতে। সেমিনারের আয়োজক আমরা, অর্থাৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ। তাঁর বক্তব্য আমার মনে এতোটাই দাগ কাটল, সেমিনার শেষে তাঁর সা